ঢাকা (রাত ৪:১৯) শুক্রবার, ২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

চিকিৎসা ব্যয় কমিয়ে, ওষুধের মূল্য রোগীদের নাগালে রাখতে হবে

মুক্ত কলাম ২১২১ বার পঠিত

মেঘনা নিউজ ডেস্ক মেঘনা নিউজ ডেস্ক Clock রবিবার দুপুর ০২:৪০, ৯ জুন, ২০২৪

বাংলাদেশে অতিরিক্ত চিকিৎসা ব্যয়ের কারণে দেশে বহু মানুষ নতুন করে দরিদ্র হয়ে যাচ্ছে।

চিকিৎসা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন খাতে অব্যাহত ব্যয়বৃদ্ধির কারণে মানুষ কত ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তা বহুল আলোচিত। সম্প্রতি প্রকাশিত এক গবেষণা থেকে জানা যায়, ২০১৮ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত সাত বছরে চিকিৎসা ব্যয় তিনগুণ বেড়েছে।

ওষুধের মূল্য বৃদ্ধি এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষার খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় চিকিৎসা ব্যয় অস্বাভাবিক ভাবে বাড়ছে। জানা যায়, চিকিৎসার ব্যয় ভার বহন করতে না পারার কারণে অনেকে রোগ পুষে রাখতে বাধ্য হচ্ছে অনেকের চিকিৎসা মাঝপথে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। বস্তুত চিকিৎসার খরচ জোগাতে না পারায় দেশের বিপুলসংখ্যক গরিব মানুষ রোগ- শোক নিয়েই বসবাস করছে।

পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করলে কেবল তখনই তারা চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়। ওষুধের কাঁচামাল ও চিকিৎসা সরঞ্জামের আমদানি খরচ বৃদ্ধির অজুহাতে বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো রোগীর পরীক্ষা-নিরীক্ষা ফিসহ সব ধরনের চিকিৎসা ব্যয় বাড়িয়েছে।

জনস্বাস্থ্যবিদদের মতে, দেশে চিকিৎসাসেবার মূল্য নির্ধারণে জাতীয় মানদন্ড বা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গাইড লাইন নেই। এ সুযোগে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের ইচ্ছামতো রোগীর কাছ থেকে অর্থ আদায় করছে।

অপর দিকে দেশের ওষুধের বাজারে এক ধরনের নৈরাজ্য চলছে। এখানে ঔষধ প্রশাসনের কার্যত কোনো নিয়ন্ত্রণই নেই। ফলে বাজারে লাফিয়ে-লাফিয়ে বাড়ছে ওষুধের দাম। দেশে গত কয়েক বছরে বেশির ভাগ অতি প্রয়োজনীয় ওষুধের দাম শত ভাগ পর্যন্ত বেড়েছে।

সম্প্রতি রাজধানীতে এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প সমিতি বলেছে, ডলার ও গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির কারণে তাদের ওষুধের উৎপাদন খরচ বেড়েছে। তাই ওষুধের দাম বাড়ানো ছাড়া উপায় দেখছে না তারা। আর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ওষুধের দাম বাড়ালে চিকিৎসাসেবা বড় সংকটে পড়বে। তাঁদের মতে, ওষুধের দাম নির্ধারণ করা উচিত জনগণের ক্রয়ক্ষমতা, দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থার ওপর ভিত্তি করে।

১৯৯৪ সালে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক আদেশে ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরকে ১১৭টি জেনেরিকের অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের মূল্য নির্ধারণের এখতিয়ার প্রদান করা হয়। তবে দেশে বর্তমানে প্রায় দেড় হাজার জেনেরিকের ২৭ হাজারেরও বেশি ওষুধ তৈরি হয়। ১১৭টি ছাড়া বাকি সব উৎপাদিত ওষুধের মূল্য প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেরাই নির্ধারণ করে। তারা শুধু দামের বিষয়টি ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরকে অবহিত করে। ফলে দেশে উৎপাদিত ওষুধের একটি বৃহৎ অংশের মূল্য নির্ধারণ ও নিয়ন্ত্রণে ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের এখতিয়ার না থাকায় যৌক্তিক মূল্যের বাধ্যবাধকতা আরোপ ও যথাযথ তদারকির অভাবে ওষুধের মূল্য সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে।

