ঢাকা (রাত ৩:০১) রবিবার, ২৬শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
শিরোনাম

দুর্নীতি-অনিয়ম ও ভুতুড়ে বিদ্যুৎ বিলের অভিযোগ গৌরীপুর বিদ্যুৎ বিভাগের নামে

ওবায়দুর রহমান,গৌরীপুর,ময়মনসিংহ ওবায়দুর রহমান,গৌরীপুর,ময়মনসিংহ Clock শনিবার রাত ১১:০০, ১৩ মার্চ, ২০২১

ময়মনসিংহের গৌরীপুর বিদ্যুৎ বিভাগের দুর্নীতি-অনিয়ম ও ভুতুড়ে বিদ্যুৎ বিলের কারণে গ্রাহকরা অতিষ্ট হয়ে পড়েছে। এসব অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধ ও ভুতুড়ে বিল প্রত্যাহারের দাবিতে উপজেলার ২নং গৌরীপুর ইউনিয়নের কোনাপাড়া কদমতলী বাজারে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ হয়েছে।


গৌরীপুর বিদ্যুৎ অফিসের বিশাল অংকের ভুতুড়ে বিলের কারণে অনেকের পথে বসার উপক্রম হয়েছে। কোন কোন গ্রাহকের বাড়িভিটা বিক্রি করেও বিদ্যুৎ বিল দেয়ার উপায় নেই। তেমনি একজন গ্রাহক মো. হেলাল উদ্দিন। সে কোনাপাড়া গ্রামের একজন মুদি দোকানী। তাঁর ২০২০সালের নভেম্বর মাসে বিদ্যুৎ বিল এসেছে ৯লাখ ২৪হাজার ৩২৭টাকা। তিনি জানান, অক্টোবর মাসেও বিদ্যুৎ বিল এসেছে ৮হাজার ১১৪টাকা, ইউনিট ছিলো ১২হাজার ৯৬০। এক মাস পরে নভেম্বর মাসে হঠাৎ করে মিটারে রিডিং ৯৩হাজার ৮১৪ইউনিট উঠে যায়। বিদ্যুৎ বিভাগে আবেদন নিবেদন করেও আমি প্রতিকার পাচ্ছি না। মিটারের এ রিডিংয়ের বিপরীতে বিদ্যুৎ বিভাগ ৯লক্ষ ২৪হাজার ৩২৭টাকার বিদ্যুৎ বিল করে দিয়েছে।

সাবেক চেয়ারম্যান মো. হযরত আলী জানান, হেলালের সাড়ে ৭শতাংশের বাড়িভিটে আর কদমতলী বাজারের ৩টি দোকান বিক্রি করে দিলেও এ বিলের টাকা হবেনা। অভাবের কারণে হেলালের এক ছেলের লেখাপড়া বন্ধ, রাজমিস্ত্রীর সহযোগী হিসাবে কাজ করছেন। স্বর্ণা আক্তার স্থানীয় ইসলামাবাদ সিনিয়র মাদরাসার ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ও আরেক ছেলে রিফাত মিয়া কোনাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেণিতে পড়ছে। অতিরিক্ত এ বিদ্যুৎ বিলের জন্য অফিসে দৌড়ঝাপ করতে গিয়ে ৩ বেলার খাবারও জুটছে না। হেলালের স্ত্রী নারগিস আক্তার জানান, বিদ্যুৎ বিলের চিন্তায় তার স্বামী রাতে ঘুমাতেও পারছেন না।

এ বিল প্রসঙ্গে আবাসিক প্রকৌশলী বিদ্যুৎ নিরঞ্জন কুন্ডু বলেন, গ্রাহকের আবেদনের প্রেক্ষিতে মিটার পরীক্ষা করা হয়েছে। মিটার সঠিক থাকায় বিল করে দেয়া হয়েছে।

