লাখ ছাড়ালো দেশে কোটিপতির সংখ্যা
নিজস্ব প্রতিনিধি সোমবার রাত ০২:৪৭, ২৭ ডিসেম্বর, ২০২১
মহামারি করোনাভাইরাসে দেশের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়লেও বেড়েছে কোটিপতির সংখ্যা। কোটি টাকার বেশি ব্যাংকে আমানত রেখেছেন এমন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা লাখ ছাড়িয়েছে। এরমধ্যে গত দেড় বছরে (করোনকালীন সময়ে) নতুন কোটিপতি হয়েছেন ১৭ হাজার ২৯৩ জন। চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিক সেপ্টেম্বর শেষে নতুন কোটিপতি সংখ্যা বেড়েছে ৩২১ জন।
তবে, বিশ্লেষকরা বলছেন, করোনায় মানুষের আয় কমলেও কোটিপতি বাড়ার প্রবণতা সমাজে বৈষম্য তৈরি করছে। একদিকে, কিছু মানুষ গরিব হচ্ছে, অন্যদিকে বাড়ছে কোটিপতির সংখ্যা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন বলছে, কোটিপতি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বর্তমান সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক লাখ ২৩৯টি। চলতি বছরের প্রথম নয় (জানুয়ারি-সেপ্টেমর) মাসে কোটিপতি বেড়েছে ৬ হাজারের বেশি। আর গত তিন (জুলাই-সেপ্টেম্বর) মাসে নতুন কোটিপতির সংখ্যা বেড়েছে ৩২১ জন। করোনা মহামারির মধ্যেই গত দেড় বছরে কোটিপতি বেড়েছে ১৭ হাজার ২৯৩ জন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাব বলছে, চলতি বছর সেপ্টেম্বর মাস শেষে মোট আমানতকারী সঞ্চয় হিসাবধারীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১২ কোটি ৩৫ লাখ ৬৩ হাজার ৩৪৬। এসব অ্যাকাউন্টে ১৪ লাখ ৬২ হাজার ৮৮৮ কোটি টাকা আমানত জমা রয়েছে। এর মধ্যে শুধু কোটি টাকার আমানতকারী অ্যাকাউন্টের সংখ্যা ১ লাখ ২৩৯টি। কোটি টাকার এসব অ্যাকাউন্টে আমানতের পরিমাণ ৬ লাখ ৩৯ হাজার ২৮৫ কোটি টাকা।
এর আগে গত বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশে এক কোটি টাকার বেশি অ্যাকাউন্টধারী ছিলেন ৮৭ হাজার ৪৯০টি ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠান। বছরের ব্যবধানে কোটিপতি অ্যাকাউন্ট বেড়েছে ১২ হাজার ৭৪৯টি। গত বছরের ডিসেম্বর শেষে দেশে কোটিপতি আমানতকারী হিসাবধারী ছিল ৯৩ হাজার ৮৯০টি। এসব হিসাবে চলতি বছরের প্রথম নয় মাসে কোটিপতি আমানতকারী বেড়েছে ৬ হাজার ৩৪৯ জন। গত বছরের প্রথম নয় মাসে কোটিপতি আমানতকারী হিসবাধারীর সংখ্যা বেড়েছিল মাত্র ৩ হাজার ৬৫১টি।
বৈশ্বিক মহামারি করোনা প্রাদুর্ভাব শুরুর আগে গত বছরের মার্চ মাস পর্যন্ত দেশে কোটিপতি আমানতকারীর সংখ্যা ছিল ৮২ হাজার ৬২৫। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাস শেষে সেটি বেড়ে ১ লাখ ২৩৯-তে দাঁড়িয়েছে। এর ফলে করোনা ভাইরাসের মধ্যেও দেড় বছরে দেশে কোটিপতি আমানতকারী হিসাবধারীর সংখ্যা বেড়েছে ১৭ হাজার ৬১৪টি।
প্রতিবেদন বলছে, আলোচিত সময়ে দেশে এক কোটি টাকা থেকে ৫ কোটি টাকার অ্যাকাউন্টধারীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৮ হাজার ৭২৫টি। আর ৫ কোটি থেকে ১০ কোটির মধ্যে অ্যাকাউন্ট রয়েছে ১১ হাজার ৭৯টি, ১০ কোটি থেকে ১৫ কোটির অ্যাকাউন্ট ৩ হাজার ৬৪২টি, ১৫ কোটি থেকে ২০ কোটির অ্যাকাউন্ট ১ হাজার ৭৪০টি, ২০ কোটি থেকে ২৫ কোটির মধ্যে অ্যাকাউন্ট ১ হাজার ১৮৩টি, ২৫ কোটি থেকে ৩০ কোটির মধ্যে অ্যাকাউন্ট ৯১৬টি, ৩০ কোটি থেকে ৩৫ কোটির অ্যাকাউন্ট ৪৩০টি, ৩৫ কোটি থেকে ৪০ কোটির অ্যাকাউন্ট ৩২৬টি।
আর ৪০ কোটি থেকে ৫০ কোটি টাকার অ্যাকাউন্ট ৬২৯টি, ৫০ কোটি টাকার বেশি আমানত গচ্ছিত রাখা অ্যাকাউন্ট ১ হাজার ৫৫৯টি। মহান স্বাধীনতার পর দেশে ১৯৭২ সালে কোটিপতি আমানতকারী ছিলেন মাত্র পাঁচজন, ১৯৭৫ সালে তা ৪৭ জনে উন্নীত হয়েছিল। স্বাধীনতার ৫০ বছরে তা এক লাখ ছাঁড়িয়েছে।