গোমস্তাপুরে গরু ডাকাতির ঘটনায় ৬ পুলিশ সদস্য ক্লোজড
এস এম সাখাওয়াত জামিল দোলন,চাঁপাইনবাবগঞ্জ রবিবার দুপুর ০৩:০৫, ৫ ডিসেম্বর, ২০২১
চাঁপাইনবাবগঞ্জে একটি গরুর খামারে পুলিশ পরিচয়ে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। এ সময় ডাকাতরা অস্ত্রের মুখে খামার মালিক ও তার স্ত্রীকে বেঁধে রেখে খামার থেকে ১৫টি গরু নিয়ে যায়। এ ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে ৬ পুলিশ সদস্যকে গোমস্তাপুর থানার দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইন্সে ক্লোজড করা হয়েছে।
শুক্রবার দিবাগত গভীর রাত দেড়টার দিকে শনিবার গোমস্তাপুর উপজেলার পার্বতীপুর ইউনিয়নের জিনারপুর-গড়বাড়ি গ্রামে এ ডাকাতির ঘটনা ঘটে। আর দায়িত্বে অবহেলার কারনে ৬ পুলিশ সদস্যকে গোমস্তাপুর থানা থেকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইন্সে ক্লোজড করার বিষয়টি রোববার নিশ্চিত করেছেন গোমস্তাপুর থানার অফিসার-ইন-চার্জ (ওসি) দিলীপ কুমার দাস।
ক্লোজড করা পুলিশ সদস্যদের মধ্যে গোমস্তাপুর থানার তিনজন কনস্টেবল, দুইজন সহকারী পুলিশ পরিদর্শক (এএসআই) ও একজন পুলিশ পরিদর্শক (এসআই) রয়েছেন।
গরুর মালিক ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, পুলিশ পরিচয় শুক্রবার দিবাগত গভীর রাত দেড়টার দিকে বাড়িতে মাদক আছে বলে আশরাফুলের বাড়িতে তল্লাশি শুরু করে ৫ জন লোক। এ সময় গরুর মালিক আশরাফুল ইসলাম ও তার স্ত্রীকে বেঁধে রেখে খামারের পেছন দিকের ধানক্ষেতে ফেলে রেখে গরু নিয়ে পালিয়ে যায় তারা। আশেপাশের লোকজন আশরাফুলের বাড়িতে আসার আগেই ১৫টি গরু নিয়ে পালিয়ে যায় পুলিশ পরিচয়ে ডাকাতের দল।
গরুর মালিক আশরাফুল ইসলাম জানান, শনিবার রাত দেড়টার দিকে স্ত্রীসহ আমি খামার লাগোয়া ঘরে ঘুমিয়ে ছিলাম। ওই সময় ৫ জন লোক খামারের বাঁশের বাতা কেটে ভেতরে ঢুকে আমাকে পুলিশের লোক বলে পরিচয় দিয়ে খামারে মাদক রয়েছে বলে তল্লাশি শুরু করে এবং গরুর দড়ি খুলতে শুরু করে। পরে আড্ডা-সাপাহার সড়কের জিনারপুর গড়বাড়ি কালভার্টের পাশে ধানের ক্ষেতে হাত ও পা বেঁধে আমাদের ফেলে রেখে ধানক্ষেত দিয়ে গরুগুলো নিয়ে চলে যায় তারা।
তিনি আরও বলেন, পরে কোন রকমে হাত-পায়ের বাঁধন খুলে চিৎকার করতে থাকলে আমার ভাই মিজানুর রহমান বাড়ি থেকে বের হয়ে এসে আমাদের উদ্ধার করে এবং তাৎক্ষণিক তার ছেলে শাহীনকে দিয়ে পুলিশে খবর দেয়। কিন্তু শাহিন ওই রাতে পুলিশের সাহায্য চেয়ে কয়েকবার যোগ্যতা করলেও পুলিশ তাৎক্ষনিক না এসে গোমস্তাপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) বদিউজ্জামান ঘটনাস্থলে সকাল ৭টায় আসেন।
আশরাফুল ইসলামের স্ত্রী বেলী বেগম জানান, আমাকে ও আমার স্বামীকে বেঁধে নিয়ে গিয়ে কিছু দূরে কালভার্টের নিচে ফেলে রাখে। এ সময় মুখে গামছা ও হাত-পা বেঁধে রাখে। চিৎকার করতে গেলে ব্যাপক কিল-ঘুষি মারে। আমাদেরকে বেঁধে রেখে খামারের ১৭টি গরু নিয়ে চলে যায়। পরে ২টি গরু বাড়িতে ছুটে পালিয়ে এসেছে।
স্থানীয় বাসিন্দা তুহিন খান জানান, তারা নিজেরাই হাত-পা ছুটিয়ে কাঁদতে কাঁদতে খামারের কাছে আসে। পরে ঘটনা শুনে পুলিশকে ফোন দেয়। কিন্তু পুলিশ সকালে আসে। ১৫টি গরুর আনুমানিক দাম ১৩ লক্ষ টাকা হতে পারে।
এদিকে শনিবার সকালে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহবুব আলম খান, সহকারী পুলিশ সুপার (গোমস্তাপুর সার্কেল) শামছুল আজম ও গোমস্তাপুর থানার অফিসার-ইন-চার্জ (ওসি) দিলীপ কুমার দাস ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
এ বিষয়ে গোমস্তাপুর থানার ওসি দিলীপ কুমার দাস জানান, খামারের পেছন দিয়ে বেড়া কেটে গরুগুলো নিয়ে গেছে। অভিযোগ পাওয়া গেছে। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আর এ বিষয়ে ৬ পুলিশ সদস্যকে পুলিশ লাইনে ক্লোজড করা হয়েছে।