অনাবৃষ্টিতে শুকিয়ে গেছে খাল-বিল : পাট নিয়ে বিপাকে কৃষক!
সাজাদুল ইসলাম শুক্রবার দুপুর ০১:০১, ২৮ জুলাই, ২০২৩
আষাঢ়-শ্রাবণ এই দুই মাস বর্ষা কাল। বর্ষার মৌসুম শেষ হয়নি। এখন শ্রাবণের মাঝামাঝি সময় নেই তেমন কোনো বৃষ্টি! এ সময় খাল-বিল পানিতে টইটুম্বুর থাকার কথা থাকলেও গত কয়েক সপ্তাহের অনাবৃষ্টিতে তা শুকিয়ে গেছে। পানির অভাবে কুড়িগ্রামের উলিপুরের কৃষকরা পঁচাতে পারছে না পাট। অপেক্ষা করছেন বৃষ্টির পানিতে খাল-বিল ভরলে সেই পানিতে পাট পঁচাবেন। এ বছর পাট নিয়ে বিপাকে পড়েছেন কৃষক।
তবে কৃষি অফিস থেকে কৃষকদের পাটকাঠির আশা ছেড়ে দিয়ে গাছ থেকে আঁশ তুলে স্বল্প পানিতে ‘রিবন রোটিং’ পদ্ধতিতে পাট পঁচানোর পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু এই পদ্ধতিতে পাট পঁচাতে নারাজ কৃষক।
কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় চলতি বছরে একটি পৌরসভা ও ১৩টি ইউনিয়নে প্রান্তিক কৃষক ২হাজার ৬৭০ হেক্টর জমিতে পাট চাষ করেছেন। ইতি মধ্যে ২হাজার ৬২০ হেক্টর জমির পাট কর্তন হয়েছে।
সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, পাটের ফলন ভালো হলেও খরা ও অনাবৃষ্টিতে সেই সোনালি আঁশ ঘরে তোলা নিয়ে চিন্তিত কৃষক। পানির অভাবে সময়মত পাট পঁচাতে পারছে না তারা। খরায় খেতে পাট শুকিয়ে নষ্ট হচ্ছে। এদিকে আমন চারা রোপণের সময় হওয়ায় পাট কেটে কোন কৃষক জমির এক কোণায়, আবার কেউ রাস্তা পাশে স্তূপ দিয়ে রাখছেন। অনেকেই এখনো জমি থেকে পাট কাটে নাই। আবার অনেকে নিচু জমিতে সেচ দিয়ে পাট পঁচাচ্ছেন। কিছু কিছু জমির পাট কেটে নসিমন, ট্রাক্টর ও ট্রাকে করে অনেক দূরে নদীতে পাট পঁচাতে নিয়ে যাচ্ছেন কৃষক। ফলে পাট উৎপাদনের বাড়তি খরচ গুণতে হচ্ছে তাদের। তাই ভালো ফলনেও হাঁসি নেই পাট চাষিদের মুখে।
উপজেলার মধুপুর গ্রামের কৃষক মুকুল মিয়া ও নাসির উদ্দিন জানান, আড়াই একর জমিতে পাট চাষ করা হয়েছে। পানি না থাকায় প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে ট্রাকে করে পাট পঁচানোর জন্য নিয়ে যেতে খরচ হয়েছে নয় হাজার টাকা। পানি না থাকায় এবার পাট চাষে খরচ বেশি পড়ছে। ভালো দাম না পেলে লাভ হবে না।
পৌর শহরের নারিকেল বাড়ী গ্রামের পাট চাষি হোসেন আলী জানান, পাট চাষ করে কোন লাভ নেই। জমি প্রস্তুত, বীজ বোপণ, সেচ দেয়া, সার দেয়া, আগাছা পরিস্কার করা, পাট কাটা, জাগ দেয়া ও পাট ধোয়া পর্যন্ত যে খরচ তাতে কৃষকের লোকসান। করা লাগে বিধায় করি।
বজরা ইউনিয়নের কালাপানি বজরা গ্রামের কৃষক মজিবর রহমান জানান, ৩০ শতাংশ জমিতে পাট চাষ করে বড় বিপদে আছি। রোদে শুকিয়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। পানির অভাবে পাট কেটে জাগ দিতে পারছি না। পাট রাস্তার পাশে স্তূপ করে রেখেছি। পাট নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি খরচ সামলাতে।
উপজেলা কৃষি অফিসার ও কৃষিবিদ মোশাররফ হোসেন বলেন, এ বছর পাটের ফলন ভালো হয়েছে। খাল-বিলে পর্যাপ্ত পানি না থাকার কারণে পাট চাষিরা পাট পঁচাতে কিছুটা সমস্যায় পড়েছেন। তবে আমরা কৃষকদের রিবন রোটিং পদ্ধতিতে পাট পঁচানোর পরামর্শ দিচ্ছি।