ঢাকা (বিকাল ৩:৩৩) সোমবার, ২৩শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
শিরোনাম

Join Bangladesh Navy


মাটি ভেদ করে বের হচ্ছে পানি: অলৌকিক বলে পানি সংগ্রহে উৎসক জনতার ভিড়

মান্দা উপজেলা ২১১৯২ বার পঠিত
নওগাঁর মান্দায় ইটাখৈর গ্রামে একটি কলা বাগানে মাটি ফেটে পানি বের হওয়া দেখতে ভীর করছেন স্থানীয়রা।
নওগাঁর মান্দায় ইটাখৈর গ্রামে একটি কলা বাগানে মাটি ফেটে পানি বের হওয়া দেখতে ভীর করছেন স্থানীয়রা।

নিজস্ব প্রতিনিধি নিজস্ব প্রতিনিধি Clock শনিবার দুপুর ০২:২৪, ২৬ অক্টোবর, ২০১৯

এম এ ইউসুফ, নওগাঁ প্রতিনিধি: আমাদের চারপাশে অপ্রত্যাশিত ভাবে প্রতিনিয়ত ঘটে চলেছে নানা ঘটনা অনেক সময় উৎসক জনতা সেগুলোকে অলৌকিক বলেও আখ্য দিয়ে থাকেন। ঠিক তেমনই একটি ঘটনা ঘটেছে নওগাঁর মান্দায়। উপজেলার একটি কলা বাগানের মধ্য থেকে মাটি ফেটে অনবরত পানি বের হচ্ছে।
উপজেলার মৈনম ইউনিয়নে ইটাখৈর গ্রামে এমন দৃশ্য। গত এক সপ্তাহ থেকে এভাবে পানি বের হওয়ায় স্থায়ীরা এটিকে অলৌকিক বলে দাবী করছেন। বিষয়টি ছড়িয়ে পড়লে আশপাশ থেকে মানুষ ঘটনাস্থলটি দেখার জন্য ছুটে আসছেন। আবার এই পানিকে কেউ বিভিন্ন রোগের প্রতিষেধক হিসেবে ব্যবহার করছেন। কলা বাগানের মালিকের নাম ইদ্রিস আলী। তিনি গ্রামের মৃত এরশাদ আলীর ছেলে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত এক সপ্তাহ আগে জলছত্র-পাঁজরভাঙ্গা সড়কের জলছত্র মোড়ের প্রায় এক কিলোমিটার দক্ষিণে রাস্তার পশ্চিম পার্শ্বে ইটাখৈর গ্রামে ইদ্রিস আলীর কলাবাগান। ওই বাগানে স্থানীয় এক মহিলা পাতা কাটতে গিয়ে দেখেন বাগানের মধ্য থেকে মাটি ফেটে পানির ফুরায়া বেরিয়ে অনবরত পানি বের হচ্ছে। তবে যেখান থেকে পানি বের হচ্ছে- কলা গাছ কয়েক ফুট দুরে রয়েছে।
মাটি ভেদ বের হচ্ছে পানি: অলৌকিক বলে বোতলে ভরতে উৎসক জনতার ভিড়পানি বের হওয়ার সময় বুদ বুদ করে শব্দও হচ্ছে। কলা বাগানের মালিক পানি প্রবাহের জন্য সেখানে একটি নালা করে দিয়েছিলেন। পরবর্তীতে নালা থেকে কয়েক ফুট দুরে ছোট গর্ত করে দেয়া হয়েছে।
সেই গর্তে পানি জমা হলে সেখান থেকে বোতলে করে সংরক্ষন করছেন দেখতে আসা উৎসুখ জনগন। এমন খবর ছড়িয়ে পড়লে প্রতিদিন বিভিন্ন স্থান থেকে শত শত মানুষ দেখতে আসছেন।
স্থানীয়া বলছেন, আশেপাশের ২/৩ কিলোমিটারের মধ্যে নদী বা কোন খাড়ি নেই। এছাড়া আশপাশে অন্য কোন পানির উৎস নেই। এক সপ্তাহ থেকে ভারী বৃষ্টিপাত হয়নি।
কলাবাগানের আশপাশে জমিগুলো উঁচু ভিটে। এলাকায় পানির অভাবে তেমন ধান চাষ করা সম্ভব হয়না। এ এলাকার পানির স্তর প্রায় ৮০ থেকে ১২০ ফুট নিচে।
