ঢাকা (রাত ১০:০৯) বুধবার, ২৪শে এপ্রিল, ২০২৪ ইং

চাঁপাইনবাবগঞ্জে আইপিআরএস পদ্ধতিতে উৎপাদিত মাছ রপ্তানীতে আশাবাদী মৎস্য চাষী আকবর

<script>” title=”<script>


<script>

মো. আকবর হোসেন। একজন অটো রাইস মিল মালিক। রাইস মিল মালিক হলেও মাছ চাষে ব্যাপক সফলতা অর্জণ করেছেন তিনি। আর মৎস্যখাতে বিশেষ অবদান রাখার জন্য ২০১৭ সালে জাতীয় পুরস্কারে পুরস্কৃতও হয়েছিলেন। এরই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি চীনা প্রযুক্তির ইন পন্ড রেসওয়ে সিস্টেম-আইপিআরএস হাইটেক এগ্রিকালচার পদ্ধতিতে শুরু করেছেন মাছ চাষ। যা বাংলাদেশে প্রথম এবং উপমহাদেশের সর্ববৃহৎ বলে দাবী করেছেন এর সাথে সংশ্লিষ্টরা। আর এই পদ্ধতিতে উৎপাদিত মাছ বাংলাদেশের চাহিদা মিটিয়ে ইউরোপের বাজারে রপ্তানীতে আশাবাদী মৎস্য চাষী আকবর হোসেন।

জানা গেছে, প্রায় তিন মাস পূর্বে আলহাজ্ব এত্তাজ হোসেনের পুত্র নবাব গ্রুপের স্বত্বাধিকারী মো. আকবর হোসেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের উপকন্ঠ নয়াগোলা বুলনপুর এলাকায় তার নিজস্ব জমিতে আইপিআরএস পদ্ধতিতে শুরু করেন মাছ চাষ। চীনের প্রযুক্তিগত সহযোগিতায় ৬০ বিঘা আয়তনের জলাশয়ে মাছ চাষের সর্বাধুনিক আইপিআরএস চাষ পদ্ধতি প্রয়োগ করেছেন তিনি। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে বর্তমানে ১৩টি ইউনিট বা চ্যানেলের মাধ্যমে চলছে মাছ চাষ। প্রতি চ্যানেলে চাষ করা হচ্ছে সাড়ে ১২ হাজার থেকে ১৮ হাজার পিস রুই, কাতলা, গ্রাসকাপ, পাবদা, পাঙ্গাস, মনোসেক্স তেলাপিয়া ও মিনার কাপ মাছ।

এ বিষয়ে নবাব ফিস ফার্ম প্রজেক্টের মালিক আকবর হোসেন জানান, ২০১৯ সালের শুরুতে চীনের কারিগরি বিশেষজ্ঞ দল চাঁপাইনবাবগঞ্জে এসে প্রকল্পের সিভিল কাজের ডিজাইন করে দিয়ে যান। এরপর স্থানীয় প্রকৌশলীদের নিবিড় তত্ত¡াবধানে অনাবাদি এই জমিতে আইপিআরএস পদ্ধতিতে আরসিসি অবকাঠামো নির্মাণ করে নদীর মতো বৃত্তাকার চ্যানেলে রুপান্তর করা হয়। কিন্তু সব কাজ শেষ হলেও বিশ্বব্যাপি প্রাণঘাতি করোনা ভাইরাস পরিস্থিতির কারণে চীন থেকে যন্ত্রপাতি আসতে সময় লেগে যায়। অবশেষে জুন মাসে এগুলো আসার পর তা স্থাপন করা হয়। আর আগে থেকেই এই স্থানে মাছ চাষের আওতায় ৪২টি বড় পুকুর থাকলেও এই প্রথমবারের মতো ৬০ বিঘার মৎস্য খামারটি আইপিআরএস পদ্ধতির আওতায় আনা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এই পদ্ধতির আওতায় আরো এলাকা সম্প্রসারণ করা হবে বলেও জানান মৎস্যজীবী আকবর। আর তাই চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলাবাসীতো বটেই দেশে মাছের চাহিদা পূরণ করে অবশিস্ট মাছ ইউরোপে রপ্তানি করার ব্যাপারে আশাবাদী তিনি। আর এই মাছ রপ্তানীর ব্যাপারে ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্টদের সাথে আলাপ চলমান রেখেছেন তিনি। এ খামারটি দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ ও অত্যাধুনিক হওয়ায় অনেক দর্শনার্থী, মৎস্যচাষি, মৎস্য বিজ্ঞানীরা পরিদর্শণে আসছেন।

