ধর্মান্তরিত হিন্দু নারী কি ফিরে পাবে স্ত্রীর মর্যাদা ? থানায় অভিযোগ দায়ের
সাখাওয়াত জামিল দোলন,চাঁপাইনবাবগঞ্জ শনিবার বিকেল ০৫:০০, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২০
চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলায় ধর্মান্তরিত অসহায় এক নারী সব কিছু হারিয়ে এখন প্রকৃত স্ত্রীর মর্যাদা পাবার আশায় দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সনাতন ধর্ম থেকে ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত ওই নারী হচ্ছেন জেলার নাচোল উপজেলার ভেরেন্ডী গ্রামের ফুলপতি বর্তমানে সাথী (২২)। আর নাচোল পৌর এলাকার কাটাপুকুর মহল্লার লোকমান আলি মুংলার ছেলে মিলন আলীর (২৮) সাথে চার বছর সংসার করার পর স্ত্রীর মর্যাদা পাবার জন্য বিচার পাবার আশায় ২৫ সেপ্টেম্বর শুক্রবার নাচোল থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন ভূক্তভোগী ওই নারী।
এ বিষয়ে অনুসন্ধান ও থানায় দায়ের করা অভিযোগ থেকে জানা যায়, পেশায় একজন ভুটভুটি চালক মিলন আলী ৪ বছর আগে নাচোল উপজেলার ভেরেন্ডী গ্রামের সনাতন ধর্মের জগদীশ চন্দ্রের স্ত্রী ফুলপতির সাথে অবৈধ প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে। আর সেই সম্পর্কের স্থায়ী ভিত্তি দিতে মিলন ফুলপতিকে ধর্মান্তরিত করে উপজেলার রাজবাড়ী এলাকার একজন মৌলভীর মাধ্যমে বিয়ে করে নাম রাখে মোসা. সাথী। কিন্তু মিলনের বাড়ি নাচোল পৌর এলাকায় হলেও নাচোল বাজারে একটি বাসা ভাড়া নিয়ে সংসার শুরু করে তারা। তবে স্ত্রী সাথী বিগত ৪ বছরে মিলনের মা-বাবার বিষয়ে বারবার জানতে চাইলেও মিলন এর কোন সদুত্তর না দিয়ে এড়িয়ে যায়।
এদিকে বিবাহিত জীবনের চার বছর পর চলতি বছরের ২৭ জুলাই সোমবার মিলন আলী নাচোল উপজেলার কসবা ইউনিয়নের বেলপুকুর গ্রামের আকতারুল ইসলামের মেয়ে আক্তারা খাতুনকে কাজীর মাধ্যমে বিয়ে করে এবং ঠিক তখন থেকেই প্রথম স্ত্রী সনাতন ধর্ম থেকে ধর্মান্তরিত সাথীকে এড়িয়ে চলতে শুরু করে। সাথীর সাথে শুরু হয় দ্বন্দ। আর তাই স্ত্রীর অধিকার ফিরে পাবার আশায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন মিলনকে খোঁজাখুঁজির এক পর্যায়ে একদিন নাচোল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে পেলে সেখানেই দুইজনের হট্টগোল শুরু হয়। পরে খবর পেয়ে নাচোল থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে উভয়কেই থানায় ধরে নিয়ে যায়। এ সময় সাথী বিয়ের প্রমাণপত্র দেখাতে না পারায় ২৯০ ধারায় তাদেরকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়।
পরে ছাড়া পেয়ে স্বামী মিলনের কাছ থেকে স্ত্রীর স্বীকৃতি পাবার আশায় চলতি বছরের ১৪ আগস্ট শুক্রবার মিলনের বাবার কাটাপুকুরের বাড়িতে সাথী উপস্থিত হলে পরিবারের সদস্যরা তাকে বেধড়ক মারধর করে তাড়িয়ে দেয় এবং এতে মারাত্মক আহত সাথী ওই দিনই নাচোল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা গ্রহণ করে।
এদিকে এ সকল বিষয়ে মিলন আলীর পিতা লোকমান আলি মুংলার সাথ সরাসরি যোগাযোগ করা হলে তিনি ছেলের অপকর্মের কথা স্বীকার করে বলেন, মিলন একটি হিন্দু মেয়েকে বিয়ে করে নাচোল বাজার পাড়ায় থাকে এটা লোকমুখে শুনেছি। তার সাথে আমাদের কোন সম্পর্ক নেই। তবে তিনি সাথীকে মারধরের বিষয়টি অস্বীকার করেন।
আর এসব ঘটনার সত্যতা জানতে পলাতক মিলনের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি সব কিছু অস্বীকার করে বলেন, সাথী বলে আমি কাওকে চিনিনা এবং তার সাথে আমার কোন সম্পর্কও নাই।
এদিকে থানায় অভিযোগ দায়েরের বিষয়ে নাচোল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সেলিম রেজা জানান, স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক বিষয়ে একটি অভিযোগ পাওয়া গেছে। তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।