বিদ্যুৎ বিভ্রাটে ব্যাহত চাঁপাইনবাগঞ্জ জেলা হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা
এস এম সাখাওয়াত জামিল দোলন,চাঁপাইনবাবগঞ্জ শনিবার সন্ধ্যা ০৭:০২, ১৭ জুলাই, ২০২১
চাঁপাইনবাবগঞ্জের ২৫০ শয্যার জেলা হাসপাতালে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। প্রতিদিন কয়েক দফায় বিদ্যুৎ আসা–যাওয়ায় চরম বিপাকে পড়েছেন হাসপাতালের সহস্রাধিক রোগী। রোগীরা বলছেন, হাসপাতালের ভেতরের বদ্ধ পরিবেশে প্রচণ্ড গরম অনুভূত হয়। একদিকে তীব্র গরম,আবার লোডশেডিংয়ে বেশ কষ্ট হচ্ছে। এদিকে ৫ম এবং ৬ষ্ঠ তলায় করোনা ইউনিট, সেখানে গরমের তীব্রতা আরও বেশি। বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে রোগী ও চিকিৎসকদের লিফটে আটকে পড়ার ঘটনাও ঘটছে। এদিকে হাসপাতালে উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন অটো জেনারেটর ব্যবস্থা থাকলেও অজ্ঞাত কারণে সেটি বন্ধ থাকে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়,চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা হাসপাতালে দফায় দফায় বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে হাসপাতালের চিকিৎসা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। বিদ্যুতের লুকোচুরিতে চরম দুর্ভোগে পড়েছে রোগীরা। নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ না থাকায় ওয়ার্ডগুলোতে ভর্তি রোগীরা এই গরমে চরম দুর্ভোগে পড়ছেন। বিশেষ করে হাসপাতালে থাকা করোনায় আক্রান্ত রোগীদের লোডশেডিংয়ের সময় ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে সবচেয়ে বেশি।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা হাসপাতালের করোনা ইউনিটের চিকিৎসক ডা. আহনাফ শাহরিয়ার জানান, হাসপাতালে ঘন ঘন বিদ্যুৎ বিভ্রাট দেখা দিচ্ছে। এর কারণে করোনায় আক্রান্ত রোগীদের ভোগান্তি হয়। বার বার বিদ্যুৎ বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে কৃত্রিমভাবে শ্বাস–প্রশ্বাস চালিয়ে নেয়া রোগীরা ঝুঁকিতে থাকে। বিশেষ করে অক্সিজেন কনসেনটেরেটর মেশিনের মাধ্যমে যাদের অক্সিজেন দেয়া হয় তাদের ঝুঁকি বেশি। অক্সিজেন কনসেনটেরেটর মেশিন চালাতে বিদ্যুতের প্রয়োজন হয়।
বৃহস্পতিবার চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা হাসপাতালের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মাহফুজ রায়হান তার ফেসবুক ওয়ালে পোস্ট করেছেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জে এত ঘনঘন বিদ্যুৎ চলে যায় কেন? জেলা হাসপাতালে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ব্যবস্থা নাই কেন? বাংলাদেশে আর অন্য কোন জেলা আছে কি যেখানে হাসপাতালে ডুয়েল সংযোগ নেই? বিদ্যুতের অভাবে ফটোথেরাপি মেশিন বন্ধ। ২৫/২৯ বিলিরুবিনের বাচ্চা। খারাপ বাচ্চা হলে সাকশন দেয়া দরকার, মেশিন চলেনা বিদ্যুতের অভাবে। এগুলো সুস্থ্য হবে কেমনে? রোগী, ডাক্তার, নার্স সবাই গরমে অস্থির। অসহ্য!
ওই পোস্টে মন্তব্য করেছেন জেলা হাসপাতালের মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (রেডিওলজি এ– ইমেজিং) মো. আবু তালেব। তিনি বলেন, আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলছি। করোনা ইউনিট থেকে অক্সিজেন সিলিন্ডারসহ একজন রোগী অতি কষ্টে আমার রুমে আসলো বুকের এক্স–রে করার জন্য। রোগীকে খুব কষ্ট করে পজিশন করলাম। এক্সপোজ দিবো ঠিক তখনই বিদ্যুৎ চলে গেলো। আমি কিংকর্তব্যবিমূঢ়।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডা. মোমিনুল হক বলেন, বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে যেন হাপাতালের চিকিৎসা সেবা ব্যাহত না হয় সে জন্য জেনারেটর চালানো হচ্ছে। হাসপাতালে উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন অটো জেনারেটর ব্যবস্থা রয়েছে। এটি দিয়ে পুরো হাসপাতালে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে।
জানতে চাইলে নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানির (নেসকো) চাঁপাইনবাবগঞ্জের বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ–১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী আলিউল আজিম বলেন, ১১ কেভির যে বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনে হাসপাতালে সংযোগ রয়েছে তাতে ৮০টি ট্রান্সফর্মার রয়েছে। অতিরিক্ত লোডের কারণে অনেক সময় ট্রান্সফর্মারের ফিউজ কেটে যায়। যে কোন একটি ট্রান্সফর্মারের ফিউজ কাটলে ১১ কেভির লাইন বন্ধ করে মেরামত করতে হয়। মেরামতের সময়টুকু শুধু হাসপাতাল নয়, ওই লাইনের সবই বিদ্যুৎহীন থাকে। ২৮ মে থেকে হাসপাতালে ৬০ কিলোওয়াটের আরেকটি সংযোগ দেয়া হয়েছে। এছাড়াও হাসপাতালে জেনারেটর ব্যবস্থা রয়েছে সাময়িক অসুবিধার জন্য হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হওয়ার কথা নয়।