উল্লেখ্য, হাইকোর্ট আদেশে ইচ্ছামাফিক ওষুধের দাম নির্ধারণে কোম্পানি গুলোকে বিরত রাখতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে নির্দেশ দেওয়া হয়। অনুমোদন ছাড়া বিদেশি ওষুধের কাঁচামাল আমদানি, ওষুধ তৈরি-বিক্রি থেকে ওষুধ কোম্পানি গুলোকে বিরত রাখতেও নির্দেশ দেওয়া হয় ওই আদেশে। ওষুধ ও কসমেটিকস আইন, ২০২৩-এর ৩০ ধারা অনুসারে ওষুধের দাম নির্ধারণে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের নিষ্ক্রিয়তা কেন বেআইনি ও আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না এবং ওষুধ ও কসমেটিকস আইন, ২০২৩-এর ৩০ ধারা অনুসারে ওষুধের দাম নির্ধারণ করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, জানতে চাওয়া হয়।

বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প সমিতি বলছে, গত তিন বছরে ক্রমবর্ধমান হারে টাকার অবমূল্যায়ন হয়েছে। এতে বিদেশ থেকে আমদানি করা কাঁচামালের খরচ প্রায় ৩৫ শতাংশ বেড়েছে। একই ভাবে গ্যাস-বিদ্যুৎ বা জ্বালানি খরচ দ্বিগুণের বেশি হয়েছে। অন্যদিকে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ওষুধের দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে উৎপাদন খরচ মুখ্য হতে পারে না। এভাবে চলতে থাকলে দরিদ্র, হতদরিদ্র ও নিম্নমধ্যবিত্ত মানুষ প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবার বাইরে চলে যাবে। চিকিৎসা বৈষম্য আরো বাড়বে। সাধারণ মানুষ স্বাস্থ্যসেবাবঞ্চিত হবে।

এমনিতেই ঊর্ধ্বমুখী পণ্যমূল্যের বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে মানুষকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এর মধ্যে ওষুধের দাম যে মাত্রায় বাড়ানো হয়েছে, তা শুধু অযৌক্তিক নয়, অন্যায়ও। প্রায় প্রতিবছরই ওষুধের দাম একাধিকবার বাড়ানো হয়। বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প সমিতির তথ্য অনুযায়ী, কেম্পানিগুলো দেড় হাজার জিনেরিক নামের ওষুধ তৈরি করে, যেগুলো প্রায় ৩১ হাজার ব্র্যান্ড নামে বিপণন করা হয়। প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার আওতায় তালিকাভুক্ত ১১৭টি জিনেরিক নামের ওষুধের দাম ঔষধ প্রশাসন নির্ধারণ করে। বাকি ওষুধগুলোর দাম উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান গুলোই নির্ধারণ করে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ওষুধের দাম সাধারণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখতে ওষুধ কোম্পানিগুলোর প্রমোশন ও মার্কেটিং খরচ কমিয়ে আনতে পারে। চিকিৎসকদের কমিশন কমিয়ে দিতে পারে। সরকার কাঁচামাল আমদানির ক্ষেত্রে শুল্ক কমিয়ে দিতে পারে।

চিকিৎসা প্রাপ্তি মানুষের অন্যতম মৌলিক অধিকার। চিকিৎসাসেবা মানুষের দোরগোড়ায় নিয়ে যাওয়া সরকারের দায়িত্ব। সরকারের পাশাপাশি আমাদের দেশের মানুষের চিন্তা বড় বড় শিল্পপতি ও কোম্পানীগুলো সহনশীল হতে হবে। তখন সরকারের দায়িত্ব জনগণের চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা সফল হবে। আমাদের প্রত্যাশা, জীবন রক্ষাকারী ওষুধের মূল্য সাধারণ রোগীদের নাগালের মধ্যে রাখতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নেবে।

লেখক : আবুল কাশেম রুমন, সম্পাদক, সাপ্তাহিক বৈচিত্র্যময় সিলেট। 




শেয়ার করুন

GloboTroop Icon
পাঠকের মতামত

মেঘনা নিউজ-এ যোগ দিন

Meghna Roktoseba




এক ক্লিকে জেনে নিন বিভাগীয় খবর



© মেঘনা নিউজ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by ShafTech-IT