ঢাকা (সকাল ১১:১২) মঙ্গলবার, ১৬ই এপ্রিল, ২০২৪ ইং
শিরোনাম
Meghna News বর্ণাঢ্য আয়োজনে পহেলা বৈশাখ উদযাপিত Meghna News নববর্ষ উদযাপনে কুমিল্লা-১ আসনের সাংসদ ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সবুর Meghna News ঈদ উপহার হিসেবে শিশুদের বই দিলো “সাংবাদিক শরীফ প্রধান পাঠাগার” Meghna News কাতার প্রবাসী ঐক্য পরিষদ সুনামগঞ্জ এর কমিটি গঠিত Meghna News দাউদকান্দিতে বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে ড.মারুফের ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় Meghna News দাউদকান্দিতে নিখোঁজের দুদিন পর ডোবা থেকে অটো চালকের মরদেহ উদ্ধার Meghna News টিম গ্রুপের কর্পোরেট অফিসার আসিফকে ‘সম্মাননা স্মারক’ প্রদান Meghna News শরীফ প্রধান পাঠাগারে কবি মোহাম্মদ দিদারের বই উপহার Meghna News দাউদকান্দিবাসীর সঙ্গে এমপি আব্দুস সবুরের ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় Meghna News চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রায় ২ কেজি গাঁজা উদ্ধার, মটরসাইকেল জব্দ : আটক-১

বিয়ানী বাজারে আল্লামা দুবাগী ছাহেব কিবলাহ(রহঃ)এর ঈসালে সাওয়াব উপলক্ষে উলামা সমাবেশ অনুষ্ঠিত

<script>” title=”<script>


<script>

রাহবার কাফেলা এর উদ্যোগে সিলেটের বিয়ানী বাজারে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ইসলামী চিন্তাবিদ, মুনাজিরে আজম, লিখক-গবেষক, পীরে তরিক্বত, রাহনুমায়ে শরীয়ত, মুফতিয়ে আজম, বাহরুল উলুম হযরত আল্লামা মুজাহিদ উদ্দীন চৌধুরী দুবাগী ছাহেব কিবলাহ (রহ.) এর ঈসালে সাওয়াব উপলক্ষে উলামা সমাবেশ গত ১৬ অক্টোবর ২০২০ইং অনুষ্ঠিত হয়েছে।

যেই সমাজে গুনীজনদেরকে সম্মান জানাতে জানে সেই সমাজে আরো বেশি বড়মাপের গুনীজনের জন্ম হয়। গুণীজনদের সম্মান না জানালে গুণী জন্মায় না। গুণীজনদের সম্মান দিলে তাঁর কাজের স্বীকৃতি প্রদান করা হয় এবং ভালো কাজে আরো মানুষ এগিয়ে আসে। গুনীজনদের সম্মানে সবাইকে কাজ করতে হবে। উক্ত ঈসালে সাওয়াব মাহফিলে বক্তাগণ এসব কথা বলেন।

মাওলানা আব্দুল বাছিত আরিফীর সভাপতিত্বে ও মাওলানা মুজিবুর রহমানের পরিচালনায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন, রাখালগঞ্জ আলিয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা শিহাব উদ্দিন আলিপুরি, বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, চান্দগ্রাম আলিয়া মাদ্রাসার উপাধ্যক্ষ মাওলানা ওহিদুজ্জামান চৌধুরী খসরু, প্রধান বক্তা হিসাবে বক্তব্য রাখেন, মুসলিম শিশু শিক্ষা ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মাওলানা কামাল হুসেন আল মাথিহুরি। আরো বক্তব্য রাখেন মাওলানা রুহুল আমিন, মাওলানা মুফতি আসহাব উদ্দিন, মাওলানা আছাদ উদ্দিন ফারুকী, মাওলানা নাসির উদ্দিন, মাওলানা হাফিজ আবুল কালাম, মাওলানা ফখরুল ইসলাম, মাওলানা হাফিজ আব্দুল আহাদ, মাওলানা শিবরুল আমিন, মাওলানা আব্দুস সামাদ আজাদ চৌধুরী, মাওলানা হাফিজ আমির হোসেন, মাওলানা আবু সুফিয়ান, মাওলানা শাহিন আহমদ, মাওলানা আব্দুল মালিক, মাওলানা জামাল উদ্দিন, মাওলানা আব্দুল মুকিত কোনাগ্রামী, মাওলানা আব্দুর রহিম রুম্মান, মাওলানা হাসান আল মামুন, মাওলানা জিয়াউর রহমান, হাফিজ মামুনুর রশীদ বাছন, হাফিজ আম্বিয়া হোসেন, হাফিজ গোলজার আহমদ, আতিক আহমদ, সাব্বির আহমেদ সহ শিক্ষক সাংবাদিক, সাহিত্যিক সুধীসমাজ উপস্থিত ছিলেন।

