চাঁপাইনবাবগঞ্জে অস্তিত্ব সংকটে সৈয়দ পরিবার, হাড্ডাহাড্ডি লড়ায়ের শংকা
এস এম সাখাওয়াত সোমবার রাত ১১:৩৯, ২০ মে, ২০২৪
রাত পোহালেই ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। আর এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দুই প্রার্থীর জমজমাট লড়াইয়ের আভাস পাওয়া যাচ্ছে।
এদের মধ্যে একজন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম এবং অপরজন শিবগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য ও সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মহসিন আলী মিয়া।
সব মিলিয়ে এ নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে বলে মনে করছেন ভোটাররা।
আবার অনেকেই এই নির্বাচনকে সৈয়দ পরিবারের সম্মান ও অস্তিত্বের লড়াই হিসেবে দেখছেন। কেননা সৈয়দ পরিবারের আশীর্বাদে দলীয় পদ পাওয়া অনেককেই নির্বাচনী প্রচারণায় দেখা যায়নি। কারণ স্থানীয় সংসদ সদস্য, সাবেক মেয়রসহ উপজেলা আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল নেতারা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মহসিন মিয়ার পক্ষে মাঠে নেমেছেন।
জানা গেছে, এক বছর আগেও চাঁপাইনবাবগঞ্জের রাজনীতি ও প্রশাসনে শিবগঞ্জের সৈয়দ পরিবারের কথাই ছিল প্রথম এবং শেষ। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন ও পদ সবই পেয়েছেন সৈয়দ পরিবারের অনুসারীরা। কিন্তু ২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে রমজান চলাকালীন সময়ে যুবলীগ নেতা ও শিবগঞ্জ পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর খাইরুল আলম জেম হত্যাকান্ডের পর পরিস্থিতির নাটকীয় পরিবর্তন ঘটেছে। অনেকটা দৃশ্যপট থেকে ছিঁটকে পড়ে সৈয়দ পরিবার। কেননা চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করেও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পাননি সৈয়দ পরিবারের সন্তান নজরুল ইসলাম।
বিধায় অস্তিত্ব রক্ষার্থে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ শিবগঞ্জ আসনে ভোটের মাঠে ট্রাক প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন তিনি। নির্বাচনে হয়েছেন পরাজিত। কেননা ক্ষমতাধর স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে সৈয়দ নজরুল ইসলাম যেখানে ৭২ হাজার ৭০৯ ভোট পান, সেখানে আসনটিতে দলীয় মনোনয়ন পাওয়া নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ডা. সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল ৭ হাজার ১০৩ ভোট বেশি পেয়ে জয়ী হন। আর তাই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য হতে না পেরে পূনরায় চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন সৈয়দ নজরুল ইসলাম।
এলাকার অনেকে বলছেন, সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন না পাওয়া এবং স্বতন্ত্র নির্বাচন করে পরাজয়ের পর চাঁপাইনবাবগঞ্জের রাজনীতিতে সৈয়দ পরিবারের প্রভাব কমেছে। সৈয়দ নজরুল ইসলাম সংসদ নির্বাচনে ফেল করে বা হেরে গিয়ে আবার উপজেলায় প্রার্থী হয়েছেন। তবে সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মহসিন আলী মিয়ার সাথে ভোটে হেরে গেলে তার সম্মান ক্ষুন্ন হবে। তাদের রাজনৈতিক অস্তিত্ব সংকটে পড়বে।
এ বিষয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন, এটা নির্বাচন। জয় পরাজয়ের সাথে অস্তিত্বের প্রশ্ন নেই। তবে আমার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ প্রভাব বিস্তার করে নির্বাচনকে বিতর্কিত করার সব রকম চেষ্টা করছেন। নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গ করে বর্তমান সংসদ সদস্য, সাবেক সচিব, সাবেক মেয়র আমার প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থীকে প্রত্যক্ষভাবে মদত দিচ্ছেন। তারা স্ব শরীরে প্রচারণাও চালাচ্ছেন। প্রচারে নিজেকে দলীয় প্রার্থী হিসেবে দাবি করছেন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী। এমনকি চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ সদর আসনের এমপি আব্দুল ওদুদ প্রভাব খাটিয়ে রাণীহাটি ও নয়ালাভাঙ্গা ইউনিয়নে আমার কর্মীদের প্রচারে বাধা দিচ্ছে। এটা নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্গণের শামিল। তবে শিবগঞ্জে সৈয়দ বংশের যে অবদান তার মূল্যয়ন ভোটাররা করবে বলে জানান সৈয়দ নজরুল ইসলাম।
উল্লেখ্য, শিবগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ৪ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৪ জন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৩ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।