এ বিষয়ে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ড. আমিমুল এহসান জানান, নবাব গ্রুপের স্বত্ত¡াধিকারী আকবর হোসেন বেশ কয়েক বছর ধরেই নীরবে নিভৃতে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে মাছ চাষ করে আসছেন। তার মাছ চাষের আওতায় ৪২টি পুকুর থাকলেও এই প্রথম চীনা প্রযুক্তি ব্যবহার করে দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ আইপিআরএস অ্যাকুয়াকালচার পদ্ধতির সর্বাধুনিক হাইটেক মৎস্য চাষ খামার পরীক্ষামূলকভাবে চালু করেছেন। এই পদ্ধতিতে চ্যানেল ভর্তি পানিতে যান্ত্রিক উপায়ে স্রোত তৈরি করা হয়। এতে একদিকে মাছের ব্যায়াম হয়। অন্যদিকে মাছের খাদ্য চাহিদা বৃদ্ধি পায়। এছাড়া যান্ত্রিক উপায়ে চ্যানেলে চাষকৃত মাছের যাবতীয় বর্জ্য অপসারণের ব্যবস্থা থাকায় ক্ষতিকর অ্যামোনিয়া গ্যাস মুক্ত থাকে চ্যানেল। এতে করে রোগব্যাধি মুক্ত বড় মাছ উৎপাদন সম্ভব। আর কৃত্রিম উপায়ে পানিতে অক্সিজেন মিশ্রণের ব্যবস্থা থাকায় বেশি ঘনত্বে মাছ চাষ করা যায়। ফলে এখানে উৎপাদিত মাছের স্বাদ নদীর মাছের মতই হবে। আশা করা যায় যে অত্যন্ত হাই প্রোটিনযুক্ত খাদ্য খাওয়ানোর ফলে প্রতি ৩ মাসে একবার হারভেস্ট করা সম্ভব হবে।

তিনি আরো জানান, এই ধরণের আইপিআরএস প্রকল্প ভারতে ৩টি আর পাকিস্থানে ৪টি থাকলেও বাংলাদেশের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলাতে অবস্থিত নবাব মৎস্য খামার আয়তনে সর্ববৃহৎ। মৎস্য খামারটিতে আমার নেতৃত্বে ফিসারিজে ডিগ্রী অর্জণকারী একজন কর্মকর্তাসহ ১২ জন টেকনিশিয়ান কাজ করছেন। এক কথায় মুজিব বর্ষ উপলক্ষ্যে চালুকৃত এই নবাব মৎস্য খামারকে বরেন্দ্র অঞ্চলের মাছ চাষের বিপ্লব বলা যায়। তবে এমন প্রকল্প আর কেউ করতে চাইলে তাকেও সর্বাত্মক সহায়তা করা হবে বলে জানালেন মৎস্য কর্মকর্তা।

আর বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এ প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে দেশের ফসলি জমি অহেতুক ব্যবহার হবেনা। সাথে সাথে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার মানুষের কর্মসংস্থান তৈরী হবে। ফলে কমে আসবে বেকারত্ব। আর দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানীর সুযোগ তৈরী হলে সরকার পাবেন বৈদেশিক রাজস্ব।

 

শেয়ার করুন

GloboTroop Icon
পাঠকের মতামত

Meghna Roktoseba




এক ক্লিকে জেনে নিন বিভাগীয় খবর




© মেঘনা নিউজ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by ShafTech-IT