পুতিন এবার শান্তি চান, তবে নিজের শর্তে
নিজস্ব প্রতিনিধি সোমবার রাত ১০:১২, ৩ অক্টোবর, ২০২২
রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, তিনি শান্তি চান। তবে তার আগে ইউক্রেনের তালগাছটা যে তাঁর, সেটা সবাইকে মেনে নিতে হবে।
গত সপ্তাহে ক্রেমলিনের সোনালি রাংতা দিয়ে মোড়া দরবারকক্ষে এক মহা আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানে প্রেসিডেন্ট পুতিন জানান, ইউক্রেনের চারটি অঞ্চল, যার পরিমাণ সে দেশের মোট ভূমির ১৪ শতাংশ, এখন থেকে রাশিয়ার অবিচ্ছেদ্য অংশ। পাশাপাশি এ কথাও ঘোষণা করেন, তিনি যুদ্ধ নয়, শান্তি চান।
ইউক্রেনের নাম উল্লেখ করে তিনি বলেন, তিনি শান্তি আলোচনায় প্রস্তুত, তবে যে চারটি অঞ্চল রাশিয়ার অন্তর্ভুক্ত হিসেবে ঘোষিত হলো, তাদের ব্যাপারে কোনো আলোচনা নয়। এই অঞ্চলসমূহ রাশিয়ার, অনন্তকালের জন্য তার। পুতিন বলেন, ‘আমি কিয়েভ ও তার পশ্চিমা প্রভুদের বলছি, ভালো করে শুনে রাখো। যেসব মানুষ লুহানস্ক, দোনেৎস্ক, খেরসন ও জাপোরিঝঝিয়ায় বাস করে, তারা আমাদের নাগরিক হতে চলেছে। চিরদিনের জন্য।’
আপনারা যাঁরা রুশ লেখক আন্তন চেখভের দ্য চেরি অরচার্ড নাটকটি দেখেছেন, তাঁদের হয়তো নাটকটির চরিত্র লোপাখিনের বিখ্যাত স্বগতোক্তির কথা মনে আছে। রানেভস্কাইয়া পরিবারের চেরিবাগানটি নিলামে কিনে নেওয়ার পর সে কথা তার নিজেরই বিশ্বাস হচ্ছিল না। কথাটি এমন ছিল, ‘এটা কি সত্যি যে এই চেরিবাগান আমার? না, আপনারা বলুন আমি মাতাল, আমার মাথা খারাপ। বলুন যে পুরো ব্যাপারটাই একটা স্বপ্ন।’
লোপাখিন যে রকম বক্র হাসি দিয়ে ‘ইয়া কুপিল’ (আমি কিনে নিলাম) এই বলে কপালে চোখ তুলে চেঁচিয়ে উঠেছিল, পুতিনও সেই রকম বাঁকা হাসি দিয়ে বললেন, ‘না ভ্সিগদা’ (চিরকালের জন্য)। শুধু তফাত এই যে লোপাখিন গাঁটের পয়সা দিয়ে সে সম্পত্তি কিনে নিয়েছিল। পুতিন সে পথে না গিয়ে সোজা লেঠেল পাঠিয়ে জায়গা দখল করে নিলেন। তবে সে তালগাছ তিনি কত দিন নিজ দখলে রাখতে পারেন তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে, আর সে জন্য তাঁর কাছ থেকে শান্তির প্রস্তাব এসেছে।ইউক্রেনের প্রায় ৪০ হাজার বর্গমাইল এলাকা নিজের বলে পুতিনের যে দাবি, তা এক মগের মুল্লুকেই সম্ভব। জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে কার্যত সে কথাই বললেন। গুতেরেসের মতে, রাশিয়ার সঙ্গে এই চার অঞ্চলের সংযুক্তির কোনো আইনগত ভিত্তি নেই, এই সিদ্ধান্ত অবশ্যই নিন্দনীয়। তিনি রাশিয়ার সিদ্ধান্তকে শান্তির জন্য হুমকি ও বিপজ্জনক বলেও আখ্যায়িত করেন। তিনি বলেছেন, আধুনিক বিশ্বে এই আচরণের কোনো স্থান নেই, এমন কাজ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
পুতিনের দোসর হিসেবে পরিচিত বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেক্সান্দার লুকাশেঙ্কোও বলেছেন, ইউরোপ যদি চায় তো দুই দিনেই এই যুদ্ধ থামানো সম্ভব। কিন্তু কী করা যাবে, ইউরোপ তো শান্তি চায় না। এই পত্রিকার ইংরেজি সংস্করণের সম্পাদক দিমিত্রি সুদাকভ স্বনামে এক নিবন্ধে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেছেন, আমেরিকা চাইলে রাশিয়াকে পিষে মারতে পারে, কিন্তু শান্তি প্রস্তাবে সায় দিয়ে সে বিশ্বকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচাতেও পারে।
শান্তি প্রতিষ্ঠার অবশ্য অন্য আরও একটি পথ রয়েছে, আর তা হলো পুতিনকে সরিয়ে ফেলা। রাশিয়ার অভ্যন্তরেই এই যুদ্ধের বিরুদ্ধে যেভাবে প্রতিরোধ গড়ে উঠছে, তাতে সে সম্ভাবনা এখন আর মোটেই অবাস্তব মনে হয় না।