বক্তারা বলেন, আল্লামা দুবাগী ছাহেব কিবলাহ (রহঃ) ছিলেন বাহরুল উলুম অর্থাৎ জ্ঞানের সাগর। তিনি ছিলেন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী, একাধারে ইলমে তাফসীর, ইলমে হাদীস, ইলমে ক্বিরাত, ইলমে তাসাওয়াফ ও ইলমে ফিকহ বিষয়ে পারদর্শী। তিনি ছিলেন ভাষাতত্ত্ববিদ। বাংলা, ইংরেজী, আরবি, উর্দু ও ফার্সী ভাষায় তিনি ছিলেন সুপণ্ডিত।

বাল্যকাল থেকেই আল্লামা দুবাগী ছাহেব (রহঃ) ছিলেন তীক্ষ্ণ মেধাবী ও অত্যন্ত প্রতিভাবান। শিক্ষকতার দীর্ঘ জীবনে আল্লামা দুবাগী ছাহেব (রহঃ) ছিলেন একজন নিবেদিতপ্রাণ আদর্শ শিক্ষক। শিক্ষাঙ্গনে তার বিরামহীন গতি অন্যদের থেকে তাঁকে আলাদা অবস্থানে নিয়ে আসে। একজন আদর্শ শিক্ষকের প্রোজ্জ্বল উদাহরণ হয়ে ওঠেন তিনি। তাঁর শিক্ষকতা জীবনের অম্লান স্মৃতি বহুকাল পর্যন্ত ধরে রাখবে তাঁর ছাত্ররা তাদের প্রিয় দুবাগী হুজুরকে, শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ রাখবে কালের পর কাল।

তাঁর জীবনব্যাপী সাধনা ও কাজের কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে দ্বীন, সুন্নিয়ত চর্চা ও মানুষের কল্যাণ। তিনি দেশ বিদেশে, বিশেষ করে যুক্তরাজ্যে ১৯৭৮ইং থেকে ইন্তেকাল পর্যন্ত অসংখ্য মাহফিল, সভা, সেমিনার ও সিম্পুজিয়ামে প্রিয় নবীর সুন্নত প্রচারে বলিষ্ট ভূমিকা রাখেন। তাঁর ওয়াজ-নসীহতের উছিলায় হাজার হাজার বিভ্রান্ত লোক পথের দিশা পেয়েছে। তার বক্তব্যে কুরআন-হাদীসের পাশাপাশি ফিকহের মাসয়ালাসমূহ ছাড়াও উর্দু-ফার্সী কবিতার অপূর্ব সমাহার ছিল। তিনি মানবজীবনের বিভিন্ন দিক ও বিভাগের উপর ইসলামী দৃষ্টিকোণ তাদের নিকট তুলে ধরতেন। তাঁর ওয়াজের মধ্যে এমন মূল্যবান মাসয়ালা বর্ণিত হতো যা দ্বীন ইসলামের প্রয়োজনীয়তার সহিত সম্পৃক্ত ছিল। তিনি আমৃত্যু নবীপ্রেমিক আশিকে রাসুল ছিলেন। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের সুদৃঢ়করণে তিনি আজীবন অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। তাঁর অনুকরণীয় আচার-আচরণ ছিল সুন্নতে রাসুল (সঃ) এ ভরপুর।

