স্মৃতিতে দাউদকান্দির রক্তাক্ত জুলাই ইতিহাস
মেঘনা নিউজ ডেস্ক
শনিবার রাত ০৯:৫১, ২৬ জুলাই, ২০২৫
২০২৪ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলন শুধুই একটি ছাত্রআন্দোলন ছিল না, এটি ছিল একটি অবিচারের বিরুদ্ধে জেগে ওঠা প্রজন্মের রক্তক্ষয়ী দ্রোহ। বাংলাদেশের ইতিহাসে এই আন্দোলন যেমন সারাদেশব্যাপী বিস্তৃত হয়েছে, তেমনি এর এক ঐতিহাসিক সূচনা হয়েছিল দাউদকান্দি থেকে — যা আজ অনেকেই জানেন না বা স্বীকার করেন না।
স্মরণীয় সেই সূচনা
সারা দেশের শিক্ষার্থীরা যখন রাস্তায় গুলিবিদ্ধ হচ্ছিল, যখন ঢাকা-চট্টগ্রামসহ বড় শহরগুলোতে ছাত্রদের রক্তে রঞ্জিত হচ্ছিল রাজপথ, ঠিক তখনই দাউদকান্দিতে জেগে ওঠে প্রতিরোধের আগুন। সর্বপ্রথম আন্দোলনের ডাক আসে জুরানপুর আদর্শ ডিগ্রি কলেজ থেকে। সিদ্ধান্ত হয় ১৬ জুলাই সকাল ১০টায় কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন হবে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, সেই সময় অন্য কোনো কলেজ সাড়া দেয়নি।
কিন্তু পিছিয়ে যাননি সাহসী শিক্ষার্থীরা। এরপর শুরু হয় দাউদকান্দির বিভিন্ন কলেজ ও স্কুলের সাথে সংযুক্তি ও ঐক্য গড়ার প্রচেষ্টা। সেই ঐক্যের ফলেই ১৭ তারিখ সবাই প্রস্তুত হয় রাস্তায় নামার জন্য। কিন্তু সেদিন ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা এই আন্দোলনকে ছত্রভঙ্গ করে দেয় এবং অনেককে শিশু পার্কে আটকিয়ে রাখা হয়।
প্রতিবাদের বিস্ফোরণ
এর প্রতিবাদে ১৮ জুলাই দাউদকান্দির হাসানপুর কলেজের সামনে সফলভাবে আন্দোলন সংগঠিত হয়। এই আন্দোলনে শুধু ছাত্ররাই নয়, রিকশাচালক থেকে শুরু করে সাধারণ জনগণ, সমাজের সর্বস্তরের মানুষ অংশগ্রহণ করেন।
সেই সময় আন্দোলনের পক্ষে প্রথম কলম ধরেন সাহসী সাংবাদিক হোসাইন মোহাম্মদ দিদার।
এবং প্রথম মামলা হয় সমাজকর্মী কমরেড রুবেল ও খন্দকার বিল্লাল হোসেনের নামে — যাঁরা আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন।
রক্তাক্ত আগস্ট ও শহীদ রিফাত
এরপর আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র। ৪ আগস্ট দাউদকান্দির শহীদনগরে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও পুলিশের যৌথ হামলায় সুন্দরপুর ইউনিয়নের সন্তান রিফাত গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হন।
রিফাতের রক্ত যেন সারা দেশের ছাত্রদের ভিতরে আগুন জ্বেলে দেয়।
৫ আগস্ট ঘোষণা আসে — লংমার্চ টু ঢাকা।
তৎকালীন পরিস্থিতিতে আন্দোলনকারীরা তালতুলি ঘুরে গাজীপুর হাইওয়ে রোডে যান, রাস্তায় অবস্থান নেন। সেখানে টানা আন্দোলনের এক পর্যায়ে আবারো চলে গুলি। ছাত্ররা হাল ছাড়েনি। দুপুর ২টা পর্যন্ত টিকে ছিল গণজাগরণ।
শেষ প্রতিরোধ আর নতুন বাংলাদেশ
যখন ঘোষণা আসে সেনাবাহিনীর প্রধান জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেবেন — তখনই শিক্ষার্থীরা বুঝে নেয়, এক নৃশংস অধ্যায়ের অবসান আসন্ন।
সেই মুহূর্ত থেকেই দেশজুড়ে বিজয় মিছিল, পতাকা ও ব্যানারে “নতুন বাংলাদেশ” প্রতিষ্ঠার শ্লোগান।
এ ইতিহাস কেবল দাউদকান্দির নয়, এ ইতিহাস বাংলাদেশের।
এটি লিখে রাখার, জানান দেওয়ার এবং চিরকাল মনে রাখার সময় এখন।
কারণ যারা রক্ত দিয়েছে, তারা শুধু ইতিহাস লেখেনি — ভবিষ্যতের দ্বার খুলে দিয়েছে।
লেখক: মোহাম্মদ সাইজু্দ্দিন
শিক্ষার্থী ও সমাজকর্মী


