মন্দির নিয়ন্ত্রনকে কেন্দ্র করে দুই গ্রামবাসী মুখোমুখি অবস্থান : সংঘর্ষের সম্ভাবনা!
নিজস্ব প্রতিনিধি রবিবার রাত ১০:৩০, ৩ নভেম্বর, ২০১৯
এহসান প্লুটো (দিনাজপুর) প্রতিনিধি: দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে মন্দিরের জায়গাসহ মন্দির পরিচালনার নিয়ন্ত্রন নিয়ে মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে দুই গ্রামের বাসীন্দারা।
উপজেলা প্রশাসন ও পুজা উৎযাপন কমিটি দুই গ্রামবাসীর সমঝোতা করতে না পারায়, হরিবাশর উৎযাপন হচ্ছে বাড়ীর খুলিতে।
এদিকে এক গ্রামের হরিবাশর উৎযাপনে অপর গ্রামের বাসীন্দারা বাধা দেয়ায়, দুই গ্রামের বাসীন্দাদের মাঝে টান টান উত্তেজনা বিরাজ করছে।
এই ঘটনায় শনিবার রাতেই থানা পুলিশ ঘটনা স্থল পরিদর্শন করে উভয় পক্ষকে শান্ত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন।
ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলা শিবনগর ইউনিয়নের চককবীর গ্রামে। গ্রামবাসীদের নিকট জানা গেছে চককবীর গ্রামের বারোয়ালী মন্দিরের জায়গা ও মন্দির পরিচালনার নিয়ন্ত্রন নিয়ে চককবীর উত্তরপাড়া ও চককবীর দক্ষিনপাড়া গ্রামবাসীদের মধ্যে দির্ঘদিন থেকে বিরোধ চলে আসছে। দুই গ্রামবাসীর বিরোধের কারনে গত দুর্গাপুজাও বন্ধ ছিল ওই মন্দিরে।
গত শনিবার রাত থেকে ওই মন্দিরে দক্ষিপাড়ার বাসীন্দারা হরিবাশর উৎযাপন করতে গেলে, সেখানে বাধা দেয় উত্তর পাড়া গ্রামের বাসীন্দারা।
উত্তর পাড়া গ্রামের বাসীন্দাদের বাধার মুখে মন্দির কমিটির সভাপতি বুলু চন্দ্র খুলিতে হরিবাশর উৎযাপন করতে বাধ্য হয় দক্ষিন পাড়ার বাসীন্দারা। এতে করে উভয় গ্রামবাসীদের মধ্যে টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে।
চককবীর দক্ষিন পাড়া গ্রামের বাবলা চন্দ্র সরকার বলেন, চককবীর দক্ষিন পাড়ায বসবাসরত ৬৫টি পরিবার সমর্থন দিয়ে মন্দির পরিচালনার জন্য চককবীর দক্ষিন পাড়ার বুলু চন্দ্র সরকারকে সভাপতি ও উত্তম কুমার সরকারকে সাধারণ সম্পাদক করে মন্দির পরিচালনা কমিটি গঠন করে।
কিন্তু এই কমিটিকে চ্যালেঞ্জ করে উত্তর পাড়ার ৪২টি পরিবার বাবলু চন্দ্রকে সভাপতি ও দুলাল চন্দ্রকে সাধারণ সম্পাদক করে আরও একটি মন্দির পরিচালনা কমিটি গঠন করে। এতে চককবীর হিন্দুপাড়া ভেঙ্গে উত্তর পাড়া ও দক্ষিনপাড়া বিভক্ত হয়ে পড়ে।
দক্ষিনপাড়া গ্রামের মন্দির কমিটির সভাপতি বুলু চন্দ্র সরকার বলেন, অধিকাংশ পরিবার সমর্থন দিয়ে তাকে মন্দির পরিচালনার দায়িত্ব দিয়েছে, কিন্তু বাবলু চন্দ্র গ্রামবাসীর মতামতকে তোয়াক্কা না করে, গায়ের জোরে ওই গ্রামে থাকা তিনটি মন্দির বারোয়ারী মন্দির, কালি মন্দির ও দুর্গা মন্দির দখল করে নেয়। এই কারনে গ্রামবাসীরা পুজা উৎযাপন করতে পারছেনা।
দক্ষিনপাড়া মন্দির কমিটির সাধারণ সম্পাদক উত্তম কুমার সরকার বলেন হরিবাশর উৎযাপনের জন্য গত এক সপ্তাহ পুের্ব উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা পুজা উৎযাপন কমিটি একটি সমঝোতা করে দিয়েছিল, কিন্তু উত্তর পাড়ার বাসীন্দারা তাদের সেই সমঝোতা অমান্য করে তাদের হরিবাশর উৎযাপনের বাধা সৃষ্টি করেছে।
অপরদিকে উত্তরপাড়া মন্দির কমিটির সভাপতি বাবলু চন্দ্র বলেন, এই মন্দির গুলো উত্তর পাড়ার বাসীন্দাদের নিজেস্ব জমি, কিন্তু দক্ষিন পাড়ার বাসীন্দারা জোর পুর্বক ব্যবহার করতে চায়। এই জন্য তারা তাদের মন্দির গুলো নিজ দখলে রেখেছেন।
এই বিষয়ে উপজেলা পুজা উৎযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক ধীমান চন্দ্র সরকার বলেন, উভয গ্রামবাসীদের নিয়ে কয়েক দফা বৈঠক করে একটি সমঝোতা কমিটি গঠন করা হলেও, কোন পক্ষই সেই সমঝোতা রক্ষা করেনি, এই কারনে তাদের সমঝোতা করা সম্ভব হয়নি।
উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মঞ্জু রায় চৌধুরী বলেন, একই ধর্মের অনুসারী ও একই গ্রামের বাসীন্দারা দুই ভাগে ভাগ হযে যাওয়ায়, তাদের সমজোতাকরা কঠিন হয়ে পড়েছে। তিনি বলেন তারা দির্ঘদিন থেকে এই ভাবে বিরোধ করে আসছে, এই কারনে তাদের আপোষ করতেও সময় লাগছে।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে ফুলবাড়ী থানার ওসি ফকরুল ইসলাম বলেন, দুই গ্রামবাসীদের মাঝে যেন কোন প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সেই কারনে ওই এলাকায় পুলিশের টহল বৃদ্ধি করা হয়েছে।