ঢাকা (রাত ১:০৪) মঙ্গলবার, ২৪শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
শিরোনাম

Join Bangladesh Navy


চাঁপাইনবাবগঞ্জে অনিয়ম অব্যবস্থাপনায় সেবার মান কমছে মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের

এস এম সাখাওয়াত জামিল দোলন,চাঁপাইনবাবগঞ্জ এস এম সাখাওয়াত জামিল দোলন,চাঁপাইনবাবগঞ্জ Clock সোমবার সন্ধ্যা ০৬:২৬, ৫ অক্টোবর, ২০২০

চাঁপাইনবাবগঞ্জ মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে বিভিন্ন অনিয়ম, দূর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার কারণে সেবার মান দিনদিন কমছে বলে অভিযোগ করেছেন এখানে সেবা নিতে আসা ভূক্তভোগীরা। সেবাগ্রহীতাদের অভিযোগ, কাংক্ষিত সেবাতো পাওয়া যায়ই না উপরন্তু সেবা প্রদাণকারীদের যাচ্ছেতাই দূর্ব্যবহার, নির্দিষ্ট ক্লিনিকে আলট্রাসোনোগ্রাম করতে বাধ্য করা, চিকিৎসক ও প্রভাবশালী মহলের আত্মীয়-স্বজন ছাড়া সিজার না করা এখানকার নিত্য দিনের ঘটনা। এছাড়াও রাজস্ব খাতে জমা না করে উপার্জিত অর্থ আত্মসাৎ, প্রতিবছর আসা সংস্কার বাজেটের কাজ না করে অর্থ এবং গর্ভবতীদের জন্য আসা ওষুধ লোপাট করাসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে কর্তব্যরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে।

অভিযোগ রয়েছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের মেডিকেল অফিসার চিকিৎসক আনোয়ার জাহিদ রুবেনের কাছে চিকিৎসা নিতে গেলেই তিনি সকল গর্ভবতী মায়েদের নির্দিষ্ট করে তার পরিচালিত সেবা ক্লিনিকে আলট্রাসোনোগ্রাম করতে বাধ্য করেন। অন্য কোন ক্লিনিক থেকে কেউ যদি ভুল করে আলট্রাসোনোগ্রাম করে তার কাছে রিপোর্ট নিয়ে যান তবে তিনি সেই রিপোর্ট ছুঁড়ে ফেলে পূনরায় আলট্রাসনোগ্রাম করতে পাঠান সেবা ক্লিনিকে।

এ বিষয়ে অভিযোগ করে সদর উপজেলার গোবরাতলা ইউনিয়নের মহিপুর গ্রাম থেকে চিকিৎসা নিতে আসা এক গর্ভবতী মা জানান, এখানে (মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র) সেবা নিতে এসে উল্টো হয়রানি হতে হয়। ডাক্তার সাহেব ঠিকমতো রোগী দেখেনই না। এমনকি দারোয়ানরাও খুব বাজে ব্যবহার করেন। ডাক্তারের দেখা প্রায়ই পাওয়া যায় না, ভিজিটররাই চিকিৎসা করেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার জোড়বাগান মহল্লার বর্ষা খাতুন বলেন, এখানে আমার সিজার হলেও প্রয়োজনীয় ওষুধ নিতে গেলে নাই নাই বলে তাড়িয়ে দেয়। আর ইসলামি হাসপাতাল থেকে আলট্রাসোনোগ্রাম করায় পরিদর্শকরা তা না দেখেই বলেন তাহলে ওখানেই সিজার করো। এমনকি সিজারের সময়ও অকথ্য ভাষায় কথা বলে পরিদর্শকরা।

এদিকে গর্ভবতী থাকাকালীন সময়ে পৌরসভা থেকে মাতৃত্বকালীন ভাতা পাওয়ার কথা ছিলো ফেরদৌসী বেগমের। তবে এর আগে প্রয়োজন ছিলো মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের মেডিকেল অফিসার ডা. আনোয়ার জাহিদ রুবেনের একটি স্বাক্ষর। এ বিষয়ে ফেরদৌসী বেগম চোখ ভরা জল নিয়ে প্রতিবেদককে জানান, স্বাক্ষর নিতে গেলে ডা. রুবেন অপমান করে বলে ‘আমি কি এসব করার জন্যই আছি। দিতে পারবো না, যাও’। আর এই স্বাক্ষর না পাওয়াতে ১০ হাজার টাকা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন রাজমিস্ত্রী স্বামীর স্ত্রী ফেরদৌসী।

