ঢাকা (রাত ২:৪৭) শুক্রবার, ১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ ইং

লালমনিরহাটে শীতকালীন সব্জির বাম্পার ফলন, দাম না থাকায় হতাশায় কৃষক

লালমনিরহাটে শীতকালীন সব্জির বাম্পার ফলন, দাম না থাকায় হতাশায় কৃষক

<script>” title=”<script>


<script>

ঈশাত জামান মুন্না, লালমনিরহাট প্রতিনিধি: কৃষকের কষ্টের ঘাম ঝড়ানো পরিশ্রমের ফসলের দাম না থাকায় হতাশায় পড়েছেন কৃষক, সীমান্তবর্তী জেলা লালমনিরহাটে এবার শীতকালীন সব্জির বাম্পার ফলন হয়েছে কিন্তু কৃষক তার পরিশ্রমের ন্যয্য মুল্য পাচ্ছেনা।
শীতকালীন সব্জির মধ্যে সবচেয়ে বেশি উৎপাদিত হয়েছে বেগুন।
কৃষকের ঘামঝড়া পরিশ্রমে উৎপাদিত বেগুনের গুন ও কমে গেছে।ফলে লাভের আশা তো দূরে খরচের টাকা উঠবে কি না সেটা নিয়েও চিন্তিত ফলে কৃষকের মুখে নেই খুশির ভাব।টানা খরার কবলে বৃষ্টির অভাবে ফলনও হয়েছে অনান্য বারের তুলনায় কম।কষ্টে খরচের টাকা উঠলেও লাভের আশা করতে পারছেনা কৃষক।গত বছর অসময়ে বন্যা হওয়ার কারনে সবজি নষ্ট হওয়ায় সারা দেশে বেগুনের বেশ চাহিদা ছিল।ব্যপক চাহিদা থাকার কারনে ব্যপক লাভ হয়েছিল কৃষকের।কিন্তু এ বছর বেগুনের বাম্পার ফলন হওয়ায় বেগুন দিয়ে বাজার ভরপুর হয়ে গেছে চাহিদাও সেই কারনে কম।ফলে দামকম পাচ্ছেন বেগুনচাষীগন।
লালমনিরহাটে শীতকালীন সব্জির বাম্পার ফলন, দাম না থাকায় হতাশায় কৃষকবেগুন চাষীরা জানান, বন্যাকালীন সময়ে বাজারে বেগুনের ব্যপক চাহিদা থাকায় সবজির চাহিদা পুরনের জন্য জুন- আগষ্ট মাসে আষাঢ়ি বেগুন রোপন করেন লালমনিরহাট জেলার উচু এলাকার সবজি চাষিরা।সেপ্টেমবারের শেষের দিকে বাজারে বেগুন উঠতে শুরু করে।কিন্তু এ বছরে বন্যা না হওয়ায় অনান্য সবজি দিয়ে বাজার ভরে থাকায় বেগুনের চাহিদা কমে গেছে।তাই কমে গেছে দাম।
গত বছর অক্টোবর মাসে প্রতিমণ বেগুন বিক্রি হয়েছিল দেড় হাজার টাকা দামে। এ বছর বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৪ শত টাকা মণ দরে। দিন যতই যাবে অন্যান্য শীতকালিন সবজি এলে আরো কমে যাবে বেগুনের গুণ। ফলে উৎপাদন খরচ নিয়ে দুঃচিন্তায় বেগুন চাষিরা।
জেলার সবজি চাষ খ্যাত আদিতমারী উপজেলার কমলাবাড়ি গ্রামের রফিকুল ইসলাম মাষ্টার গত বছর তিন দোন (২৭ শতাংশে এক দোন) জমিতে বেগুন চাষ করে দেড়/দুই লাখ টাকা আয় করেছেন। এ বছরও ওই জমিতে ৬০ হাজার টাকা খরচ করে বেগুন চাষ করেছেন। এ বছর বৃষ্টি না থাকায় সেচ খরচ ও কীটনাশক খরচ বেড়ে গেলেও উৎপাদন কম হয়েছে। কমে গেছে বেগুনের বাজার মুল্য। গত বছর প্রতিমণ বেগুন দেড় হাজার টাকা দরে বিক্রি হলেও এ বছর বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৪ শত টাকা দরে। চারদিন পরপর তুলে বেগুন পাচ্ছেন ১২/১৪ মণ। যার শ্রমিক ও কীটনাশক খরচ যায় তিন হাজার টাকা। একবার বেগুন তুললে পরদিন দুই হাজার টাকায় কীটনাশক স্প্রে করতে হচ্ছে। একদিন বেগুন তুলতে শ্রমিক খরচ পড়ছে দেড় হাজার টাকা। সব মিলে উৎপাদন খরচ নিয়ে চিন্তিত চাষি  রফিকুল ইসলাম।
