করোনায়ও চলছে আদমদীঘির ব্যাচ-কোচিং-প্রাইভেট
মিরু হাসান বাপ্পী, বগুড়া শুক্রবার রাত ১০:১৮, ১০ জুলাই, ২০২০
করোনা মহামারির কারণে দেশে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ কোচিং ও প্রাইভেট পড়ানো বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অথচ বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলায় এই নির্দেশ অমান্য করে কিছু অর্থলোভী শিক্ষক প্রাইভেট বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন। এসব শিক্ষক তাঁদের বাসা অথবা ভাড়া করা কক্ষে ব্যাচ করে একসঙ্গে ৩০ থেকে ৩৫ জন শিক্ষার্থীকে গাদাগাদি করে বসিয়ে এ কার্যক্রম চালাচ্ছেন।
স্থানীয় ব্যক্তিরা এ নিয়ে প্রতিবাদ করলেও ওই শিক্ষকরা তা কানে তুলছেন না। স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলার সদর, সান্তাহার পৌরশহর, ছাতিয়ান গ্রাম, মুরইল, চাঁপাপুর, ছাতনীসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় সপ্তাহখানেক হলো অনেকটা প্রকাশ্যেই প্রাইভেট বাণিজ্য শুরু হয়েছে। আবার অনেক অর্থলোভী শিক্ষক তাঁদের শিক্ষার্থীদের স্কুলব্যাগ ও পোশাক ব্যবহার না করে চটের ব্যাগে পাঠ্য বই নিয়ে তাঁদের বাসায় প্রবেশ করিয়ে প্রধান দরজা বন্ধ করে পড়াচ্ছেন। নানা কৌশলে প্রশাসনের নজরদারি এড়িয়ে নির্ভয়ে তাঁরা প্রাইভেট বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করেন এমন কিছু শিক্ষকও প্রাইভেট বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত। প্রাইভেট ও কোচিং নিষিদ্ধ করার পর বেশ কিছুদিন তাঁরা পড়ানো বন্ধ রেখেছিলেন। কিন্তু সপ্তাহ দুয়েক হলো, আবারও তাঁরা আগের মতোই প্রায় প্রকাশ্যেই প্রাইভেট বাণিজ্য শুরু করেছেন। এদিকে উপজেলা সদর ও সান্তাহার পৌর এলাকায় প্রাইভেট পড়ানোর সুবিধার জন্য শিক্ষকরা ওই সব স্থানে বাসা ভাড়া নিয়েছেন। প্রত্যেকের বাসায় রয়েছে প্রাইভেট পড়ানোর জন্য বিশেষ কক্ষ। কক্ষগুলো বেশ ছোট হলেও সেখানে ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত বেঞ্চ ঢুকিয়ে তাতে গাদাগাদি করে শিক্ষার্থী বসানো হচ্ছে। এভাবে প্রতি ব্যাচে ৩০ থেকে ৩৫ জন বা তারও বেশি শিক্ষার্থীকে পড়ানো হচ্ছে।
এই উপজেলার ছাতনী এলাকার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বাসিন্দা বলেন, আমার বাড়ির কাছেই কয়েকজন শিক্ষক প্রাইভেট পড়াচ্ছেন। সকাল ৬টা থেকে ১০টা পর্যন্ত প্রতি ব্যাচে ২০ থেকে ২৫ জনকে ছোট কক্ষে বসিয়ে তাঁরা প্রাইভেট পড়াচ্ছেন। আমি এ ব্যাপারে প্রতিবাদ করলেও কোনো ফল হয়নি। উপজেলার কুন্দগ্রামের রফিকুল ইসলাম ও নশরতপুরের নাজমা বেগমসহ বেশ কয়েকজন অভিভাবক জানান, সন্তানদের প্রাইভেট পড়া দূরের কথা, বাইরেই বের হতে দিচ্ছেন না।
তাঁরা জানান, সকালে রাস্তায় বের হলে শিক্ষার্থীদের দল বেঁধে শিক্ষকদের বাড়িতে প্রাইভেট পড়তে যেতে দেখা যাচ্ছে। এভাবে চললে করোনা সংক্রমণ দ্রুত ছড়াবে। সান্তাহার পৌর এলাকায় প্রাইভেট পড়ান এমন এক শিক্ষক জানান, অভিভাবকদের চাপে তাঁর মতো কয়েকজন শিক্ষক প্রাইভেট পড়াচ্ছেন। প্রাইভেট পড়ানোর কক্ষে সামাজিক দূরত্ব বজায় থাকে বলে তিনি দাবি করেন।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে আদমদীঘি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এ কে এম আব্দুল্লাহ বিন রশিদ বলেন, করোনার মধ্যে সান্তাহারে একটি কোচিং সেন্টার খোলা রাখায় ইতিমধ্যে জরিমানা করা হয়েছে এবং বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যদি কেউ সরকারি নির্দেশ অমান্য করে পড়ান, তাহলে তাঁর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।