কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-৩ (সিরিজ-২):মিটার প্রতি ঘুষ ৫-২০ হাজার টাকা
মেঘনা নিউজ ডেস্ক শনিবার দুপুর ০৩:৩১, ৩ মার্চ, ২০১৮
এমএ কাশেম ভূঁইয়া-হোমনা, কুমিল্লা: ভিশন ২০২১ লক্ষ্যমাত্রা “শেখ হাসিনার উদ্যোগ, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ”। সরকারের এই স্লোগানকে পুঁজি করে উন্নয়ন সুনামকে দুর্ণামে পতিত করে কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-৩ এ চলছে দালাল-ইলেক্টি”শিয়ান ও ঠিকাদার সিন্ডিকেটে ব্যপক ঘুষ বাণিজ্য। সমিতির কর্তাব্যক্তিদের সহযোগিতায় গ্রাহকদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। ভূক্তভোগি গ্রাহকদের অভিযোগ আমলে না নিয়ে উল্টো দালাল শ্রেণীর সাথে সন্তষ্ট হয়ে অবৈধ ঘুষ বাণিজ্যকে বৈধতা দিচ্ছে সমিতির উর্ধ্বতণ কর্তাব্যক্তিরা। ফলে এক রকম বাধ্য হয়েই অসহায় গ্রাহকদেরকে গুণতে হচ্ছে মিটার সংযোগ প্রতি অতিরিক্ত ৫-২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। এসব অভিযোগের বিষয়ে ব্যপক সংবাদ প্রচার হলেও তদন্ত কমিটির নামে কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-৩ এর কর্মকর্তারা রহস্যজনক তা আলোর মুখ দেখাতে পারেন না।
সরজমিনে গিয়ে কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-৩ এর অধিনে হোমনা, মেঘনা, তিতাস, নারায়ণগঞ্জের গজারিয়া ও ব্রাহ্মনবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরের বিভিন্ন গ্রামে প্রতিটি গ্রাহকের সাথে কথা বলে এসব চিত্র ফুটে উঠে। গ্রাহকরা জানায়, নতুন সংযোগ পেতে স্থানীয় দালাল ও ইলেক্টি”শিয়ানকে ৫-২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত দিতে হয়। ওদের হাতে টাকা দিয়ে মাত্র ১৫-থেকে ১মাসের মধ্যে বিদ্যুৎ সংযোগ পাওয়া যায়। আর গ্রাহকরা নিজে আবেদন করলে মাসের পর মাসে সংযোগের জন্য অফিসের যাওয়া আসা করে চরম ভোগান্তির শিকার হতে হয়। অফিসের কর্তাদের পছন্দের দালাল-ঠিকাদার ও ইলেক্ট্রিশিয়ান ছাড়া অন্য কোন মাধ্যমেও গ্রাহকের কোন রকম নিস্তার নাই। প্রতিটি পদে পদেই অসহায় গ্রাহকদের সইতে হয় সীমাহিন দুর্ভোগ ও খারাপ আচরণ।
জানা যায়, গত ২০১৬ সালের মার্চের দিকে হোমনা উপজেলার ১নং মাথাভাংগা ইউনিয়নের মহিষমারী গ্রামের সোবহান মিয়ার ছেলে ছাদেক-মালেক-খালেক, আউয়াল মিয়ার ছেলে টিপু-উজ্জল-সজিব, আব্দু”স সুবহান মিয়ার ছেলে নুর আলম ও মেয়ে হাসিনাসহ প্রায় ১৭ জন গ্রাহক একজন সাংবাদিকের সহযোগিতায় কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-৩ এর জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) গৌরীপুর বরাবর আবেদন করেন। এরপর সমিতির আর,ই অফিসের স্টাইকিং ইঞ্জিঃ নিরাঞ্জন আবেদনকৃত লাইনটি পরিমাপ গেলেও দু’বছরেও লাইনটি নির্মান হয়নি। গ্রাাহকরা সীমাহিন দুর্ভোগ পেয়ে অবশেষে হোমনা জোনাল অফিসের একজন জুনিয়র ইঞ্জিয়ারের সহযোগিতায় জানতে পারে ওই ইঞ্জিনিয়ার লাইনটির জন্য কোন রকম প্রক্রিয়া করেন নাই গ্রাহকরা তার সাথে সমযোতা না করায়। পরে পুনরায় পূর্বের আবেদনটি সরাসরি জিএম বরাবর পাঠানো হলে লাইনটি দ্রুত করার জন্য আরই অফিসকে দায়িত্ব দেয়া হয়। অথচ এর আগেই স্থানীয় একজন ইলেট্রিশিয়ান ও দালালের সাথে আতাত করে লাইনটি পরিমাপ করেন স্টাইকিং ইঞ্জিঃ আরিফ হোসেন। তবে যে ক’জন গ্রাহক ওই দালাল ও ইলেক্ট্রিশিয়ানকে সন্তষ্ট করেছেন তারাই নতুন সংযোগের আওতায় এসেছেণ। গত ২০১৭ সালের নভেম্বরে লাইনটি নির্মান করতে আসলে বাকি গ্রাহকরা এই অভিযোগ করেন। অভিযোগের বিষয়ে কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-৩ এর গৌরীপুর অঞ্চলের জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) ইঞ্জিনিয়ার মোঃ রফিকুল ইসলাম বলেন, এখনতো শত ভাগের কাজ শেষ। নতুন করে আর কোন সংযোগ দেয়া যাবেনা । পরে কোন সুযোগ থাকলে ওই এলাকার লাইনগুলো করে দেয়া হবে।
তবে কুমিল্লা এক্সেন অফিসের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা বলেন, যেখানে একই গ্রামে ১২-১৭ জন গ্রাহক রয়েছে নতুন সংযোগ ছাড়া; সেখানে শতভাগ শেষ হয় কি করে?
একই চিত্র তিতাসের সাতানী ইউনিয়নের ২য় গোবিন্দুপুরে ও ৩নং বলরামপুর ইউনিয়নের উলুকান্দি গ্রামে। ২য় গোবিন্দপুরের আব্দুল মতিন মিয়ার ছেলে যুবলীগ নামধারী একাধিক মামলার আসামী মো. আশিক মিয়া ও উলুকান্দি গ্রামে মো. নুরু মিয়ার ছেলে মো. মনোয়ার হোসেন স্থানীয় ইলেক্টিশানদের সহযোগিতায় পল্লী বিদ্যুৎ ঠিকাদার নাসিম এর নাম বলে অর্ধশতাধিক গ্রাহকের নিকট থেকে ভয়ভীতি দেখিয়ে কয়েক লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় তবে ঠিকাদার নাসিম এ বিষয়ে কিছুই জানে না বলে সাংবাদিককে জানায়।
এছাড়াও তিতাসের মঙ্গলকান্দি মাদ্রাসার উত্তরপার্শে নয়াকান্দি নতুন রাস্তায়, খানেবাড়ি বেড়ীবাধ সংলগ্ন রাস্তায়, মেঘনার উপজেলার কাশিপুর, রাধানগর, মুগারচর, বাঞ্ছারামপুরের চরলহনিয়া, ভূরভুরিয়া, জুনারচর, খাককান্দা, হুগলাকান্দা, হোমনার আসাদপুর, চান্দেরচর, দুলালপুরের জগড়ারচর, ভাষানিয়ার কাজিরগাও শিবপুরসহ শত শত গ্রামে চলছে হরিলুট নৈরাজ্য।