সাধারণ গর্ভবতী মায়েদের জন্য সিজার করা এখানে (মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র) দূর্লভ। কারন এখানে ডাক্তার ও প্রভাবশালী মহলের আত্মীয় স্বজনদেরই সিজার করা হয় বেশি। আর সাধারণ গর্ভবতী মায়েদের সিজার করার জন্য আবারো নির্দিষ্ট ঠিকানা বাতলে দেয়া হয় যথারীতি “সেবা ক্লিনিক”। এনিয়ে একজন গর্ভবতীর স্বজন জানালেন, এখনতো সাধারন ডেলিভারী হয়ইনা। আর তাই আমরা কম খরচে সিজার করার জন্যই সরকারি হাসপাতাল এসেছিলাম। কিন্তু মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে আসার পর ডাক্তার আমাদের সেবা ক্লিনিকে সিজার করতে বললেন। আমরাও তার কথা মতো সেখানে গিয়ে সিজার করালাম আমাদের সামর্থের বাইরে। এখানে যদি সরকারীভাবে কম খরচে সিজার না করায় যাবে তাহলে সরকার এতো টাকা দিয়ে এসব করে রেখেছে কেন ?

জন্মনিয়ন্ত্রণের অন্যতম উপায় ইমপ্লান্ট কর্তব্যরত চিকিৎসকের করার কথা থাকলেও তা করেন পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা। অথচ তার অর্থ রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে আদায় করেন ডা. আনোয়ার জাহিদ রুবেন। এছাড়াও অভিযোগ রয়েছে প্রত্যেক বছর মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের সংস্কার ও মেরামত কাজ করতে অর্থ বরাদ্দ হয় ৩০ লক্ষ টাকা। কিন্তু প্রতিবছর বিপুল পরিমান অর্থ বরাদ্দ হলেও সংস্কার বা মেরামতের কোন ছোঁয়াই লাগেনি মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে। ভবনটির দ্বিতীয় তলায় যে ওয়ার্ড রয়েছে তা দেখে কোনভাবেই বোঝার উপায় নেই যে এটি সন্তান প্রসব করা মায়েদের থাকার জায়গা। অপরিষ্কার অপরিচ্ছন্ন পরিবেশের কারনে থাকার অনুপযোগী প্রায় ২০ সজ্জার ওয়ার্ড।

এছাড়া যে পরিমান ওষুধ ও সরঞ্জাম প্রতিবছর মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে আসে তার একটা বিশাল অংশই থেকে যাওয়ার কথা। কারন পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকাদের দেয়া বক্তব্যে জানা যায়, এখানে যে বাজেট আসে তার তুলনায় ডেলিভারি ও সিজারের সংখ্যা অনেক কম। অভিযোগ রয়েছে, এর সবগুলোই আত্মসাৎ করেন ডা. আনোয়ার জাহিদ এবং তার এসব অনিয়মের সহযোগী হিসেবে কাজ করেন, সিনিয়র পরিবার কল্যাণ পরিদর্শকা মোসা. ইসমত আরা, অফিস সহায়ক তোফিয়া খাতুন ও অন্যান্য কর্মচারীসহ কয়েকজন।

তবে সকল অভিযোগ অস্বীকার করে মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের মেডিকেল অফিসার ডা. আনোয়ার জাহিদ রুবেন বলেন, ৬ জন পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা নিয়ে খুব ভালোভাবেই সেবা প্রদান করে যাচ্ছে এর সাথে সংশ্লিষ্টরা। এমনকি মহামারী করোনাকালীন সময়েও সমান তালে সেবা দিয়েছে মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র। সিজারের বিষয়ে তিনি বলেন, যেহেতু এখানে অ্যানেসথেসিয়ার ডাক্তার নেই, সেহেতু ব্যাটে-বলে না মিললে এখানে সিজার করা সম্ভব হয়না। আর নির্দিষ্ট ক্লিনিকে আলট্রাসোনোগ্রাম করতে চাপ প্রয়োগ করা হয়না এবং রশিদের মাধ্যমে উপার্জিত সকল অর্থ রাজস্ব খাতে জমা করা হয় বওে জানান তিনি। আর তাই মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে কারোর কোন অনিয়ম করার সুযোগই নেই।




শেয়ার করুন


পাঠকের মতামত

মেঘনা নিউজ-এ যোগ দিন

Meghna Roktoseba




এক ক্লিকে জেনে নিন বিভাগীয় খবর



© মেঘনা নিউজ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by ShafTech-IT