এমন আরেক অভিযোগ পাওয়া যায় পৌর শহরের গোলকপুর গ্রামে। এ গ্রামের মুদি দোকানী শিরিনা আক্তার। তাকেও দেয়া হয়েছে একমাসের বিদ্যুৎ বিল ৭৫হাজার টাকা। তিনি জানান, বিদ্যুৎ বিভাগের এ অত্যাচার থেকে বাঁচতে বিভিন্ন স্থানে বিচার প্রার্থী হয়েছি, ঘুরেছি, কেউ সহযোগিতা করেনি। এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করেছি।

ভুতুড়ে বিদ্যুৎ বিল ও জরিমানা প্রত্যাহারের দাবিতে ২নং গৌরীপুর ইউনিয়নের কোনাপাড়া কদমতলী বাজারে প্রতিবাদ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. ফজলুল হক। তিনি বলেন, ৭১’রে রণাঙ্গনে যুদ্ধ করে মাতৃভূমি স্বাধীন করেছি। স্বাধীন দেশে বিদ্যুৎ বিভাগের আচরণ দেখে মনে হয় আমরা এখনও পরাধীন। তারা যাই করবে, আমাদের তাই মেনে নিতে হবে। বক্তব্য রাখেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. হাসিম উদ্দিন, মো. মফিজ উদ্দিন, ২নং গৌরীপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মো. হযরত আলী, উপজেলা পূজা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক শ্যামল কর, উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মো. মিজানুর রহমান, গৌরীপুর পৌর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন, ব্যবসায়ী মো. রইছ উদ্দিন প্রমুখ।

কোনাপাড়া গ্রামের মৃত তালে হোসেনের পুত্র মো. হযরত আলীর জানুয়ারি মাসে বিদ্যুৎ বিল এসেছে ৩৭১টাকা। ফেব্রুয়ারি মাসে ভুতড়ে বিল ১৩হাজার ৬৪৭টাকা। একই গ্রামের গুজন আলীর পুত্র আব্দুল খালেকের জানুয়ারি মাসের বিল ১হাজার ৬০৩টাকা কিন্তু ফেব্রুয়ারি মাসে ১৮হাজার ১শ টাকা। আফিস আলীর পুত্র মো. নবী হোসেনের জানুয়ারি মাসে বিদ্যুৎ বিল এসেছে ৩৯৩টাকা। ফেব্রুয়ারি মাসে বিদ্যুতের ভুতুড়ে বিল ২৬হাজার ৬০১টাকা। আরব আলীর পুত্র আবু বক্কর সিদ্দিকের জানুয়ারি মাসে ৫৪৪টাকা, ফেব্রুয়ারিতে ৯হাজার ২৭৯টাকা। নিখিল চন্দ্র ধরের পুত্র নন্দন চন্দ্র ধরের জানুয়ারি মাসে ১হাজার ১৪৩টাকা, ফেব্রুয়ারি মাসে বিল আসে ৫হাজার ৫১২টাকা। জনু শেখের পুত্র রোমালী মন্ডলের জানুয়ারি মাসে ৫৪৩টাকা, ফেব্রুয়ারি মাসে ৯হাজার ২৭৯টাকা। আবুল কালামের বিদ্যুৎ মিটার না দেখেই বিদ্যুৎ বিভাগ ভুতুড়ে বিল করছে। বিদ্যুৎ মিটারে রিডিং ১২হাজার ১৫৫ ইউনিট, বিল করেছে ১৬হাজার ২৩৫ ইউনিটের।

এ প্রসঙ্গে গৌরীপুর আবাসিক প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ) নিরঞ্জন কুন্ডু বলেন, গ্রাহকদের অনুমোদনবিহীন কাজে বিদ্যুৎ ব্যবহারের জন্য আইনের ৩৮ধারায় এ জরিমানা করা হয়েছে। আবাসিক সংযোগ নিয়ে সেচ বা বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহারের ঘটনায় তদন্তসাপেক্ষে এ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।




শেয়ার করুন


পাঠকের মতামত

মেঘনা নিউজ-এ যোগ দিন

Meghna Roktoseba




এক ক্লিকে জেনে নিন বিভাগীয় খবর



© মেঘনা নিউজ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by ShafTech-IT