করোনা পরীক্ষায় দেশে চালু হলো প্রথম বেসরকারি ল্যাব
সেলিম খান রবিবার দুপুর ০৩:২০, ৩ মে, ২০২০
করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) মোকাবিলায় বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো বেসরকারি উদ্যোগে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে চালু হলো পলিমারি চেইন রিঅ্যাকশন (পিসিআর) ল্যাব। বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর উদ্যোগে স্থাপন হওয়া এই ল্যাবে কোভিড-১৯ নমুনা পরীক্ষা করা হবে। বুধবার (২৯ এপ্রিল ) দুপুর ১২টায় এক ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে এই ল্যাবটির উদ্বোধন হয়।
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার কাঞ্চনের বেস্টওয়ে সিটিতে স্থাপিত এই ল্যাবটিতে নমুনা পরীক্ষার কাজে থাকবেন দুইজন ভাইরোলজিস্ট ও চারজন চিকিৎসক। নমুনা সংগ্রহের কাজে থাকবেন পাঁচজন টেকনোলজিস্ট। যারা নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন স্থান থেকে নমুনা সংগ্রহ করবেন। নমুনা সংগ্রহের ক্ষেত্রে ল্যাবে থাকছে ০১৭৭-৭৭৭৪২২০ ও ০১৭৭-৭৭৭৪২২২ এই দুইটি হটলাইন নম্বর।
সরকারের কেন্দ্রীয় সংস্থাটি এত দিন নারায়ণগঞ্জ অঞ্চল থেকে নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকায় পাঠাত। এই টেস্ট ল্যাব প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এখন নারায়ণগঞ্জের নমুনা সংগ্রহ করে এ ল্যাবেই পরীক্ষা করা হবে। এ ল্যাবে করোনা টেস্ট করা হবে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে।
গাজী গ্রুপের উপ-মহাব্যবস্থাপক গোলাম মর্তুজা পাপ্পা গাজীর সঞ্চালনায় ভার্চুয়াল উদ্বোধনী সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী (বীরপ্রতীক), স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক প্রফেসর ডা. মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ, পরিকল্পনা ও গবেষণা বিভাগের পরিচালক ডা. মোহাম্মদ ইকবাল কবির, নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন, নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জায়েদুল আলম, জেলার সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইমতিয়াজ, রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মমতাজ বেগম, রূপগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান শাহজাহান ভূঁইয়া, রূপগঞ্জ উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ফেরদৌসি আলম নীলা, রূপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সাঈদ আল মামুন, নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সভাপতি অ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমান মাছুম, রূপগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সভাপতি মীর আব্দুল আলীম, ইউএস বাংলা হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন, বেস্টওয়ে গ্রুপের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান, কাঞ্চন পৌরসভার মেয়র রফিকুল ইসলাম রফিক প্রমুখ।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (পরিকল্পনা ও গবেষণা) অধ্যাপক ডা. ইকবাল কবীর বলেন, কোভিড-১৯ নমুনা পরীক্ষার জন্য বিএসএল-২ (বায়োসেফটি লেভেল-২) ল্যাবে বায়োলজিক্যাল নিরাপত্তার সব ধরনের সুবিধা থাকা প্রয়োজন। বেসরকারি উদ্যোগে দেশে প্রথমবারের মতো সেটি নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে স্থাপন করা হয়েছে। এই নমুনা পরীক্ষার জন্য পলিমারেজ চেইন রি-অ্যাকশন (পিসিআর) মেশিন ইতোমধ্যেই আনা হয়েছে।
তিনি বলেন, ইতোমধ্যে রূপগঞ্জে ট্রায়াল রান সম্পন্ন হয়েছে। এর সঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদফতরের উদ্যোগে ব্র্যাকের সহায়তায় পাঁচটি নমুনা সংগ্রহের বুথও স্থাপন করা হচ্ছে। এই বুথগুলো বিভিন্ন স্থানে বসানো হবে। সেখান থেকে নমুনা সংগ্রহ করে ল্যাবে পাঠানো হবে। এই বুথগুলোতে নমুনা সংগ্রহের কাজ করার জন্য প্রয়োজনীয় জনবলও প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে।
ল্যাবের ভাইরোলজিস্ট ডা. রুকসানা রায়হান বলেন, ইতোমধ্যে কোভিড-১৯ নমুনা পরীক্ষার জন্য ল্যাবের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। এখানে বায়োসেফটি লেভেল-২ ল্যাব নিশ্চিত করা হয়েছে। এখানে জে এস রিসার্চ ব্রান্ডের বায়োসেফটি লেভেল-২ ক্যাবিনেট ব্যবহার করা হচ্ছে। এটি কোরিয়া থেকে আনা হয়েছে। এই মেশিন দিয়ে প্রতিবার ৯৪টি স্যাম্পল একবারে পরীক্ষা করা যায়।
এ বিষয়ে গাজী গ্রুপের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক গাজী গোলাম মর্তুজা বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিজেও এই অঞ্চলে একটি পরিপূর্ণ টেস্ট ল্যাব স্থাপনের ওপর গুরুত্বারোপ করেছিলেন। সেই আহ্বানে সাড়া দিয়েই বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী এবং তার পরিবার এগিয়ে এসেছে কোভিড-১৯ এর অন্যতম হটস্পট নারায়ণগঞ্জের জন্য অর্থবহ কিছু করার জন্য।
গোলাম মর্তুজা আরও বলেন, করোনায় আক্রান্ত যারা মাইল্ড সিন্ড্রোমে ভুগছেন তাদের যদি দ্রুত শনাক্ত করে আইসোলেশনে নেয়া যায় এবং যারা করোনা পজিটিভের সংস্পর্শে আসতে পারেন তাদের যদি দ্রুত কোয়ারেন্টাইনে নেয়া যায়, তাহলেই কেবল এই মারাত্মক সংক্রামক রোগটির সংক্রমণ ধীরগতি করা যেতে পারে। সেজন্য সবার আগে প্রয়োজন রোগ শনাক্ত হওয়া। নারায়ণগঞ্জের স্যাম্পল ঢাকায় পরীক্ষার জন্য পাঠানো সময় সাপেক্ষ। এখন থেকে সম্পূর্ণ বিনা খরচে নারায়ণগঞ্জে থেকেই এখানকার রোগীদের স্যাম্পল টেস্ট করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, জনগণের পাশে থেকেই আমরা গাজী গ্রুপ সব সময় কাজ করে যাই। অতীতেও বিভিন্ন সংকটে গাজী গ্রুপ বিপন্ন মানুষের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। এবার করোনা সংকটের এ সময়ে সরকারের পাশে থেকে কাজ করে যাওয়া আমাদের দায়িত্ব। আমরা মানুষের পাশে থেকে কাজ করে যাচ্ছি।
গোলাম মর্তুজা আরও আশা করেন, নারায়ণগঞ্জে যেটা হয়েছে তা যদি বাংলাদেশে সমাজের বিত্তবান ও প্রতিষ্ঠিতদের উদ্যোগে আরও ১৫-২০টি স্থানে করা হয় তবে আমরা কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ এড়ানোর যুদ্ধে অনেক দূর এগিয়ে যাব।