ঢাকা (সকাল ৭:২৫) বৃহস্পতিবার, ২রা মে, ২০২৪ ইং

মাদক না পেয়েও ডিএনসি’র বেধড়ক লাঠিপেটা, হাসপাতালে ৩ যুবক

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা কার্যালয়ের পরিদর্শক মো. ইলিয়াস হোসেন তালুকদার, উপ-পরিদর্শক মো. আসাদুর রহমান, সহকারী উপ-পরিদর্শক মো. মামুনুর রশীদ (বাম দিক থেকে)। ব্যাকগ্রাউন্ডে মারধরের শিকার হয়ে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়া আহত তিন যুবকের হাসপাতালের জরুরী বিভাগের রোগীর টিকেট।



ডিএনসি- ডিপার্টমেন্ট অব নার্কোটিক্স কন্ট্রোল বা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। যাদের কাজ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ হলেও কখনো কখনো আগ্রাসী মনোভাবী হয়ে ওঠেন তারা। এরই ধারাবাহিকতায় গত শনিবার ৬ এপ্রিল দুপুরে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার রানীহাটি হলমোড়ে পরিচালিত এক অভিযানে পথচারী ৩ যুবকের দেহ তল্লাশি করে ডিএনসি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শাখার সদস্যরা। এ সময় দেহ তল্লাশির বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করেও কোন প্রকার মাদকদ্রব্য না পেয়ে জনসম্মুখে বেধড়ক মারধর, ভয়ভীতি ও হুমকি দেয়ার অভিযোগ উঠেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সদস্যদের বিরুদ্ধে। পরে মারধরের শিকার হয়ে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন আহত তিন যুবক। পরে আজ রোববার (৭ এপ্রিল) শিবগঞ্জ থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন ভূক্তভোগীরা।

 

আহত তিন যুবক হলেন- জেলার সদর উপজেলার রানিহাটি ইউনিয়নের রামচন্দ্রপুরহাট গ্রামের সুধীর চন্দ্র রবি দাসের ছেলে শ্যামল চন্দ্র রবি দাস, একই গ্রামের মসিদুল হকের ছেলে তহরুল ইসলাম ও বহরম হঠাৎপাড়া গ্রামের মোয়াজ্জেম আলীর ছেলে নাসির উদ্দিন বাবু। তারা সকলেই ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। এদের মধ্যে শ্যামলের অবস্থা গুরুতর।

 

এ বিষয়ে ভুক্তভোগী যুবক, স্থানীয় বাসিন্দা ও প্রতক্ষ্যদর্শীরা জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-সোনামসজিদ মহাসড়ক দিয়ে একটি মোটরসাইকেল করে শিবগঞ্জ যাচ্ছিলেন তিন যুবক। এ সময় রানিহাটি হলমোড় এলাকায় পৌঁছালে তাদেও গাড়ির গতিরোধ করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ১০-১১ সদস্যের একটি দল। পরে সড়কের পাশেই তাদের দেহ তল্লাশি শুরু করে তারা। এ সময় ওই তিন যুবকের দেহ ও গাড়িতে কিছুই পায়নি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সদস্যরা।

 

ভুক্তভোগী যুবকদের অভিযোগ, মাদকদ্রব্য না পেলেও একটি ভালো মটরসাইকেলের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ ভাংচুর ও সিট ছিঁড়ে তল্লাশি করে ডিএনসির সদস্যরা। এ সময় কিছু না পেলেও সেখানেই তাদেরকে বারংবার কিল-ঘুষি ও লাঠি দিয়ে বেধড়ক মারধর করে তারা। এমনকি অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ ও নানারকম ভয়ভীতি-হুমকি দেয়া হয় তাদের।

 

অনুসন্ধানে জানা যায়, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা কার্যালয়ের পরিদর্শক মো. ইলিয়াস হোসেন তালুকদার, উপ-পরিদর্শক মো. আসাদুর রহমান, সহকারী উপ-পরিদর্শক মো. মামুনুর রশীদসহ ১০-১১ জন সদস্য মিলে এই মারধর করে ওই ৩ যুবককে।

