একদিন বিকেলে হাতিরঝিলে
ডেক্স রিপোর্ট সোমবার রাত ০১:৩১, ৭ জুন, ২০২১
করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে সরকারের কঠোরতার মধ্যে রাজধানীর অন্যতম দৃষ্টিনন্দন এলাকা হাতিরঝিলে বিনোদনপ্রেমীদের আনাগোনা বেড়েছে। তবে এখনও মুখে মাস্ক পরছেন না তাদের অনেকে।
সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবার বিকালে হাতিরঝিল ঘুরে বিভিন্ন জায়গায় দলবেঁধে লোকজনকে ঘুরতে দেখা যায়। তাদের অনেকের মুখে মাস্ক থাকলেও একটি বড় সংখ্যার তা ছিল না।
হাতিরঝিলে এখন লোক সমাগম বাড়লেও তা আগের মতো নয় বলে ওই এলাকার রেস্তোরাঁকর্মী ও ভ্রাম্যমাণ হকাররা জানিয়েছেন।
তারা বলছেন, মহামারীর কারণে রাজধানীর বিনোদন কেন্দ্রগুলো কয়েক মাস বন্ধ থাকলেও লকডাউন তুলে দেওয়ার পর থেকেই হাতিরঝিলে লোক সমাগম বাড়তে থাকে। সরকারি ছুটির দিন মানুষের চাপ একটু বেশি থাকে। তবে এরপরেও করোনাভাইরাস মহামারীর প্রভাব রয়ে গেছে।
হাতিরঝিল সংলগ্ন মধুবাগ এলাকার বাসিন্দা মাহমুদুল হাসান বলেন,“আমার মনে হয় করোনা পরিস্থিতির কারণে হাতিরঝিলে মানুষের ঘুরে বেড়ানো কিছুটা কমে গেছে। কর্মব্যস্ততা ও খুব বেশি প্রয়োজন ছাড়া বেশিরভাগ মানুষ এখনও ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। তারপরও অনেকে দুপুরের পর হাতিরঝিলে বেড়াতে আসেন। দূর-দূরান্ত থেকেও অনেকে সেখানে আসেন।”
হাতিরঝিলের ভ্রাম্যমাণ চা বিক্রেতা মো. সোহেল বলেন, “চা এখন বেশি বিক্রি হয় না। আগে তো দিনে পাঁচ-ছয় ফ্লাক্স চা বিক্রি করতে পেরেছি। এখন দুই বার ফ্লাক্স ভর্তি করলে শেষ দিকে থেকে যায়।”
তবে গত এক-দেড় মাস ধরে হাতিরঝিলে মানুষের আনাগোনা কিছুটা বেড়েছে বলে জানান তিনি।
হাতিরঝিল প্রকল্পের অধীনে মেরুল বাড্ডা এলাকায় ‘এসওডি’ ও ‘ওয়াইওডি’ নামে দুটি রেস্তোরাঁ রয়েছে। হাতিরঝিলে বেড়াতে এসে এসব রেস্তোরাঁয় প্রতিদিন বহু মানুষ খাওয়া-দাওয়া করে থাকেন।
এসওডি রেস্তোরাঁর একজন কর্মী বলেন,“করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে সরকারি ছুটি ঘোষণার সাথে যখন বিনোদন কেন্দ্রও বন্ধে করে দেওয়া হয় তখন হাতিরঝিলেও মানুষের আসা-যাওয়া সীমিত ছিল। সেই সময় রেস্টুরেন্টও বন্ধ হয়ে যায়। গত কিছু দিন ধরে রেস্টুরেন্ট খোলা হয়েছে। কাস্টমার আছে, তবে আগের মতো এত ভরপুর না।”
শুক্রবার হাতিরঝিলে বেড়াতে এসে ওই রেস্তোরাঁয় খেতে যান আব্দুল আল মামুন ও তার কয়েকজন বন্ধু।
একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী কর্মকর্তা মামুন বলেন, “করোনা পরিস্থিতির কারণে আমরা ঢাকার বাইরে যেতে সাহস পাচ্ছি না। যে কারণে বন্ধুরা মিলে এখানে বেড়াতে এসেছি। এখানকার পরিবেশটা অনেক নিরিবিলি, শান্ত। দুই তিন সপ্তাহ পর পর আমরা পাঁচ-ছয় জন বন্ধু একসাথে হই।এখানেই অধিকাংশ দিন ঘুরতে আসি।”
