মহানন্দা সেতুর বেহাল দশা : কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার অভিযোগ
সাখাওয়াত জামিল দোলন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সোমবার বিকেল ০৫:০৯, ১৩ জুলাই, ২০২০
রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার অভাবে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার মহানন্দা নদীর ওপর নির্মিত বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সেতুর এখন বেহাল দশা। আর এ নিয়ে জেলাবাসী জোর দাবী জানিয়েছেন দ্রুত সংস্কারের। তবে কর্তৃপক্ষ বলছেন ধীরে ধীরে সংস্কারের কাজ করা হবে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার মহানন্দা নদীর ওপর নির্মিত বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু বা বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সেতু চালু হয় ১৯৯৩ সালের ২৩ জুন। এরপর থেকে বিভিন্ন সময় সেতুর নষ্ট হয়ে যাওয়া অংশ সমূহ সাময়িক মেরামত করা হলেও অতিরিক্ত লোডের পণ্য বোঝাই ট্রাক চলাচলের কারণে অতি অল্প সময়েই আবার তা ক্ষতির সম্মুক্ষিণ হয়। এমনকি সেতুর নিচেই তৈরি হয়েছে পৌরসভার ময়লা-আর্বজনা ফেলার ভাগাড়। যা থেকে দূর্গন্ধ ছড়াচ্ছে হরহামেশাই। আর দূর্গন্ধে নাক-মুখ ঢেঁকে অসহ্য যন্ত্রণা নিয়ে এর ওপর দিয়ে চলাচলকারী যাত্রী সাধারনকে পার হতে হয় মহানন্দা সেতু। আর তাই এই সেতু
ব্যবহারকারীরা সেতু সংস্কার ও নদী তীরবর্তী এলাকায় ময়লা আবর্জনা না ফেলার দাবী জানাচ্ছেন।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সেতুটির উত্তরে বারোঘরিয়া প্রান্তে রেলিংয়ে নতুন রং করা হয়েছে ঠিকই কিন্তু মরিচা লেগে লোহার পাত ছিদ্র ছিদ্র হয়ে খসে পড়ছে। এছাড়া সেতুর ফুটপাতের যে ঢাকনা রয়েছে তা ভেঙ্গে গর্তের তৈরি হয়েছে।
এদিকে সেতু রক্ষায় উভয় পাড়ে বøক দিয়ে যে বাঁধ দেয়া রয়েছে তা বিশাল অংশ নিয়ে দেবে গেছে অনেক আগেই। বিভিন্ন সময়ে বারবার সংস্কার কাজের দাবি উঠলেও তাতে বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সেতুর এই দুরাবস্থার কোনই পরিবর্তন হয়নি। আর তাই যে কোন সময় ফুটপাতে পড়ে গিয়ে বা রেলিং ভেঙ্গে ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। অথচ কোটি কোটি টাকা আয় হচ্ছে সেতুর টোল থেকে।
এমনকি ভারতের সাথে স্থলপথে প্রতিদিন শত শত পণ্যবাহী ট্রাক বিভিন্ন মালামাল আমদানি-রপ্তানী করতে ব্যবহার করে এই সেতুই।
এ বিষয়ে স্থানীয় তরুন আশিক আহমেদ ক্ষোভের সুরে বলেন, প্রতিদিন বিকেলে বন্ধুদের নিয়ে আড্ডা দিতে ও নদীর মুক্ত নির্মল বাতাস পেতে ব্রীজে ঘুরতে গেলেও গত প্রায় ২ মাস ধরে আমরা এ থেকে বঞ্চিত। কারণ ভয় ওই একটাই ভাঙ্গা রেলিং ধরতে গিয়ে যদি কোন দূর্ঘটনার স্বীকার হই। এছাড়া ময়লা আবর্জণার দূর্গন্ধে এখানে দাঁড়ানো তো দূরের কথা চলাচল করাই দায়।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র-টিটিসি’র একজন শিক্ষক আক্ষেপ করে বললেন, নদীর এপারে শহর এলাকায় বাস করলেও কর্মক্ষেত্রের কারণে প্রায় প্রতিদিনই হেঁটে ব্রীজ পার হয়ে নদীর অন্য প্রান্তে যেতে হয়। কিন্তু সম্প্রতি সেতুর ফুটপাতের একটি জায়গায় গর্ত তৈরি হওয়ায় বাধ্য হয়েই এত ব্যস্ত সেতুতে প্রচুর গাড়ির ভীড়ে ফুটপাত ছেড়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা দিয়ে চলাচল করছি। আমার মতো এমন হাজারো মানুষের এটি নিত্যদিনের দূর্ভোগ। আর তাই জরুরীভাবে এর সংস্কার কাজ প্রয়োজন বলেও জানান তিনি।
এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় এক রাজনৈতিক নেতা বলেন, জেলাবাসীর প্রাণের দাবী বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সেতুর এই অবস্থার জন্য কর্তৃপক্ষের অবহেলা ও জনপ্রতিনিধিদের গুরুত্ব না দেয়াই দায়ী। দীর্ঘদিন ধরে সেতুর টোল ফ্রি এবং সংস্কারের দাবিতে ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন সংগঠন স্মারকলিপি প্রদান ও আন্দোলন করলেও এর ফলাফল শূণ্য। এমনকি মাঝে মধ্যেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও এই সেতুর দূরাবস্থার কথা উল্লেখ করে ছবি পোস্ট ও বিভিন্ন মন্তব্য করেন অনেকেই। কিন্তু সেতুর পাশেই সড়ক ও জনপদ বিভাগের অফিস হলেও এরা শুধু ছোটখাটো রাস্তার সংস্কার করেই দায়িত্ব শেষ করেন।
তবে এ বিষয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সড়ক ও জনপদ বিভাগ-সওজ এর নির্বাহী প্রকৌশলী এজেডএম ফারহান দাউদ জানান, ৫০ বছরের (স্বাভাবিক) আয়ু ধরা সেতুটি এখন ২৭ বছর পার করছে। এ সেতুতে ডাবল এক্সেল যানের অনুমোদিত লোড ১৫-২২ টন। কিন্তু প্রতিদিনই ৪৪-৫০ টন ওজন নিয়ে বিপুল সংখ্যক পণ্যবাহী যান সেতু অতিক্রম করছে। বিশেষ করে বিশাল বিশাল পাথরবাহী ট্রাক চলাচলের কারণেই সেতুটির অবস্থা এখন নড়বড়ে। সেতুর রেলিংয়ের কিছু অংশে মরিচা ধরলেও একসাথে সবগুলো পরিবর্তন করা যাবে না। তবে মরিচা পড়ে খসে যাওয়া অংশ খুব শীঘ্রই মেরামত করা হবে। তাছাড়া কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে কিছু জায়গা দেবে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। সেগুলো সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।