যুগ শ্রেষ্ঠ আলেমে দ্বীন আল্লামা মুফতি মুজাহিদ উদ্দিন চৌধুরী দুবাগী ছাহেব কিবলাহ রাহিমাহুল্লাহ এক যুগান্তকারী ইতিহাস সৃষ্টিকারীর নাম। যিনি ছিলেন দরস-তদরীস, লেখা-লেখি, বাক-বক্তৃতা ও বিতর্ক মুনাযারায় সাহসী এক সুপুরুষ। ইসলামের প্রচার-প্রসারে যার খেদমত অপরিসীম। বিলেতে লেস্টার দারুসসালাম মসজিদ ও  নিউক্রস জামে মসজিদ এবং ব্লাকবার্ন শাহ জালাল জামে মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা।যুক্তরাজ্যে তিনি লেস্টারের ছাব নামেও সমধিক পরিচিত ছিলেন। এছাড়া ইউকে আঞ্জুমানে আল-ইসলাহ  এর  প্রতিষ্ঠাতা এবং  ইউকে ওলামা সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। তিনি অনেক খানেকা, মক্তব, মসজিদ ও মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেছেন। বিশেষ করে ১৯৭৮ইং প্রতিষ্ঠিত  লন্ডনস্থ দারুল হাদীছ লতিফিয়া মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন এবং এ মাদরাসার অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন।

আল্লামা দুবাগী ছাহেব (রহঃ) বিলাতবাসী মুসলমানদের আমন্ত্রণে ১৯৭৮ সালের ১লা জানুয়ারী লেস্টার শহরে গমন করেন। যুক্তরাজ্যে তিনি সর্বপ্রথম জৈনপুরী মসলকের ভিত্তিস্থাপন করেন, তাঁর পূর্বে বিলেতে এ মসলকের কোন আলিম ছিলেন না। পরে একই বৎসর ১৯৭৮ সালের ২রা জুন শামছুল উলামা হযরত আল্লামা ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ (রহঃ) প্রথমবারের মত বৃটেন সফর করেন। দুবাগী ছাহেব বিলেতবাসীকে সংগঠিত করে ফুলতলী ছাহেবকে বৃটেনে এক বিশাল ঐতিহাসিক অভ্যর্থনা জানান। দুবাগী ছাহেব জনগণকে উৎসাহ উদ্দীপনা দিয়ে যুক্তরাজ্যের কোণায় কোণায় ফুলতলী ছাহেবের ওয়াজ মাহফিলের ব্যবস্থা করেন। তিনি ফুলতলী ছাহেবের এ সফরকে সফল করার জন্য বাংলা, ইংরেজী, উর্দু, হিন্দী, ও গুজরাটি ভাষায় সর্বাধিক প্রচার প্রচারণা করেন। এই সফরেই দুবাগী ছাহেব স্বীয় পীর ও মুর্শিদের সাথে বৃটেনে মুসলমানদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের দ্বীনি শিক্ষার কথা আলোচনা করে মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করার প্রস্তাবনা ও পরিকল্পনা পেশ করেন। ফুলতলী ছাহেব এ সফরেই লন্ডনে মাদ্রাসার ভিত্তিস্থাপন করেন, তখন এই মাদ্রাসার নাম ছিল মাদ্রাসা-এ-দারুল ক্বিরাত মজিদিয়া। পরবর্তীতে এই মাদ্রাসার নাম করণ হয় দারুল হাদীস লাতিফিয়া।