রাজধানীর জুরাইন এলাকা থেকে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে হাতিরঝিলে বেড়াতে আসেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ফরহাদ আল হোসাইন।
ফরহাদ জানান, তার গ্রামের বাড়ি হবিগঞ্জ থেকে বোনের পরিবারের লোকজন ঢাকায় বেড়াতে এসেছেন। তাদেরকে নিয়ে ছুটির দিন ঢাকার বিনোদন কেন্দ্রগুলো ঘুরে দেখিয়ে থাকেন।
ফরহাদের ভাগ্নি নূরুন্নাহার লাকী বলেন,“আজ আমরা হাতিরঝিল এসেছি, এই জায়গা নিয়ে পত্রপত্রিকায় অনেকবার ছবি দেখেছি, পড়েছি। নিজের চোখে এই প্রথম দেখলাম। ভাবতেই পারতেছি না ঢাকার ভেতরে এত বড় সুন্দর একটা জায়গা আছে। বিশেষ করে লেক দিয়ে নৌকা চলে, আবার উপরে ব্রিজ দিয়ে গাড়ি চলে, এই দুইটি বিষয়ই ভালো লেগেছে।”
ফুল বিক্রেতা মালিহা বলেন, “হাতিরঝিলে সারা বছর ফুলের মালা ও ফুলের টায়রা বিক্রি করি।তবে আগের মতো মানুষের ভিড় নাই, বিক্রিও কমে গেছে।”
হাতিরঝিল প্রকল্পের অধীন দুই রেস্তোরাঁ ছাড়াও সেখানে আরও বেশ কিছু ভ্রাম্যমাণ রেস্তোরাঁ কাভার্ড ভ্যানে করে কয়েকটি মোড়ে বিভিন্ন চায়নিজ খাবার ছাড়াও অন্যান্য খাবার বিক্রি করে থাকে।
রামপুরা এলাকার ইউলুপের সামনে দিয়ে হাতিরঝিলে প্রবেশ করতে ‘ফুড ট্রিপ’ এবং মধুবাগ এলাকা দিয়ে প্রবেশের সময় ব্রিজের পাশে ‘নগর মোবাইল রেস্টুরেন্ট’ নামে দুটি খাবার দোকান বসেছে। বিকেলে এই দুই খাবার দোকানে ক্রেতা উপস্থিতি খুব বেশি দেখা যায়নি।
দুই রেস্টুরেন্টের কর্মীরা জানান, হাতিরঝিলে এখন কিছু মানুষ আসছে। গত কয়েক মাস ঘুরে বেড়ানো মানুষের উপস্থিতি কম ছিল। তখন তাদের বিক্রি অল্প-স্বল্প ছিল। এখন কিছুটা বাড়লেও করোনাভাইরাসের আগের অবস্থার মতো হয় না।
২০১৩ সালে হাতিরঝিল চালু হয়। সরকার এটিকে পরিকল্পিতভাবে তৈরি করেছে। সড়ক ও নৌ পথে যাতায়াতের সুবিধার পাশাপাশি বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে এই ঝিলকে।
হাতিরঝিলের চারপাশ ঘিরে গাড়ি চলাচলের জন্য ওয়ানওয়ে সড়ক করা হয়েছে। পূর্বপাশে রামপুরা ও পশ্চিমে এফডিসি মোড় এলাকা ছাড়াও তেজগাঁও, মগবাজার, মধুবাগ, পুলিশ প্লাজা এলাকায় চক্রাকারে গাড়ি চলাচল করে থাকে। এজন্য হাতিরঝিল ঘিরে রাজউকের ব্যবস্থাপনায় বিশেষ চক্রাকার বাস চলাচল করে।
পাশাপাশি হাতিরঝিলে এফডিসি মোড় এলাকা থেকে রামপুরা, মেরুল বাড্ডা ও গুলশানে নৌযান চলাচল করে। সড়ক ও নৌপথে বিনোদন প্রেমীদের পাশাপাশি ওই সব এলাকায় লোকজনের কর্মক্ষেত্রে যাতায়াত সহজ ও আরামদায়ক করা হয়েছে।
হাতিরঝিলে এফডিসি মোড় থেকে রামপুরা চক্রকার বাসের ভাড়া ১৫ টাকা। অর্থাৎ বাসে চারপাশ ঘুরতে ৩০ টাকা ভাড়া দিতে হয়।
অন্যদিকে ঝিলের পুরো এলাকা নৌ ভ্রমণে জনপ্রতি ৮০ টাকা ভাড়া দিতে হয়। এছাড়া এফডিসি মোড় এলাকা থেকে রামপুরা ২০ টাকা, রামপুরা থেকে গুলশান ২০ টাকা এবং রামপুরা থেকে পুলিশ প্লাজা ১৫ টাকা ভাড়া দিতে হয়।