উলিপুরে খাল খননের গড়ের মাটি লুট : প্রশাসনের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ
সাজাদুল ইসলাম, কুড়িগ্রাম মঙ্গলবার সকাল ১১:৩৫, ১৭ জানুয়ারী, ২০২৩
কুড়িগ্রামের উলিপুরে ধামশ্রেণি ইউনিয়নের টেংনাকুড়া (নাওড়া) এর খাল খননের গড়ের মাটি নেয়ার মহোৎসব চলছে। মাটি যাচ্ছে ইট ভাটা ও স্থাপনায়। ট্রাক্টর দিয়ে মাটি বিক্রি করে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
প্রায় দুই বছর ধরে সংঘবদ্ধ চক্রটি প্রশাসনের নাগের ডগায় এ মহোৎসব চালিয়ে এলেও কার্যত কোন ভূমিকা নেয়নি প্রশাসন। গড়ের মাটি বিক্রির ফলে বর্ষা সৌসুমে আবাদি জমিসহ বাড়িঘর তলিয়ে যাবে ও খনন করা খালটি পূরণ হবে আশংকা করছে স্থানীয়রা।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, চিলমারীর উপজেলার কাঁচকোল থেকে উলিপুরের ধামশ্রেণি ইউনিয়নের টেংনাকুড়া পর্যন্ত ২০২০-২১ অর্থ বছরে ৮ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রায় ১২ কিলোমিটার খননের কাজটি শুরু করা হয়। দুটি দরপত্রের মাধ্যমে দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজটি দেয়া হয়। যার প্রায় ১৩’শ মিটার খনন করা হয়েছে। বাকি কাজটি আর করা সম্ভব হয়নি। মাঠ পর্যায়ের কৃষকের সাথে খাল খননের বিষয়টি শেয়ার করতে গেলে তারা অধিগ্রহণের বিষয়টি নিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলেন, যার কারণে আর কাজটি করা সম্ভব হয়নি।
অভিযোগ উঠেছে, ২০২০-২১ অর্থ বছরে পানি উন্নয়ন বোর্ড খাল খননের কাজ করলেও এরপর কর্তৃপক্ষ আর খোঁজ খবর নিতে আসেননি। যে কারণে বাঁধের মাটি বিক্রির হিড়িক পড়েছে। এই মাটি বিক্রির সুযোগ করে দিয়েছে উপর মহলের সরকারি কর্মকর্তাগণ। বাঁধের পাশে জমি মালিকদের ম্যানেজ করে একটি চক্র শুরুতেই উপরের টপ সয়েলগুলো বিক্রি করেছে ইট ভাটায় এখন নিয়ে যাচ্ছে স্থাপনায়।
সরেজমিনে দেখা যায়, ২টি স্পর্টে প্রায় ১০-১৫ জন শ্রমিক বাঁধ কাটছে আর সেই বাঁধের মাটি ট্রাক্টরে করে নিয়ে যাচ্ছে এক শ্রেণির মহাজন। বাঁধের মাটি বিক্রির টাকা যাচ্ছে স্থানীয় ক্ষমতাধরদের পকেটে। বাঁধের উত্তরের দীর্ঘ যে বাঁধটি এটি লম্বায় প্রায় ৩ কিলোমিটার এই ৩ কিলোমিটারের মাটি পুরোটাই সরিয়ে ফেলেছে একটি চক্র। এখন দক্ষিণের পাড়ের মাটি লুট হচ্ছে।
মাটি বিক্রির সাথে জড়িত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ট্রাক্টর মালিক জানান, আমরা ১’শ টাকায় প্রতি গাড়ি মাটি কিনে ৬’শ টাকায় বিক্রি করি।
ট্রাক্টর চালক বাবু মিয়া জানান, জমির মালিকরা তাদের সাথে চুক্তি করে তারপর ক্রেতাদের কাছে মাটি পৌছে দেয়।
জমির মালিক মাহমুদুল হাসান সুজন ও আমিন উদ্দিন জানান, এই গড়ের মাটি কাটার সুযোগ করে দিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। উত্তরের গড়ের মাটি স্কাভেটর (ভেকু) ওয়ালারা পয়শা নিয়ে শুরুতেই জমি মালিকদের সাথে সমন্বয় করে এই অন্যায় কাজটি করেছেন। এরপর দক্ষিণের গড়ের মাটি বিক্রি শুরু হয়েছে।
মাটি বিক্রিতা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরো দুইজন বলেন, কিছু মাটি বিক্রি করছি এবং কিছু মাটি নিজেদের কাজেও ব্যবহার করছি। তারা আরোও জানান, কিভাবে সরকার আমাদের জমি অধিগ্রহণ করলো আমরা কিছু বলতে পারি না।
এ ব্যাপারে কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম বলেন, জমি অধিগ্রহণের সমস্যা থাকায় খননের বাকী কাজটি করা সম্ভব হয়নি। গড়ের মাটি কাটার বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।
এ বিষয়ে কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, মাটি কাটা বন্ধের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা এখনি নেয়া হবে।