চাঁপাইনবাবগঞ্জে জমি নিয়ে শত্রুতার জেরে লবণ-বিষ দিয়ে ধান নষ্ট
এস এম সাখাওয়াত জামিল দোলন,চাঁপাইনবাবগঞ্জ রবিবার রাত ০২:১২, ১৫ আগস্ট, ২০২১
চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলায় জমি নিয়ে পূর্ব শত্রুতার জেরে কৃষকের ক্ষেত ভরা আমন ধান লবণ মেশানো বিষ দিয়ে নষ্ট করে দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
উপজেলার পাবর্তীপুর ইউনিয়নের হাটখোলা গ্রামের আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে কৃষক রাশিদুল ইসলামের প্রায় সাড়ে ৩ বিঘা জমিতে লবণ-বিষ দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ কৃষক রাশেদুলের। শুক্রবার দিবাগত গভীর রাত শনিবার (১৪ আগস্ট) রাত আনুমানিক ১টার দিকে ১৫ থেকে ২০ জনের স্বশস্ত্র একটি দল স্প্রে করার মেশিনে করে জমিতে লবন বিষ দেয়।
শনিবার বিকেলে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, লবন-বিষ দেয়ার কারনে ধানগাছগুলো মরে যেতে শুরু করেছে। দুই-তৃতীয়াংশ ধান গাছ শুকিয়ে গেছে। অনেক ধান গাছের গোড়ায় এখনও লবন পড়ে আছে। এমনকি দূর্বৃত্তদের ফেলে যাওয়া ফাস্ট এ্যাকশন নামের দুটি বিষের বোতল, লবনের বস্তা ও স্প্রে করার একটি মেশিন তখনও জমিতেই পড়ে রয়েছে। গভীর রাতে গ্রামের লোকজন তাড়া করলে এসব ফেলে পালিয়ে যায় দূর্বৃত্তরা।
স্থানীয় বাসিন্দা ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার রাত আনুমানিক ১টার দিকে হাতে লাঠিসোটা, হাঁসুয়া, বল্লম নিয়ে ১৫-২০ জনের একটি দল এই কাজটি করেছে। তারা প্রথমেই জমিতে থাকা পাহারাদারকে মারধর শুরু করে। পরে পাহারাদার পালিয়ে গিয়ে গ্রামের লোকজনকে ঘুম থেকে জাগিয়ে বিষ দেয়ার বিষয়টি জানায়। তখন গ্রামবাসী দল বেঁধে আসলে তারা পালিয়ে যায়। ততক্ষণে প্রায় সাড়ে ৩ বিঘা জমিতে লবণ মিশিয়ে বিষ দেয়া হয়ে গেছে।
ধান ক্ষেতের কয়েক গজ দূরে বাড়ি পঞ্চাশোর্ধ ইব্রাহিম আলীর। তিনি বলেন, বাড়ির পাশেই আশ্বিনা আমের বাগান আছে। রাতে মাঝে মধ্যে উঠে বাগানের দিকে যায়। আজকে রাতে উঠার পরই দেখলাম আমার বাড়ির সামনে দিয়ে কয়েকজন টর্চ জ্বালিয়ে যাচ্ছে। তাদের কাছে এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, কে আপনারা, কোথায় যাচ্ছেন? উত্তরে গালি দিয়ে বললো, তোর কাজ তুই কর, বাসায় যা। এরপর আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় তারা। এ সময় পাশের গ্রামের পরিচিত কয়েকজনকে দেখেছেন বলে জানান তিনি।
গ্রামের আতাবুর রহমানের স্ত্রী খাতিজা বেগম জানান, মানুষের হৈ-হুল্লোড়, চেচামেচি শুনে অনেক রাতে ঘুম ভাঙ্গে। উঠে বের হতেই দেখি রাস্তা দিয়ে হাতে বড় বড় হাঁসুয়া, লাঠিসোটা নিয়ে কিছু লোক পালিয়ে যাচ্ছে। মানুষের কথাবার্তা শুনে এগিয়ে এসে দেখি তারা জমিতে বিষ দিতে এসেছিল। গ্রামের লোকজনের উপস্থিতি টের পেয়ে পালিয়ে গেছে।
ধানক্ষেতের পাহারাদার ও চাষি রাশিদুল ইসলামের ছোট ভাই রাজিবুল ইসলাম বলেন, জমির মধ্যখানে উঁচু করে ঘর করে ধান জোগায়। এর আগেও ধানের চারা পুড়িয়েছিল দূর্বৃত্তরা। এছাড়াও দুইবার কাঁচা ধানে বিষ এবং আম্রপালির ছোট ছোট গাছ রাতের অন্ধকারে কেটে ফেলেছিলো। শনিবার রাত ১ টার দিকে ঘুম পাড়া অবস্থায় চারদিক থেকে আমাকে ঘিরে মারধর শুরু করে। দৌড়ে পালিয়ে গ্রামের দিকে গিয়ে সবাইকে ঘুম থেকে জাগিয়ে উঠায়। গ্রামের সবাইকে নিয়ে আসলে অনেক লোকজন দেখে পালিয়ে যায়।
ধানচাষী রাশিদুল ইসলাম বলেন, পৈত্রিক সূত্রে বাপ-দাদার সময় থেকে জমিটি আমাদের। প্রায় ৫০ বছর ধরে বাবার দাদার ১৮ বিঘা জমি চাষাবাদ করছি। কিন্তু গত কয়েক বছর থেকে হঠাৎ রেকর্ড অনুযায়ী জমিটি নিজেদের বলে দাবি করছেন পার্বতীপুর ইউনিয়নের রাহি গ্রামের দুই ভাই তাইজুদ্দিন ও কামরুজ্জামান। এমনকি তারা মামলাও করেছে। আদালতে মামলা চলমান রয়েছে। আগের মতোই আমরা চাষাবাদ করে যাচ্ছি। কিন্তু তারা মামলায় জিততে না পের রাতের অন্ধকারে বারবার এসে বিষ দিচ্ছে। গত কয়েকমাস আগে এখানে জমি পাহারার জন্য নির্মিত ঘরেও আগুন দিয়ে পুড়িয়েছে।
তিনি আরও বলেন, রাতেই পুলিশকে ফোন করে বিষয়টি জানিয়েছি। সকালে গোমস্তাপুর থানায় গিয়েছিলাম। আদালতে জমিটির বিষয়ে মামলা চলমান রয়েছে এবং পুলিশ জমি সংক্রান্ত মামলা নেয় না জানিয়ে আদালতের শরণাপন্ন হবার পরামর্শ দিয়েছে। পরে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের কাছে অভিযোগ দিয়েছি।
এ বিষয়ে জমির মালিক দাবিদার তাইজুদ্দিন মুঠোফোনে জানান, জমির মালিকানা নিয়ে আদালতে মামলা চলমান রয়েছে। ১৯৬২ সালের রেকর্ড অনুযায়ী জমিটির মালিক আমরাই। তারপরেও তারা জোরপূর্বক দখল করে চাষাবাদ করছেন। তবে জমিতে লবণ-বিষ প্রয়োগ করে ধান নষ্ট করার বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে পার্বতীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী খান বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক আমার কাছে অভিযোগ করেছে। কিন্তু তাদের জমিটি নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে ঝামেলা চলছে। আদালতের চলমান বিষয় নিয়ে আমার করনীয় তেমন কিছুই নেই। তাই তাদেরকে পরামর্শ দিয়েছি আদালতের শরণাপন্ন হতে।