ওই গ্রামের ইদ্রীস মিয়া ৫৪ শতিংশ জমি থেকে লক্ষাধিক টাকা আয় করেছেন। তাই এ বছরও ওই জমিতে ৪০ হাজার টাকা খরচ করে বেগুন চাষ করেছেন। এখনও সপ্তাহে প্রায় দুই দিন স্প্রে করছেন আড়াই হাজার টাকা খরচে। আর প্রতি সপ্তাহে দুই কিস্তিতে বেগুন পাচ্ছেন মাত্র ১৬/১৮ মণ। যার বাজার মুল্য প্রায় ৫ হাজার টাকা। খরচ উঠলেও লাভের খাতা শুন্য হওয়ার আশংকা তার। তিনি বলেন, গত বছর দাম ভাল থাকায় ভালই মুনাফা হয়েছে। এ বছর দাম নেই। তাছাড়া দিন যত যাবে শীতকালিন সবজিতে ভরবে বাজার তখন বেগুনের গুণ আরো কমে যাবে। তাই খরচ তোলে নিয়ে শ্বংসয় তার।
শুধু আদিতমারীর কমলাবাড়ি নয়, সারপুকুর, ভেলাবাড়ি, দুর্গাপুর, সাপ্টিবাড়ি, সদর উপজেলার বড়বাড়ি, হারাটি, মহেন্দ্রনগর, মোগলহাট, হাতীবান্ধার ভেলাগুড়ি, গোতামারী, সিংগিমারী, কালীগঞ্জের তুষভান্ডার, চন্দ্রপুর, চলবলা প্রভুতি এলাকায় ব্যাপক হারে চাষ হয় বেগুনসহ বিভিন্ন জাতের সবজি।
এসব চাষিদের উৎপাদিত বেগুন প্রতিদিন ট্রাক ভরে চলে ঢাকা, কুমিল্লাসহ সারা দেশে। এ সময় মৌসুমি সবজি ব্যবসায়ীদেরও আয়ের পথ খুলে যায়। তারা সারা দিন চাষিদের সবজি ক্ষেত থেকে কিনে ট্রাকে ভরে সারা দেশের বড় বড় পাইকারী বাজারে পাঠায়। বছরে ৭/৮ মাস চলে তাদের সবজি ব্যবসা।
কালীগঞ্জ উপজেলার মৌসুমী সবজি ব্যবসায়ী  আব্দুল কুদ্দুস জানান, তারা চাষিদের সবজি ক্ষেত থেকে কিনে ট্রাকে ভরে পাঠিয়ে দেন দেশের বিভিন্ন বড় বড় বাজারে। সেখানকার ব্যবসায়ীরা পরদিন সকালে এসব টাটকা সবজি বিক্রি করে ব্যাংকের মাধ্যমে পাঠিয়ে দেন তাদের পন্যের নায্য মুল্য।
সবজি চাষকে কেন্দ্র করে এসব অঞ্চলে সারা বছর থাকে কৃষির সাথে সম্পর্কিত শ্রমিকের কদর। দৈনিক আড়াই থেকে তিন শত টাকা মজুরীতে শ্রম বিক্রি করেন এ অঞ্চলের শ্রমিকরা। তবে নারী শ্রমিকরা বৈষম্যে শিকার হচ্ছেন। তারা পুরুষদের সমান পরিশ্রম করলেও পারিশ্রমিক মিলে অর্ধেকের কিছু বেশি। শ্রমিক জাহিদুল, ফোলেরা ও শোমেশ আলী জানান, সবজি চাষের ফলে তাদের শ্রম বিক্রিতে কোন সমস্যা হয় না।
লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারন অধিদফতরের উপ পরিচালক বিদু ভুষন রায় জানান, সারা দেশে সবজির ব্যাপক চাষাবাদ হওয়ায় বাজারে বেগুনের চাহিদা কিছুটা কমে গেছে। কিছুদিন পরে শীতকালিন নানান সবজিতে বাজার ভরে উঠবে। তখন বেগুনের চাহিদা আরো কমে যেতে পারে। তবে লোকসান নয়, বিগত বছরের তুলনায় এ বছর মুনাফা কিছুটা কম হবে বেগুন চাষিদের।
শেয়ার করুন

GloboTroop Icon
পাঠকের মতামত

Meghna Roktoseba




এক ক্লিকে জেনে নিন বিভাগীয় খবর




© মেঘনা নিউজ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by ShafTech-IT