দীর্ঘদীন পর একদল তরুনের সহযোগিতায় শ্রীমঙ্গলের লাউয়াছড়া বন থেকে মানসিক ভারসাম্যহীন ছেলেকে ফিরে পেলেন ময়মনসিংহের খোরশেদ
মোঃ জাকির হোসেনঃমৌলভীবাজার রবিবার সন্ধ্যা ০৬:১২, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২০
মানসীক ভারসাম্যহীন শরিফের পরিবারের দাবী দীর্ঘ প্রায় দুই বছর যাবত বাড়ি থেকে নিখোঁজ শরীফ তার পরিবার ও আত্মীয় স্বজনরা খোঁজ না পেয়ে একরকম তার আশা ছেড়েই দিয়েছিলো কিন্তু মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের লাউয়াছড়া বন থেকে মানসিক ভারসাম্যহীন তরুন শরীফ আলীকে উদভ্রান্ত অবস্থায় উদ্ধার করে শ্রীমঙ্গলের একদল তরুন। শুধু কি তাই, ফেসবুকে ছেলেটির পরিচয় চেয়ে তারা প্রচারণা চালায় এর সূত্র ধরে পাওয়া যায় তাঁর পরিচয়। চুল কাটিয়ে, গোসল করিয়ে, শনিবার তাঁকে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
সেই মুহুর্তে সৃষ্টি হয় পিতা পুত্রের এক আবেগ ঘন পরিবেশ এই হৃদয় বিদারক দৃশ্য দেখে নাড়া দেয় উপস্থিত সবার হৃদয়, তখন তার জন্মদাতা পিতা হাসিমুখে গ্রহণ করেন পুত্রকে। ঠিক এভাবেই জঙ্গল থেকে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিয়েছে শ্রীমঙ্গলের তরুন উদীয়মান এই সমাজকর্মীরা। মানসিক ভারসাম্যহীন শরীফের বাড়ি ময়মনসিংহ জেলার তারাকান্দা থানার পংদারীকেল গ্রামে। তার পিতা খোরশেদ আলী স্থানীয় একটি স্কুলের নৈশ প্রহরী।
এর আগে ২৪ সেপ্টেম্বর তাকে লাউয়াছড়া বন থেকে উদ্ধার করে চুল দাঁড়ি কেটে, গোছল করিয়ে নতুন পোশাক পরিধান করানোর , পরে তাকে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে শ্রীমঙ্গল রেলওয়ে স্টেশনে এনে রেখে খাবারের ব্যবস্তা করে দেওয়াসহ তাকে ২৪ ঘন্টা দেখেশুনে রাখেন এই তরুনরা এবং ছেলেটির ঠিকানা জানতে তারা ফেসবুকে ব্যাপক প্রচারণা চালায়। অবশেষে ফেসবুকের মাধ্যমে তার পরিবারের লোকজন খবর পেয়ে যোগাযোগ করে শ্রীমঙ্গলে আসেন তার পিতা।
শনিবার সকালে (২৬ সেপ্টেম্বর) শ্রীমঙ্গল উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গনে আনুষ্ঠানিকভাবে এই মানসিক ভারসাম্যহীন শরীফ কে তার পিতা খোরশেদ আলীর কাছে তুলে দেওয়া হয়। এসময় উপস্থিত ছিলেন শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম, অঙ্গীকার সামাজিক ও সাহিত্য পরিষদের সভাপতি শেখ সরোয়ার জাহান জুয়েল, ‘আমরা স্বেচ্ছায় রক্ত দেই’ নামের সামাজিক সংগঠনের সভাপতি মো. ইমু ও সাধারণ সম্পাদক আজিজুর রহমান নাঈম।
অঙ্গীকার সামাজিক ও সাহিত্য পরিষদের সভাপতি শেখ সরোয়ার জাহান জুয়েল বলেন, গত ২১ সেপ্টেম্বর শ্রীমঙ্গল ক্যাবল সিস্টেমের ভাইস চেয়ারম্যান পার্থ সারথী রায় ফেসবুকে লাউয়াছড়া বনে অজ্ঞাত পরিচয় একজন মানসিক ও শারিরীকভাবে অসুস্থ লোককে সহযোগিতার জন্য একটি পোষ্ট দেন। সেটি শ্রীমঙ্গলের তরুন সমাজ কর্মীদের নজরে আসে। আমি তখনই স্বেচ্ছাসেবক নাঈম, আকাশসহ অন্যান্যদের সাথে যোগাযোগ করি। সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নেই লোকটির জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে যাতে তাকে সমাজে ফিরিয়ে দেওয়া যায়। আমরা মানসিক ভারসাম্যহীনতার জন্য চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়ারও প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম।
আমরা শনিবার শরীফকে তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করি ও তার চিকিৎসার জন্য নগদ কিছু অর্থ দেই এবং মানসিক চিকিৎসার ব্যাপারে পরিবারকে অবহিত করি, এমনকি মানসিক চিকিৎসার ব্যাপারে সমাজের যেকোন অমূলক কথা কে কারো পাত্তা না দিয়ে তার পুত্রকে সর্ম্পুণ সুস্থ্য করে তোলার জন্য পিতাকে প্রেরণা দেই। তিনিও এ ব্যাপারে নিজের ইতিবাচকতার কথা জানান এবং শ্রীমঙ্গলবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।