রাণীনগরে ঢিলে-ঢালা ভাবে সরকারী ধান সংগ্রহে দর বাড়েনি স্থানীয় বাজারে
নিজস্ব প্রতিনিধি শুক্রবার রাত ১০:০৬, ২০ ডিসেম্বর, ২০১৯
এক মাসে সংগ্রহ মাত্র ১৫ মেট্রিকটন!
আবু ইউসুফ, নওগাঁ প্রতিনিধি : নওগাঁর রাণীনগরে সরকারী ভাবে ১৮শ’৬১ মেট্রিকটন ধান সংগ্রহের উদ্বোধন করা হলেও গত এক মাসে এখন পর্যন্ত মাত্র ১৫ মেট্রিকটন ধান সংগ্রহ করা হয়েছে। ঢিলে-ঢালা ভাবে ধান ক্রয়ের ফলে স্থানীয় বাজারে এর কোন প্রভাব পরেনি। ফলে ধানের ফলন কম ও ন্যায্য দাম বি ত হওয়ায় লোকসানে পরেছেন কৃষকরা।
সংশ্লিষ্ঠ সুত্রে জানাগেছে, গত ২০ নভেম্বর রাণীনগর উপজেলায় অভ্যন্তরীন ভাবে সরাসরি কৃষকদের নিকট থেকে ১৮শ’৬১ মেট্রিকটন আমন ধান সংগ্রহের উদ্বোধন করা হয়। ওই দিনই মাত্র ৫ মেট্রিকটন ধান সংগ্রহ করলেও এখন পর্যন্ত মোট ১৫ মেট্রিকটন ধান সংগ্রহ করা হয়েছে। এর পর প্রতিটি ইউনিয়ন পর্যায়ে লটারীর মাধ্যমে কৃষকদের ভাগ্য নিধারনের পালা চলতে থাকে। সর্ব শেষ গত ১০ ডিসেম্বর উপজেলা পরিষদ হলরুমে একযোগে ৬টি ইউনিয়নের কৃষকদের ভাগ্য লটারীর মাধ্যমে নির্ধারণ করা হয়। এর পর থেকে শুধু মাত্র প্রস্তুতি নিতেই সময় চলে যাচ্ছে কর্তাদের।
কৃষকরা বলছেন, এই উপজেলায় প্রায় আরো ১৫-২০ দিন আগে ধান কাটা মারাই শেষ হয়েছে। ধান কাটার মজুরি,দোকানের হাল খাতা এবং বিভিন্ন সংস্থার ঋণ পরিশোধ করতে ক্ষুদ্র বা প্রান্তিক কৃষকরা কাটা মাড়াই করেই ধান বিক্রি করে দিয়েছেন। তবে এখন যাদের ঘরে ধান রয়েছে তারা সবাই বড় কৃষক যাদের ধান আরো ছয় মাস ধরে রাখলেও সমস্যা হবেনা।
কৃষি অফিস সুত্র বলছে, আমন মৌসুমে উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে ১৮ হাজার ১২৫ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের ধান রোপন করা হয়েছিল। কৃষকদের দাবি নানা রোগ বালাইয়ের কারনে ধানের ফলন বিঘাপ্রতি অ ল ভেদে ১২ থেকে ১৬ মন পর্যন্ত হয়েছে। আবার কোথাও ৫/৬ মনও হয়েছে। প্রতি বিঘা (৩৩ শতক) জমি আবাদ করতে ৯ হাজার থেকে (জমি ভাড়াসহ) প্রায় ১৬ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এই ধান বাজারে বিক্রি করতে গেলে মোটা ধান রকম ভেদে ৬৪০ টাকা থেকে ৭২০ টাকা এবং আতব ধান ১৩শ’৫০ টাকা থেকে সাড়ে ১৪শ’ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে । ফলে ধানের কম ফলন এবং ন্যায্য দর না পাওয়ায় ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের বিঘা প্রতি ৩ হাজার থেকে ৬ হাজার টাকা পর্যন্ত লোকসান হয়েছে। কিন্তু কৃষি কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম বলছেন, কোথাও ধানের ফলন কম হয়নি। যে পরিমান সম্ভাব্য লক্ষ মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল তার চাইতে বেশি ফলন হয়েছে।
রাণীনগর উপজেলার রাজাপুর গ্রামের কৃষক আলী হাসান, খট্রেশ্বর গ্রামের মামুনুর রশিদ,কালী গ্রামের খলিলুর রহমান, দামুয়ার এজাদুল হক জানান, আমন ধান কাটার সাথে সাথে বিক্রি করে শ্রমীকদের মজুরি, দোকানের বাঁকী পরিশোধ করতে হয়েছে। সরকার যদি সময় মতো ধান ক্রয় করতো তাহলে একটু হলেও বাজারে এর প্রভাব পরত। এতে আমাদের লাভ না হলেও অন্তত লোকসানের পরিমানটা কমে আসতো ।
রাণীনগর উপজেলা খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম বলেন, ধান সংগ্রহের উদ্বোধনের দিনেই ৫ মেট্রিকটন ধান সংগ্রহ করা হয়েছিল। এর পর গত একমাসে আরো ১০ মেট্রিকটন ধান সংগ্রহ হয়েছে। আগামী ২৮ ফেব্রুযারী পর্যন্ত সংগ্রহ অভিযান চলবে।
উপজেলা ধান সংগ্রহ কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল মামুন বলেন, ইতি মধ্যে ধান সংগ্রহের জন্য লটারীর মাধ্যমে কৃষক নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া যতটুকু প্রক্রিয়া রয়েছে তাও প্রায় শেষের দিকে। আসা করছি আগামী সপ্তাহ থেকে পুরো দমে ধান সংগ্রহ শুরু হবে।