শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রবেশদ্বার বন্ধ করে ইউপি চেয়ারম্যানের স্থাপনা নির্মাণ
এস এম সাখাওয়াত জামিল দোলন,চাঁপাইনবাবগঞ্জ বুধবার রাত ০৯:৫৮, ৩০ ডিসেম্বর, ২০২০
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা ইউনিয়নে অবস্থিত চক ঝগড়– স্কুল ও কলেজের প্রবেশদ্বার বন্ধ করে সেখানে ইট-বালু-রড-সিমেন্টের স্থায়ী স্থাপনা নির্মাণ কাজ করছেন ওই ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান মো. তরিকুল ইসলাম। ফলে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে প্রায় ২ লক্ষ টাকা ব্যয়ে নির্মিত শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ের প্রবেশ পথ।
এমন অভিযোগ করেছেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ এলাকাবাসী। তাদের অভিযোগ, পূনরায় বিদ্যালয়টির সভাপতি নির্বাচিত হতে না পেরে রাগে ক্ষোভে বিদ্যালয়ে প্রবেশের মূল ফটক বন্ধ করে কারো সাথে কোন পরামর্শ না করে জোড় পূর্বক এই স্থায়ী স্থাপনা নির্মাণ করছেন তিনি। এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বলেন, চেয়ারম্যান সাহেব স্কুলের সভাপতি থাকাকালীন সময়ে মূল গেইটটি নির্মাণ করে দিয়েছিলেন। কিন্তু এবার তিনি সভাপতি হতে না পেরে গেইট ভেঙ্গে দোকান ঘর তৈরি করেছেন। আর তিনি যেখানে গেইট তৈরি করে দিতে চাইছেন সেটি পিছনের দিক। এমনকি আগের গেইট বন্ধ করে দিলে বিদ্যালয়ের সৌন্দর্যও নষ্ট হবে। শুনেছি তিনি নাকি স্কুলের মাঠের প্রায় অর্ধেক অংশ দখল করতে চাইছেন। এর ফলে বিদ্যালয়ের খেলার মাঠও বন্ধের উপক্রম। আর তাই এর তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে আমরা চাই আগের গেইটটাই থাকুক। চেয়ারম্যান তার প্রভাব খাটিয়ে অত্যাচার করছে বলেও জানায় তারা।
বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দৌলত আলী বলেন, প্রতিষ্ঠার শুরুতেই বিদ্যালয়ের অধিকাংশ সম্পত্তিই চেয়ারম্যানের ভাই ও বাবা দান করেছেন এলাকার ছেলে মেয়েদের সুশিক্ষায় প্রতিষ্ঠ হবার জন্য। স্বাধীনতার পর থেকে অদ্যাবধি হাজার হাজার শিক্ষার্থী এই বিদ্যালয় থেকে শিক্ষা গ্রহণ শেষে বড়বড় স্থানে আসীন হয়েছে। বছর খানেক আগেও চেয়ারম্যান চক ঝগড়ু স্কুল অ্যান্ড কলেজের সভাপতি ছিলেন। সে সময় তিনি নিজেই ইউনিয়ন পরিষদের অর্থায়নে সুদর্শণ গেইটটি নির্মাণ করে দিয়েছিলেন। কিন্তু এবার তিনি সভাপতি হতে না পেরে এমন গর্হিত কাজ করেছেন। এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের একজন সাবেক সভাপতি বলেন, সরকারি অর্থ ব্যয় করে গেইট নির্মাণ করার পর আবারো তা ভেঙ্গে ফেলেছেন বালিয়াডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান তরিকুল ইসলাম। এলাকাবাসীর এতো এতো অনুরোধ না শুনে আর নিজে সভাপতি হতে না পেরে তিনি এসব করছেন। তবে এ বিষয়ে চকঝগড়ু স্কুল অ্যান্ড কলেজের বর্তমান সভাপতি আমিনুল ইসলাম মতির কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
এলাকাবাসীর পক্ষে থানায় চক ঝগড়– গ্রামের অভিযোগকারী আব্দুল মালেক বলেন, হঠাৎ করেই চেয়ারম্যান তরিকুল ইসলাম দাবি করছেন স্কুলের মূল ফটকের জায়গাটিসহ বিদ্যালয়ের মাঠের ভেতরের আরো কিছু জায়গা তার নিজের। তিনি আরো দাবী করেন নাবালক থাকাকালীন তার বড় ভাই এই জমি দান করলেও তিনি এর কিছুই জানেন না ও মানেন না। কিন্তু তার জায়গা হলে এতোদিন তিনি কি করছিলেন? আর তার এই অবৈধ কাজে কেউ বাধা দিতে গেলে প্রকাশ্যে মামলা ও হামলার হুমকি দিয়েছেন চেয়ারম্যান। এই এলাকায় তিনি সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছেন। এমনকি চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ সদর আসনের সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ হারুনের সুপারিশকৃত অভিযোগপত্রে ইউপি চেয়ারম্যান তরিকুল ইসলাম এলাকাবাসীর কথা না শুনে জোরপূর্বক দোকানঘর নির্মান করছেন বলে উল্লেখ করা হয়। আর কেউ বাধা দিতে গেলেই ভয়-ভীতি দেখাচ্ছেন আওয়ামলীগ সমর্থিত চেয়ারম্যান তরিকুল।
তবে সকল অভিযোগ অস্বীকার করে জমিটি নিস্কন্টক ও নিজের পৈত্রিক সম্পত্তি দাবি করে ইউপি চেয়ারম্যান তরিকুল ইসলাম বলেন, আমি আমার জায়গায় দোকান ঘর নির্মাণ করতে গেলে এলাকার চিহ্নিত জামায়াত শিবির কর্মীরা এলাকাবাসীকে উস্কিয়ে আমার কাজকে বাধাগ্রস্থ করেছে। আমার বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছে। ফলে আমি কাজ বন্ধ রেখেছি। কিন্তু গত ২৮ ডিসেম্বর সোমবার থানার তদন্ত কমিটি উভয় পক্ষকে নিয়ে বসার কথা থাকলেও বিপক্ষের কেও হাজির হয়নি।
প্রকৃতপক্ষে আগামী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে ও আমার ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করতে একটি কুচক্রি মহল আমার বিরুদ্ধে এসব ষড়যন্ত্র করছে ও আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ রটাচ্ছে। আর জামায়াত-শিবির কর্মীরা এসব বিরোধিতা করছে বলে দাবি করেন তিনি।