সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংঘর্ষ !! তদন্ত কমিটি গঠিত
আবুল কাশেম রুমন শনিবার বিকেল ০৫:২২, ২৬ অক্টোবর, ২০২৪
বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) দিবাগত রাতে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদল ও এলাকাবাসীর সঙ্গে ছাত্রলীগ সমর্থক শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ নিয়ে বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছে।
শনিবার (২৬ অক্টোবর) বিকালে এক বিজ্ঞপ্তিতে কর্তৃপক্ষ জানায়- এটি রাষ্ট্রবিরোধী কাজ। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা যাতে সুষ্ঠু ভাবে না হয়- সে লক্ষ্যে একটি কুচক্রী মহল এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটিয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে সিকৃবি প্রশাসন বলে- কৃষি বিজ্ঞান বিষয়ে ডিগ্রি প্রদানকারী ৯টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ১ম বর্ষ (২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষ) স্নাতক (সম্মান)/স্নাতক শ্রেণির ভর্তি পরীক্ষা সুষ্ঠু ভাবে সম্পাদনের লক্ষ্যে সকল প্রকার প্রস্তুতি সম্পন্ন করে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (সিকৃবি) কর্তৃপক্ষ। এই পরীক্ষা নস্যাৎ করার লক্ষ্যে একটি কুচক্রী মহল পরিকল্পিত ভাবে আগের রাতে (বৃহস্পতিবার) বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে টানানো ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের সহায়তা-সংবলিত ব্যানার এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নির্দেশনা-সংবলিত ব্যানার ও ফেস্টুন ছিঁড়ে ফেলে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এমন রাষ্ট্রবিরোধী ঘৃণ্য ও নিন্দনীয় কর্মকান্ডের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে। এ ধরনের অনৈতিক কর্মকান্ডের সঙ্গে জড়িতরা বিশ্ববিদ্যালয় তথা বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ডকে বাধা গ্রস্ত করতে চায়। এই অবৈধ কাজের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। কমিটিকে ৭ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দানের নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তদন্ত প্রতিবেদন-সাপেক্ষে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বদ্ধপরিকর।
এর আগে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত পৌনে ১২টা থেকে দেড়টা পর্যন্ত সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদল ও এলাকাবাসীর সঙ্গে ছাত্রলীগের সমর্থক শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। বিশ্ববিদ্যালয় ফটকের সামনে ভর্তি– ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের স্বাগত জানিয়ে ছাত্রদলের সাঁটানো ব্যানার ছিঁড়ে ফেলার ঘটনার জের ধরে এ সংঘর্ষে সূত্রপাত হয়। পরে সেনাসদস্যরা এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
সংঘর্ষের ঘটনার জেরে পর দিন শুক্রবারের তারিখ দেখিয়ে গভীর রাতে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের কমিটি বাতিল করে কেন্দ্রীয় ছাত্রদল। কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের দপ্তর সম্পাদক মো. জাহাঙ্গীর আলম স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রদলের কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় বিলুপ্ত ঘোষণা করা হলো। শিগগির এ ইউনিটের নতুন কমিটি ঘোষণা করা হবে।
কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণার পর কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীনের অনুমোদনক্রমে আরও দুটি বিজ্ঞপ্তি সংগঠনের ফেসবুক পেজে প্রকাশ করেন দপ্তর সম্পাদক মো. জাহাঙ্গীর আলম। এর একটি বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সাবেক জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মো. সাহেদুল ইসলামকে (রোমেন) প্রাথমিক সদস্যপদ থেকে বহিষ্কার করা হলো। তাঁর সঙ্গে ছাত্রদলের সব পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের কোনো সাংগঠনিক সম্পর্ক না রাখার নির্দেশ দেওয়া হলো।
অপর বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়- সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে সংগঠিত অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার যথাযথ তদন্তের জন্য ছাত্রদল কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান ও প্রচার সম্পাদক শরীফ প্রধান ওরফে শুভর নেতৃত্বে দুই সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। রবিবারের মধ্যে এ কমিটিকে নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে লিখিত ভাবে তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সিলেট মহানগর ছাত্রদলের সভাপতি সুদীপ জ্যোতি এষ বলেন, সংঘর্ষের ঘটনায় একজনকে বহিষ্কারের পাশাপাশি দুই সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির সদস্যরা শনিবার সিলেটে এসেছেন। এ ছাড়া কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সর্বশেষ ২০১৭ সালে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের কমিটি হয়েছিল। তবে কমিটিতে থাকা শিক্ষার্থীরা এরই মধ্যে পাস করে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেরিয়ে যান। এরপর আর নতুন কমিটি গঠিত হয়নি। তবে কমিটি ছাড়াই বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা সক্রিয় ছিলেন।