কলা বাগানের মালিক ইদ্রিস আলী বলেন, গত দুই বছর আগে সেখানে কলা বাগান করে কলা চাষ করে আসছেন। দুর থেকে পানি নিয়ে এসে বাগানে দিতে হয়। যেখানে পানির কোন অস্তিস্ত ছিলনা সেখানে হঠাৎ করেই নিজ থেকে আকস্মিকভাবে মাটি ফেটে পানি বের হচ্ছে।
আর এ দৃশ্য দেখার জন্য গত কয়েকদিন থেকে দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ ছুটে আসছেন। আবার কেউ বোতল দিয়ে পানি নিয়ে আরোগ্য লাভের জন্য পান করছেন এবং সাথে বেঁধে নিয়ে যাচ্ছেন।
স্থানীয় সেতু হোসেন বলেন, গত ৫ দিন যাবৎ সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত শত শত মানুষ ভিড় করছেন পানির উৎস দেখার জন্য। বেশির ভাগ মানুষ হাতে বোতল নিয়ে অপেক্ষা করছেন পানি সংগ্রহ করতে। পানি বোতলে ভরে নিয়ে যাচ্ছেন নিজেদের মনোবাসনা পুরন করতে।
নওগাঁ সদরের বলিহার গ্রাম থেকে আসা স্কুল ছাত্র সৌরভ জানায়, মাটি ফেটে পানি বের হচ্ছে শুনে তার মায়ের জন্য বোতলে করে পানি নিতে এসেছে। এই পানি খেলে আরোগ্য লাভ হতে পারে। এজন্য অন্ধ বিশ্বাস থেকে মা পানি নিয়ে যেতে বলেছে।
স্থানীয় মৈনম ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো.ইয়াছিন আলী রাজা বলেন, আমি লোকমুখে শুনেছি ওই স্থান থেকে পানি বের হচ্ছে। অনেক মানুষ বিভিন্ন স্থান থেকে ওই পানি নেয়ার জন্য ছুটে আসছেন। তবে কি কারণে বা কিভাবে পানি বের হচ্ছে তা জানি না। আমার কাছে মনে হচ্ছে এটি একটি অলৈকিক ঘটনা।
নওগাঁ সরকারি কলেজের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের ভারপ্রাপ্ত বিভাগীয় প্রধান মো.মিজানুর রহমান বলেন, শিলার মধ্যে দুটো স্তর থাকে। একটি হচ্ছে- প্রবেশ্য শিলাস্তর এবং অপরটি হচ্ছে অপ্রবেশ্য শিলাস্তর। প্রবেশ্য শিলাস্তর দিয়ে পানি ভিতরে প্রবেশ করতে পারে। কিন্তু অপ্রবেশ্য শিলাস্তর দিয়ে পানি ভিতরে প্রবেশ করতে পারে না।
তিনি আরো বলেন, যখন কোন পানির উৎসের পাশ দিয়ে দুটো অপ্রবেশ্য শিলা থাকে, তখন সেটার মাঝ দিয়ে পানি না গিয়ে উপরের দিকে উঠে আসে। এটাকে ভূগোলের ভাষায় বলে ‘আরকেটেজিও কুপ’। এই কুপ প্রাকৃতিক ভাবে তৈরী হয়। পানি যে পথ দিয়ে ভূগর্ভে যাবে, সে পথে কঠিন শিলা থাকায় তা বাঁধাপ্রাপ্ত হয়। যে কারণে পানি নিচের দিকে যেতে পারে না।
ফলস্বরুপ পানি উপরের দিকে উঠে আসে। এ পানি খাওয়া যাবে বলেও জানান তিনি।



শেয়ার করুন


পাঠকের মতামত

মেঘনা নিউজ-এ যোগ দিন

Meghna Roktoseba




এক ক্লিকে জেনে নিন বিভাগীয় খবর



© মেঘনা নিউজ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by ShafTech-IT