লঞ্চ দুর্ঘটনায় নিখোঁজ যাত্রীর সঠিক হিসাব অজানা
নিজস্ব প্রতিনিধি শনিবার সন্ধ্যা ০৬:০৪, ২৫ ডিসেম্বর, ২০২১
ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে এমভি অভিযান–১০ লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডে কতজন নিখোঁজ রয়েছেন তার সঠিক হিসাব এখনো কেউ দিতে পারছেন না। দুর্ঘটনার পর শুক্রবার সকাল থেকে সুগন্ধা তীরের দিয়াকুল গ্রামে, ঝালকাঠি সদর হাসপাতাল ও বরিশাল শেরেবাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় হাসপাতালে আসতে থাকেন নিখোঁজদের স্বজনরা। তাদের আহাজারিতে ভারী সুগন্ধা তীর এবং হাসপাতালের পরিবেশ।
ঝালকাঠির অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) ও নৌ-মন্ত্রণালয় তদন্ত কমিটির সদস্য ও জেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটির প্রধান মো. নাজমুল আলম জানান, ৩৭ জনের মরদেহ এরই মধ্যে হস্তান্তর করা হয়েছে। তাদের মধ্যে এখন পর্যন্ত ছয়জনকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। বাকি ৩১ জনের জন্য স্বজনদের সন্ধান চলছে। পোড়া মরদেহগুলোর চেহারার কোনো আকৃতি বোঝা যাচ্ছে না। তাদের স্বজনরাও এসে খুঁজছেন। নদীতে একাধিক টিম উদ্ধার অভিযান অব্যাহত রেখেছে।
স্বজনদের খোঁজে আসা বাবুল জানান, তার ভাইয়ের মেয়ে সোনিয়া (২৫), সোনিয়ার দুই ছেলে জুবায়ের (৬) ও জুনায়েদ (২) এবং তার মা রেখা বেগম দুর্ঘটনা কবলিত লঞ্চে বরগুনার তালতলী উপজেলার ছোটবগি গ্রামে যাচ্ছিলেন। লঞ্চে আগুন লাগার পরপরই সোনিয়া তার ছয় বছরের শিশু জুবায়েরকে নিয়ে সাঁতরে তীরে উঠতে সক্ষম হলেও দুই বছরের জুনায়েদ ও মা রেখা বেগমকে এখনো খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
বরগুনার বামনা উপজেলার বুকাবুনিয়া গ্রামের উত্তম হালদার খুঁজছিলেন ভাইয়ের ছেলে কৃষ্ণ হালদারকে (১৪)। নিখোঁজ কৃষ্ণ ঢাকার উত্তরার একটি স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্র। কৃষ্ণ হালদার মা গীতা রানি ও ছোট ভাই প্রত্যয়কে নিয়ে বামনার গ্রামের বাড়ি যাচ্ছিল। উত্তম হালদার বলেন, দুর্ঘটনার পর গীতা রানি প্রত্যয়কে নিয়ে নদীতে ঝাঁপ দেন। তারা তীরে উঠতে সক্ষম হলেও কৃষ্ণ নিখোঁজ।
পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলার দেউলী গ্রামের বাসিন্দা মো. রনি (১৫) খুঁজছিল মা রীনা বেগম ও বোন লিমাকে। বারবার আহতদের শয্যার কাছে গিয়ে মা আর বোনকে না পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ে রনি। রনি নিজেও এ ঘটনায় আহত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৩ ডিসেম্বর) গভীর রাতে ঢাকা থেকে বরগুনাগামী লঞ্চটিতে আগুন লাগে। খবর পেয়ে বরিশাল, পিরোজপুর, বরগুনা ও ঝালকাঠি ফায়ার সার্ভিসের দমকল বাহিনী শুক্রবার ভোর ৫টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। র্যাব, নৌ পুলিশ, কোস্টগার্ড ও ফায়ার সার্ভিস উদ্ধারকাজ শুরু করে।
এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৪১ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। দগ্ধ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আরও অনেকে। তবে কতজন নিখোঁজ আছে তার সঠিক তথ্য নেই কারও কাছে।