চাঁপাইনবাবগঞ্জে ডিবির অভিযানে নিহত সানাউলের মৃত্যুর ঘটনায় র্যাবকে তদন্তের নির্দেশ আদালতের
এস এম সাখাওয়াত জামিল দোলন,চাঁপাইনবাবগঞ্জ মঙ্গলবার সন্ধ্যা ০৭:১৮, ৪ মে, ২০২১
চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাট উপজেলায় জেলা গোয়েন্দা শাখা ডিবি পুলিশ হেফাজতে নির্যাতনে এক ব্যক্তির মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এ নিয়ে স্থানীয় ও জাতীয় পত্রিকা সমূহে এমনকি স্যাটেলাইট চ্যানেলে সংবাদ প্রকাশ ও প্রচারের পর এই ঘটনার প্রকৃত রহস্য উদঘাটনে র্যাবকে নিরপেক্ষ তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। ভোলাহাট আমলি আদালতের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আবু কাহার রোববার এ সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা জারি করলেও সোমবার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।
নির্দেশনায় কয়েকটি গণমাধ্যমের সংবাদের বরাত দিয়ে আদালত উল্লেখ করেন, যেহেতু ব্যাপকভাবে প্রচারিত ও প্রকাশিত”ডিবির হেফাজতে নির্যাতনে সানাউলের মৃত্যু” সংবাদটি আদালতের গোচরীভূত হয়েছে সেহেতু সার্বিক বিবেচনায় বিষয়টি তদন্ত করার জন্য কোম্পানি অধিনায়ক সিপিসি-১ (চাঁপাইনবাবগঞ্জ) র্যাব-৫ রাজশাহীকে নির্দেশ প্রদাণ করা হলো এবং আগামী ৯ মে তারিখের মধ্যে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য বলা হলো।
এ সময় নির্দেশনায় আদালত পর্যবেক্ষণে বলেন, সংবাদগুলো ব্যাপকভাবে বিশ্লেষণ করে প্রতীয়মান হয়েছে যে সানাউল হক বিশ্বাস নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। আর তার পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে পুলিশের অমানবিক নির্যাতনে মারা গেছে সানাউল। এছাড়া নির্যাতনের সময় সানাউল পানি পান করতে চাইলেও তা দেয়নি পুলিশ। পত্রিকার রিপোর্ট বিশ্লেষণে আরও দেখা যায়, আটকের পর তাকে ব্যাপক নির্যাতন করা হয়।
আদালত আরো বলেন, পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণে জানা যায় সানাউলকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ আধুনিক সদর হাসপাতালে নেয়া হলে লাশের হাঁটুসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাতের চিহ্ন দেখা যায় বলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন চিকিৎসক জানান। এরূপ কার্যক্রম বাংলাদেশ সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৩৫ (৫) সুস্পষ্ট লংঘন এবং প্রচলিত আইন ও মানবতাবিরোধী। এ অপরাধ ১৮৯৮ এর ১৯০(১)(ঈ) ধারা অনুযায়ী আমলে গ্রহণ করে র্যাবকে তা তদন্তের নির্দেশ দেয়া হলো।
এ বিষয়ে র্যাব-৫ চাঁপাইনবাবগঞ্জ কোম্পানি অধিনায়ক মেজর সাকিব আদালতের নির্দেশনা প্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, আদালতের নির্দেশনা পেলে তো আমাদের কাজ করতেই হবে। ইতোমধ্যে আমরা তদন্তের কাজ শুরু করেছি। তদন্ত সম্পন্ন হলে নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতিবেদন আদালতে জমা দেব। তিনি জানান, এ বিষয়ে আমরা কোনো প্রেয়ার দিইনি। আদালত নিজ থেকেই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
তবে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহবুব আলম খান এসব অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, মাদক মামলার পলাতক আসামী সানাউল পালিয়ে যাবার সময় পড়ে গিয়ে পায়ে ও বুকে আঘাত পেলে তার চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেয়ার পর হৃদযন্ত্রের ক্রিড়া বন্ধ হয়ে মারা যান সানাউল।
উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার রাতে ভোলাহাটে গোয়েন্দা পুলিশের নির্যাতনে সানাউল হক বিশ্বাস নামে এক ব্যক্তির মৃত্যুর অভিযোগ করে তার পরিবার। নিহত সানাউল ভোলাহাট উপজেলার চাঁনশিকারী গ্রামের মৃত মুর্শেদ বিশ্বাসের ছেলে। পরিবারের অভিযোগ, পুলিশের অমানবিক নির্যাতনে মারা গেছে সানাউল।
পরিবার আরও অভিযোগ করে, নির্যাতনের পর সানাউল বারবার পানি পান করতে চাইলেও পুলিশ তা দেয়নি। এছাড়া ডিবি পুলিশরা মাঝে মধ্যেই তার কাছে টাকা চাইত। তাকে ধরার পরও ১০ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবী করে। এক পর্যায়ে ২ লক্ষ টাকা দাবি করে এবং তা দিতে অস্বীকার করায় এ নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়েছেন সানাউল। সে মাদক ব্যবসায়ী না, তবে মাদকসেবি ছিল।