তিনবার নকশা বদল, বাড়ল ২৮ কোটি টাকা
নিজস্ব প্রতিনিধি বৃহস্পতিবার সকাল ১১:০৭, ১৭ নভেম্বর, ২০২২
প্রথমে ব্যয় ধরা হয়েছিল প্রায় ৭২ কোটি টাকা। সাড়ে ৬০০ মিটারের সেই সেতু তৈরিতে তিনবার নকশা বদল করে পাঁচ দফা মেয়াদ বাড়িয়ে খরচ দাঁড়িয়েছে শতকোটি টাকা। নড়াইলবাসীর আশঙ্কা, বারইপাড়া সেতু-৫-এর নির্মাণকাজ এর পরও শেষ হবে না।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সড়ক বিভাগের তত্ত্বাবধানে নবগঙ্গা নদীর বারইপাড়া ঘাটে সেতু নির্মাণে কার্যাদেশ হয় ২০১৮ সালের ১৮ মার্চ।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স এমডি জামিল ইকবাল এবং মইনুদ্দীন বাঁশি যৌথভাবে কাজটি পায়। ৬৫১.৮৩ মিটার লম্বা, ১০.২৫ মিটার প্রস্থ, ১৬টি পিলার ও ১৫টি স্প্যানের এ সেতুর নির্মাণ ব্যয় ধরা হয় ৭২ কোটি ৩৭ লাখ টাকা।
নির্মাণাধীন এই সেতুর কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৯ সালের জুনে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দুটি পিলার নির্মাণ করে। এরপর দেখা দেয় নকশা জটিলতা। বর্ষাকালে পানি বেড়ে দেখা যায় উচ্চতা জটিলতা, ছয় মাস বন্ধ থাকে কাজ। উচ্চতা বাড়াতে নতুন একটি পিলার সংযোজন করে নকশা পরিবর্তন করে দ্বিতীয় দফা মেয়াদ বাড়িয়ে কাজ শুরু হলে হানা দেয় করোনা। গতি হারায় নির্মাণকাজ। ২০২০ সালের জুন থেকে ছয় মাসে নির্মাণাধীন ৯ নম্বর পিলারে ছয়-সাতবার বালুবোঝাই বাল্কহেড ধাক্কা মারে। এতে পিলারটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ধাক্কায় কয়েকটি নৌযান ডুবেও গেছে। সর্বশেষ ২০২১ সালের ৬ সেপ্টেম্বর একটি বালুবোঝাই বাল্কহেডের আঘাতে ৯ নম্বর পিলারটি নদীতে তলিয়ে যায়। এ সময় তৃতীয় দফা নকশা পরিবর্তনের প্রয়োজন পড়ে। এদিকে তৃতীয় দফা নকশা পরিবর্তন আর করোনার অজুহাতে সময় বাড়াতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ফের মেয়াদ দেওয়া হয় ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত; কিন্তু এই সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে পারছেন না ঠিকাদার।
স্থানীয়রা জানায়, স্বাধীনতার পর থেকেই কালিয়া বারইপাড়া ঘাটে সেতু হবে, এটা নিয়ে মানুষের আকাঙ্ক্ষা থাকলেও তা কোনো কাজে আসেনি। দুই পারের প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ জেলা শহরে যাতায়াতে ভোগান্তি পোহাতে হয়। নড়াইল থেকে চাকরি কিংবা নানা কাজে কালিয়া এবং কালিয়া হয়ে গোপালগঞ্জ চলাচল করতে হয়।
সম্প্রতি সরেজমিনে বারইপাড়া সেতু এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সেতুর এক প্রান্তে রেলিং বসাতে কাজ করছেন পাঁচজন শ্রমিক, অন্য প্রান্তে ২০ জন। ক্ষতিগ্রস্ত পিলারসহ তিনটি পিলারের কাজ এখনো বাকি। ১৫টি স্প্যানের মধ্যে এরই মধ্যে তিনটি স্প্যান বসানো হয়েছে। পূর্ব পারের সংযোগ সড়ক পিচ ঢালাই চললেও পশ্চিম পারের সংযোগ সড়কে শুধু বালু ভরাট করে রাখা হয়েছে।
স্থানীয়রা জানায়, শুরু থেকে ঠিকাদাররা কাজে শ্রমিক নিয়োগ করছেন না। হাতে গোনা শ্রমিক দিয়ে কাজ চলছে ঢিমেতালে। এ বিষয়ে সড়ক বিভাগের কোনো মাথাব্যথা নেই। যে পিলার ট্রলারের ধাক্কায় ভেঙে যায়, তা কতখানি মজবুত তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
এদিকে ৯ নম্বর পিলার তুলে দিয়ে ৮-১০ নম্বর পিলারের মাঝে স্টিলের স্প্যান বসানোর নকশা করে নতুন করে প্রকল্প প্রস্তাবনা প্রণয়ন করেছে কর্তৃপক্ষ। আর এ নকশা পরিবর্তনে ব্যয় বেড়েছে ২৮ কোটি টাকা। নতুন নকশা অনুয়ায়ী, প্রতিটি পিলারের চারদিকে স্টিলের বেষ্টনী দিয়ে বাড়তি নিরাপত্তা রাখা হয়েছে। পঞ্চম মেয়াদে সড়ক বিভাগের তত্ত্বাবধানে বাকি কাজের মেয়াদ ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।
এদিকে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রধান মইনুদ্দীন বাঁশি কাজের ধীরগতির জন্য সড়ক বিভাগের গাফিলতিকে দায়ী করে বলেন, ‘শুরু থেকেই আমরা নকশা নিয়ে কথা বলে আসছি। তারা আমাদের কথার কর্ণপাত করেনি। ’
বারবার নকশা পরিবর্তন বিষয়ে সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকীেশলী মো. আশরাফুজ্জামান বলেন, ‘আমরা কর্তৃপক্ষের ছাড়পত্র নিয়ে নকশা প্রণয়ন করি। ৯ নম্বর পিলার বাদ দিয়ে ৮ এবং ১০ নম্বর পিলারে ৯০ মিটারের স্টিলের স্প্যান ধরে প্রকল্প প্রস্তাবনা করা হয়েছে। বাজেট পাস হলে বিদেশ থেকে স্টিলের স্প্যান এনে বসাতে হবে। ’