ভুক্তভোগী শ্যামলের অভিযোগ, আমরা শিবগঞ্জ যাচ্ছিলাম একটি ব্যক্তিগত কাজে। হঠাৎ করেই রানিহাটি হলমোড়ে পেছন থেকে ধাক্কা দিয়ে আটক করে তারা। এ সময় আমাকেসহ আরও দুইজনকে বেধড়ক পিটিয়েছে তারা। আমার গলা ও মাজায় লাঠি দিয়ে মেরেছে। এমনকি মারধরের সময় ডিএনসির সদস্যরা গোপন অঙ্গে সজোরে আঘাত করায় মারাত্মক জখম ও আহত হয়েছেন তিনি।

 

তিনি আরও বলেন, আমাদের তিনজনকে বাজেভাবে হেনস্তা করেছে তারা। আটক করার পরপরই মূল রাস্তা থেকে বাগানের দিকে জোর করে নিয়ে যেতে চাইছিল। আমরা রাজি না হলে গাড়ির মধ্যে উঠাতে চাই। তাতেও রাজি না হওয়াতে আরও মারধর করে ও ভয়ভীতি দেখায়। আমরা রাজি হয়নি, কারন আমরা এসবে অভ্যস্থ না। আমাদের কাছে মাদকদ্রব্য না পেলেও নিজেদের কাছে থাকা মাদকদ্রব্য দিয়ে ফাঁসাতে চাই তারা।

 

আরেক আহত যুবক তহরুল ইসলাম জানান, আমরা মাদকের আশেপাশে থাকি না কখনো। কিন্তু জোরপূর্বক আমাদের কাছে মাদক রয়েছে বলে স্বীকার করিয়ে নেয়ার জন্য মারধর করে। কিন্তু আমাদের ভাগ্য সহায় ছিল বলেই আজকে তাদের মিথ্যা মামলা থেকে রক্ষা পেয়েছি। কারন বাজারের মধ্যে আমাদেরকে মারধর করা দেখে কয়েকশ লোকের সমাগম হয় সেখানে।

 

অন্য আহত যুবক নাসির উদ্দিন বাবু বলেন, দেহ ও গাড়ি তল্লাশি করে মাদক না পেয়ে বেধড়ক মারধর করার পর ঈদের পর মাদকদ্রব্য বিক্রি বা এর সাথে সংশ্লিষ্ট কাউকে ধরিয়ে দেয়ার জন্যও বলে তারা। আর তাদের কথা মতো কাজ না করলে যে কোনভাবে মাদক দিয়ে আটক করার হুমকি দেয় ডিএনসির সদস্যরা। এলাকাবাসীর কারনে তারা মারধর করে চলে যাওয়ার পর আমরা তিন জন চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণ করেছি। আমরা চাই, এ ঘটনার সুষ্ঠ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হোক। তারা এমন করেই মানুষকে মিথ্যা মামলা দিয়ে ফাঁসায়।

 

স্থানীয় দোকানদার জনির দোকানের সামনেই ঘটে পুরো ঘটনা। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ডিএনসির সদস্যরা তাদেরকে জোরপূর্বক দেহ ও মটরসাইকেল তল্লাশি চালায়। কিছু না পেলেও বেধড়ক মারধর ও হেনস্থা করে। তাদের কাছে মাদক না পেলেও এমন ব্যবহার করেছে মাদকদ্রব্যের লোকজন।

 

রাস্তার পাশে সিমেন্টের দোকানের মধ্যে নিয়ে গিয়েও শ্যামলকে মারধর করে ডিএনসির সদস্যরা। দোকানদার জিয়াউর রহমান অহিদ বলেন, আমার দোকানের সামনে তল্লাশি ও মারধর করা হয়েছে।

তবে এ বিষয়ে কথা বলতে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ আনিছুর রহমান খাঁন ও পরিদর্শক মো. ইলিয়াস হোসেন তালুকদারের সাথে কথা বলতে অফিসে গেলেও তাদেরকে পাওয়া যায়নি। মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও ফোন রিসিভ করেননি তারা।

 

তবে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপ-পরিদর্শক মো. আসাদুর রহমান জানান, নিয়মিত অভিযানের সময় তাদেরকে তল্লাশি করা হয়। সাথে কোন মাদকদ্রব্য না পাওয়া গেলে ছেড়ে দেয়া হয়। এ সময় তাদেরকে মারধরের বিষয়টি অস্বীকার করেন তিনি।

শেয়ার করুন

GloboTroop Icon
পাঠকের মতামত

Meghna Roktoseba




এক ক্লিকে জেনে নিন বিভাগীয় খবর




© মেঘনা নিউজ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by ShafTech-IT