দিবারাত্রি সর্বদা ওয়াজ নসিহত বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণা ও ফতোয়া প্রদান ইত্যাদি ব্যস্ততা সত্ত্বেও বাংলা, উর্দু  এবং আরবী ভাষায় প্রায় শতাধিক প্রকাশিত ও অপ্রকাশিত গ্রন্থ রচনা করেছেন যা দ্বীনের খেদমতে মুসলিম উম্মাহ জন্য মাইলফলক হিসেবে কাজে  আসবে। বিশেষ করে তাঁর রচিত বিশ্ববিখ্যাত পুস্তক মীলাদে বেনযীর। তাঁর লেখনীর মূল উদ্দেশ্য ছিল মানুষের চিন্তা ও চেতনা বৃদ্ধি করে তাঁদের আল্লাহমুখী করা। সমাজ ও মানবতার সেবায় তার হাত ছিল সবসময়ই উদারহস্ত। যেখানেই সুযোগ পেয়েছেন হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন সমাজ-মানবতার সেবায়। সর্বদিক দিয়ে তিনি একজন সফল ব্যক্তি ছিলেন, তাঁর ছাহেবজাদাগন সবাই উচ্চশিক্ষিত এবং স্ব স্ব ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত।

আল্লামা দুবাগী ছাহেব (রহঃ) এর অবদানের সুফল ও খ্যাতি শুধু যুক্তরাজ্যে বা স্বদেশেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং আন্তর্জাতিক বিশ্বের বহু দেশ সফরের মাধ্যমে সুন্নিয়তের প্রচার ও প্রতিষ্ঠায় তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত আলেমদের সংখ্যা আমাদের দেশে হাতেগোনা। আল্লামা দুবাগী ছাহেব (রহঃ) ছিলেন সেই হাতেগোনা কয়েকজনের শীর্ষে। আরব বিশ্বসহ বিভিন্ন দেশের শীর্ষস্থানীয় পীর মাশায়েখ ও উলামায়ে কেরাম এর সাথে ছিল আল্লামা দুবাগী ছাহেব (রহঃ) এর আন্তরিক সম্পর্ক।। লেখনী ও চিন্তার জগতে সদর্প পদচারণায় তাঁকে পরিচিত করেছিল বিশ্ববাসীর কাছে। এ মহান মনীষীর ইলমি পাণ্ডিত্যে মুগ্ধ হয়ে বিশ্বের বরেণ্য ইসলামি স্কলারগণ ভূয়সী প্রশংসা করে তাঁরা তাঁদের মূল্যবান অভিমত প্রেরণ করেছেন। তাঁর ইন্তেকালে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে এসব খ্যাতনামা ওলামায়ে কেরাম ও পীর মাশায়েখ সহ বাংলাদেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, লন্ডনে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাই কমিশনার সাইদা মুনা তাসলিম, ব্রিটিশ এমপি এবং বাংলাদেশের অনেক মন্ত্রী শোক বার্তা প্রেরণ করেছেন। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এবং বাংলাদেশে শহরে ও গ্রামে গঞ্জে বিশ্বব্যাপী করোনাকালীন সময়ও তাঁর জন্য দোয়া ও স্মরণ সভা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

তার ইন্তেকালে মুসলিম উম্মাহ একজন বিশিষ্ট আলেমে দ্বীন ও উজ্জ্বল নক্ষত্রকে হারালো। বিনয়ী, আকর্ষণীয় চরিত্রের অধিকারী ও সর্বজন শ্রদ্ধেয় ছিলেন তিনি। যুক্তরাজ্যে ইসলামের প্রচার ও প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রেখেছেন তিনি। দেশ ও জনগণের জন্য তাঁর গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা আলেম সমাজ ও জাতি চিরকাল মনে রাখবে, ইনশাআল্লাহ।

মিলাদ পাঠান্তে হযরত আল্লামা মুফতি মুজাহিদ উদ্দিন চৌধুরী দুবাগী ছাহেব কিবলাহ (রহঃ)-এর জীবনের সকল খেদমতের উছিলায় তাঁকে জান্নাতুল ফিরদাউসে উচ্চ মাকাম দান করার জন্য মহান আল্লাহর নিকট দোয়া করা হয় এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবার-পরিজনের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেন।

শেয়ার করুন

GloboTroop Icon
পাঠকের মতামত

Meghna Roktoseba




এক ক্লিকে জেনে নিন বিভাগীয় খবর




© মেঘনা নিউজ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by ShafTech-IT