ঢাকা (বিকাল ৪:০৫) শুক্রবার, ৫ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
শিরোনাম

আমার দেখায় ৫ আগষ্ট : দাউদকান্দি মডেল থানার বিভীষিকাময় দিন

মুক্ত কলাম ২৬৩ বার পঠিত

মেঘনা নিউজ ডেস্ক মেঘনা নিউজ ডেস্ক Clock মঙ্গলবার বেলা ১২:২৬, ৬ আগস্ট, ২০২৪

কুমিল্লার দাউদকান্দিতে ৫ আগস্ট ভয়াবহ অস্থিরতা দেখা দেয়। স্বৈরাচার শেখ হাসিনার দেশত্যাগ ও পলায়নের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর সংঘবদ্ধ বিক্ষুব্ধ জনতা হামলা ও ভাঙচুর চালায়। এর মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ ঘটনা ঘটে দাউদকান্দি মডেল থানায়।

থানায় হামলা ও অগ্নিসংযোগ

বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে হঠাৎই বিক্ষুব্ধ জনতা থানায় হামলা চালায়। তারা লাঠিসোটা ব্যবহার করে থানার ভেতরে প্রবেশ করে। দাহ্য পদার্থ দিয়ে মুহূর্তের মধ্যেই থানায় আগুন ধরিয়ে দেয় তারা। আগুনে থানার গুরুত্বপূর্ণ নথি, আসবাবপত্র ও বিভিন্ন মালামাল পুড়ে যায়। একই সঙ্গে তারা অস্ত্রভাণ্ডার ভেঙে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গুলিসহ মালখানার জব্দকৃত মালামাল  লুট করে নিয়ে যায়।

পুলিশ সদস্যদের আত্মরক্ষা

হামলার মুখে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোজাম্মেল হক বারংবার হ্যান্ড মাইকে জনতার কাছে আত্নসমর্থনপূর্বক তাদের নিভৃত করার বক্তব্য দিয়ে বারংবার নিভৃত করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। বিক্ষুব্ধ জনতা থানার গেইট ভেঙে থানার ভিতর প্রবেশ করে। এতে  পুলিশ সদস্যরা প্রাণভয়ে আশ্রয় খুঁজতে বাধ্য হন। ওসি মোজাম্মেল হক স্থানীয় একটি গার্লস স্কুলের পাশের একটি বাসায় আশ্রয় নেন, এসময় মুক্তার আলী, হোসেন কামাল নামক স্থানীয়দের সহযোগীতায় ওসি মোজাম্মেল হক একটি বাসায় আত্মগোপনে থাকেন।

অন্য পুলিশ সদস্যরা আশপাশের বিভিন্ন বাসাবাড়িতে গোপনে অবস্থান নেন।

 

 

সেনাপ্রধানের নির্দেশ

রাজধানী ও সারাদেশের উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার উজ্জামান আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে স্পষ্ট নির্দেশ দেন—

“ছাত্র-জনতার প্রতি কোনো অবস্থাতেই গুলি চালানো যাবে না।”

এই নির্দেশের কারণে দাউদকান্দিসহ অন্যান্য এলাকায় পুলিশ কার্যত নিভৃত হয়ে পড়ে এবং সরাসরি সংঘর্ষ এড়িয়ে চলে।

গোলাগুলি ও হতাহত

থানার অস্ত্র লুট করতে গিয়ে বিক্ষুব্ধ জনতা নিজেদের মধ্যে গোলাগুলি চালায়। এসময় বাবু নামের এক যুবক গুরুতর আহত হয়ে পড়ে। হাসপাতালে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। আরও কয়েকজন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

সেনাবাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসের অভিযান

থানা ভবনে প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে আগুন জ্বলতে থাকে । রাত ৮টার দিকে সেনাবাহিনীর একটি বিশেষ টিম ও ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। সেনা সদস্যরা বিভিন্ন বাসাবাড়ি থেকে আশ্রিত পুলিশ সদস্যদের উদ্ধার করে সেনাবাহিনীর হেফাজতে নেয়।

 

মডেল থানার ওসি মোজাম্মেল হক শান্ত করার চেষ্টা করেছিলেন উত্তেজিত জনতাকে

 

বিকাল অমুমান ০৩.০০ টা সময় থেকে ওসি মোজাম্মেল হক থানা মসজিদের মাইক দিয়ে বিক্ষিপ্ত জনতা  দফায় দফায় মিছিল নিয়ে আসলে তাদেরকে শান্ত করার জন্য “পুলিশ জনতা ভাই ভাই সবাই শান্তি চাই “বলেন । একাধিক বার থানার গেইটে গিয়ে হেলার নিয়ে বিক্ষিপ্ত জনতাকে শান্ত করার চেষ্টা করেন। এবং ওসি মোজাম্মেল হক বিক্ষুব্ধ জনতার উদ্দেশ্যে বলেন, আমরা কাউকে কোন প্রকার গুলি কিংবা আঘাত করবো না। আমরা আপনাদের ভাই এই বলে হেলার দিয়ে ঘোষণা দিতে থাকেন। বিকাল অনুমান সাড়ে ৫টার দিকে একদল বিক্ষিপ্ত জনতা এসে থানার গেইট ভাংচুর শুরু করলে তখন ওসি কুমিল্লা জেলার এসপিকে ফোনে বিস্তারিত জানালে  এসপি জানায় তোমরা অস্ত্র ও গুলি ফেলে সিভিল হয়ে পালিয়ে যাও। তখন ওসি মোজাম্মেল হক সকল অফিসার ও ফোর্সকে এই নিদের্শনা জানিয়ে দেন। বিক্ষিপ্ত জনতাকে শান্ত করার চেষ্টা করেন। বিক্ষিপ্ত জনতা কোনভাবে শান্ত না হলে তখন সকল পুলিশ সদস্য ওসি সার্কেল এস.পিসহ সকলেই স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় থানার আশপাশের বাড়ীতে আশ্রয় নিয়ে প্রাণে বাঁচেন। ওসি আশ্রয় নেয় স্থানীয় এক বাসিন্দা মুক্তার এর বাড়িতে। পরবর্তীতে বিক্ষিপ্ত জনতা থানা লুট করে আগুন ধরিয়ে সব পুড়ে ছাই করে দেয়। ঘটনার আগে ওসি সকল অফিসার ও ফোর্সকে গুলি না করার ঘোষনা একাধিকবার দিতে থাকেন।

 

 

অবেশেষে স্থানীয় সাংবাদিকের সহায়তায় ওসি উদ্ধার:

উত্তেজিত জনতার তোপের মুখে আতঙ্কে আত্মগোপনে  থাকা ওসি মোজাম্মেল হককে পরে স্থানীয় এক সাংবাদিক হোসাইন দিদার উদ্ধার করে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যান। এদিন রাতে তাকে(ওসি) দাউদকান্দি থেকে উদ্ধার করে  একটি ঢাকা জেলার আশপাশে একটি বাসায় পৌঁছে দেন।

 

লেখক: হোসাইন মোহাম্মদ দিদার




শেয়ার করুন


পাঠকের মতামত

মেঘনা নিউজ-এ যোগ দিন

Meghna Roktoseba




এক ক্লিকে জেনে নিন বিভাগীয় খবর



© মেঘনা নিউজ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by ShasTech-IT