চাঁপাইনবাবগঞ্জে মহিপুরের শীর্ষ মাদক কারবারি ‘জামাই’
এস এম সাখাওয়াত জামিল দোলন,চাঁপাইনবাবগঞ্জ মঙ্গলবার বিকেল ০৪:১৩, ১৩ এপ্রিল, ২০২১
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার গোবরাতলা ইউনিয়নের মহিপুরের সব থেকে বড় মাদক কারবারির নাম সবুর। বাড়ি শিবগঞ্জ উপজেলার মনাকষা ইউনিয়নের খাসেরহাট। ৯ বছর আগে বিয়ে করেন মহিপুরে। এরপর থেকেই তিনি মহিপুরে মাদকের কারবার চালিয়ে আসছেন। তিনি এলাকায় ‘জামাই’ নামে পরিচিত। স্থানীয় মাদকসেবিরা তার ফোন নম্বরটি ‘জামাই’ লিখেই সেভ করে রেখেছেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, পুলিশ ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের মাদক কারবারিদের তালিকায় রয়েছে তার নাম।শিবগঞ্জ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে একাধিক মামলাও রয়েছে তার নামে। তার ভাই ভাতিজা ও আত্মীয়দের অনেকেই মাদক কারবারে জড়িত।
পার্শ্ববর্তী বন্ধু দেশ ভারত থেকে মাদক নিয়ে আসে তারা। আর তাদের মাধ্যমেই মহিপুরে মাদকদ্রব্য আনছেন জামাই সবুর। বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে মাদক সরবরাহ করেন। তার প্রধান আস্তানা মহিপুর মোড়ের অমরের মিষ্টির দোকান।
অনুসন্ধানে গিয়ে সোর্সদের মাধ্যমে জামাই সবুরের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে মাদক কারবারি জামাইকে এলাকায় পাওয়া যায়নি। তবে ফেনসিডিলের দাম প্রসঙ্গে এলাকার অন্য মাদক কারবারিরা বলছেন, ভারতের নির্বাচনের জন্য সীমান্ত দিয়ে মাদক আসছে না। আর এজন্য ফেনসিডিলের দাম ২ থেকে আড়াই হাজার টাকা পর্যন্ত নেয়া হচ্ছে। তবুও থেমে নেই ফেনসিডিলের কারবার। চড়া দামেই ফেনসিডিল কিনছেন মাদকসেবিরা।
সরেজমিনে ঘুরে ও খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গোবরাতলা ইউনিয়নের মহিপুর মোড়ে চলে মাদকের ওপেন কারবার।দিনরাত চলে হেরোইন, ইয়াবা, ফেনসিডিল ও গাঁজার কেনাবেচা। বিকেল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত আশপাশের এলাকা থেকে মোটরসাইকেলে আসেন মাদকসেবিরা। মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে সংগ্রহ করেন মাদক। আর মহিপুর মোড়ের অমরের মিষ্টির দোকানের পেছনে দাঁড়িয়ে মাদক সেবন করেন সেবিরা। ওই মিষ্টির দোকানের পেছনে গিয়ে ফেনসিডিলের বোতলসহ মাদক সেবনের আলামত দেখা গেছে।
যেহেতু দ্বিতীয় দফায় বৈশ্বিক মহামারী আকার ধারণ করা কোভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাবের কারণে এই রোগের বিস্তার ঠেকাতে চলছে লকডাউন। সেহেতু সীমান্তও রয়েছে বন্ধ। ফলে ভারতের নির্বাচনের কারণে সীমান্ত পথে চোরাকারবারিরা আর সেভাবে যাতায়াত করতে পারছে না। এতে মাদকের যোগান কমেছে। বেড়েছে দাম। তবে করোনা ভাইরাস মহামারীর এই সময়েও থেমে নেই মাদকের কারবার।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মহিপুর ও আশপাশের এলাকায় অন্তত ১০ থেকে ১২ জন মাদক কারবারে জড়িত। ওই এলাকায় হেরোইনের কারবার করেন বাবু, ময়েজ ও সাদ্দাম। এরফান করেন ফেনসিডিল ও গাঁজার কারবার। দিয়াড় ধাইনগরের শাহাবুদ্দিন ও মহিপুরের বাবলুও গাঁজার কারবার করেন। গোবরাতলার কাদের করেন ফেনসিডিলের। বাংলা মদে রেজাউল সেরা।আর হেরোইন, গাঁজা ও ইয়াবাসহ সব মাদকদ্রব্যের কারবার একাই করেন আসমাউল। ।
এ বিষয়ে মাদকদ্রব্য উদ্ধারকারী সংস্থার একটি সূত্র জানায়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিতে মোবাইলে মাদকসেবীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন বিক্রেতারা। দরদাম ঠিক হলে মাদক পৌঁছে দেয়। এভাবেই প্রকাশ্যে সামাজিক মাধ্যমে বা মোবাইলে যোগাযোগের মাধ্যমে মাদকের কারবার চলছে। মাদকের স্পটে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযান ও নজরদারির কারণে কারবারিরা মাদক লেনদেনে নির্দিষ্ট স্পটে থাকছেন না। গ্রেফতার এড়াতে প্রযুক্তির বিভিন্ন মাধ্যম ব্যবহার করছেন মাদক কারবারিরা। কৌশলে মাদক কারবার করায় গ্রেফতার করা সহজ হয় না।
তবে এ ব্যাপারে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর চাঁপাইনবাবগঞ্জ কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. আনিসুর রহমান জানান, মাদকের ব্যাপারে আমাদের সব ধরনের নজরদারি আছে। সে নজরদারি থেকেই মাদক কারবারিরা ধরা পড়ছে। মাদক কারবারে সুনির্দিষ্ট তথ্য থাকলে অবশ্যই অভিযান চালানো হবে। তিনি আরও বলেন, মাদকবিরোধী অভিযান সব সময় চালু রয়েছে। এটা একটি চলমান প্রক্রিয়া।