ট্রান্সপ্লানন্টারের সাহায্যে বোরো আবাদের বীজতলা তৈরি
মোঃআতিকুর হাসান,আদমদিঘী,বগুড়া বুধবার রাত ১১:২৭, ১৩ জানুয়ারী, ২০২১
বগুড়ার আদমদীতে বোরো আবাদের বীজতলা তৈরিতে নতুন মাত্রা যোগ হতে চলেছে। আধুনিক পদ্ধতিতে সামনে রেখে সুস্থ বীজতলা তৈরী করে বোরো চাষের প্রস্তুুতি নিয়েছে ১৫০ বিঘা জমির চাষিরা। ইতিমধ্যে ট্রে পদ্ধতিতে বীজতলা ও চারা তৈরির কাজ সম্পন্ন করে ভাল ফলনের লক্ষে চাষাবাদ শুরু হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে স্থানীয় কৃষি বিভাগ বলছে, বোরোর বীজতলা ট্রে পদ্ধতিতে করলে কুয়াশা বা শৈত্যপ্রবাহে নষ্ট হবে না। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির মাধ্যমে অধিক যত্নের কারণে ট্রে পদ্ধতির চারাগুলো সুস্থ ও সবল হবে। এতে করে চাষে ফলন বেশি পাওয়া যাবে।
আদমঘিতে এই পদ্ধতি সফল হলে পরে দেশের বিভিন্ন এলাকায় এই চাষ ছড়িয়ে দেওয়া হবে। আদমদিঘি উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার সান্তাহার ইউনিয়নের পান্নাথপুর, পানলা ও কেল্লাপাড়া মাঠের ১৫০ বিঘা জমিতে হাইব্রিড জাতের এই ধান চাষ করা হবে।
এ কারনে পান্নাথপুর মাঠে ৪ হাজার ৫০০টি ট্রে’তে ৩০০ কেজি বোরো বীজ বপন করে চারা তৈরি করা হয়েছে। আধুনিক পদ্ধতিতে ট্রেতে এই প্রথম বার বীজতলা ও চারা তৈরির কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় কাজটির সার্বিক তত্বাবধানে রয়েছেন সান্তাহার ও ছাতনী ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা কামরুল আহসান কাঞ্চন।
চারা তৈরীর পর নিয়ম অনুসরণ করে মেশিন এর মাধ্যমে বোরোর চাষ শেষ করা হবে। এর সাথে নিয়মিত সার, সেচ, আগাছা পরিস্কার করা হবে। সনাতন পদ্ধতিতে চারা তৈরী হয় ৪০ থেকে ৪৫ দিনে। আর এই চারা তৈরী হয় ২৫ থেকে ৩০ দিনে। ট্রের মধ্যে চারা থাকে বলে যত্ন বেশি হয়।
সে কারণে প্রতিটি চারা হয় সবল। বীজতলা থেকে ট্রের মাধ্যমে বীজ সংগ্রহ করে যন্ত্রের মাধ্যমে চারা রোপন ও কম্বাইন হারভেস্টারের মাধ্যমে ধান কাটাও হবে। অর্থাৎ এবার আধুনিক পদ্ধতিতেই কৃষি কাজ সম্পন্ন হবে। এ পদ্ধতিতে চাষিরা কম খরচে তাদের ধান ঘরে তুলতে পারবে। পান্নাথপুরের কৃষক বাবলু খান ও মোশারফ হোসেন জানান, এ পদ্ধতি ব্যবহার করলে শ্রমিকের মজুরি কম লাগবে। এতে ধানের উৎপাদন খরচ কমে যাবে। তাছাড়া হাইব্রিড জাতের এই ধান চাষে ফলন বৃদ্ধি পাবে। ফলে আধুনিকতার ছোঁয়ায় কৃষকরা লাভবান হবে।
ইতিমধ্যে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের বগুড়া অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ জিএম এ গফুর, উপপরিচালক কৃষিবিদ দুলাল হোসেন, অতিরিক্ত উপপরিচালক (শস্য) কৃষিবিদ শাহাদুজ্জামান, (উদ্যান) কৃষিবিদ আ.জা.মু আহসান শহীদ সরকার, উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মিঠু চন্দ্র অধিকারী, কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার কৃষিবিদ দিপ্তী রানী রায় ও কৃষি প্রকৌশলী আবু সাঈদ চৌধুরী বীজতলা পরিদর্শন করেছেন। আদমদিঘি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মিঠু চন্দ্র অধিকারী সাংবাদিকদের জানান, দিন দিন আবাদি জমির পরিমাণ কমে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে কৃষি শ্রমিকের সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে। ফলে কৃষিতে শ্রমিকের মজুরি বেড়ে যাচ্ছে, তাতে করে ধানের উৎপাদন খরচও বেড়ে যাচ্ছে।
ধানের উৎপাদন খরচ কমাতে দেশের ৪৯২ উপজেলার মধ্যে ৬১টি উপজেলায় প্রথমবারের মতো এই পদ্ধতিতে চাষ করা হচ্ছে। এর আওতায় উপজেলার সান্তাহারেও ১৫০ বিঘা জমিতে হাইব্রিড জাতের ধান চাষ করা হবে। ট্রে পদ্ধতি অনুসরণ করে তাতে বোরার চারা সবল হবে বেশি। আর সবল চারা দ্রুত বেরে ফলনও দেবে। বেশি ফলন হলে কৃষকের লাভও বেশি হবে। কৃষক খরচ কমিয়ে বেশি লাভবান হতে পারে সে বিষয়ে কাজ চলছে। এটি সফল হলে বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে দেওয়া হবে।