গোমস্তাপুরে উভয় লিঙ্গ শিশুর জন্ম,অসম্পূর্ণ মাথা,পৃথক অবস্থায় মগজ
এস এম সাখাওয়াত জামিল দোলন,চাঁপাইনবাবগঞ্জ শনিবার দুপুর ০৩:৩৩, ২৮ আগস্ট, ২০২১
না ছেলে, না মেয়ে। এবার উভয়লিঙ্গ নিয়ে জন্ম নিয়েছে এক শিশু। মাথার খুলির অর্ধেক অংশই নেই। এমনকি মগজও রয়েছে পৃথকভাবে একটি থলেতে। এমন অস্বাভাবিক এক শিশুর জন্ম হয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার গোমস্তাপুর উপজেলায়। শুক্রবার (২৭ আগষ্ট) দিবাগত রাত ১০টার দিকে গোমস্তাপুর উপজেলার মহানন্দা ক্লিনিক এ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে এমন শিশুর জন্ম হয়। এমন ঘটনা খুবই বিরল বলে উল্লেখ করেছেন মেডিসিন বিশেষজ্ঞরা।
অনুসন্ধানে জানা যায়, গোমস্তাপুর উপজেলার বালুগ্রাম দক্ষিণটোলা গ্রামের ভ্যানচালক নাসির হোসেনের স্ত্রী জিন্নাতুন খাতুন শিশুটির জন্ম দিয়েছেন। আর এই প্রতিবেদন লেখার সময় রাত ১২টা পর্যন্ত শিশুটি সুস্থ ছিল। ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ, নার্স, আয়া ও শিশুটির স্বজনরা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। প্রসব বেদনা উঠলে শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে ক্লিনিকে ভর্তি করা হয় জিন্নাতুন খাতুনকে। বাচ্চা প্রসবের নির্ধারিত তারিখের ২দিন পেরিয়ে যাওয়ায় সিজার করার সিদ্ধান্ত নেন চিকিৎসক। পরে চিকিৎসক মো. হাসেম আলীর নেতৃত্বে সিজার করা হয় জিন্নাতুন খাতুনের।
এ বিষয়ে সিজার প্রক্রিয়ায় অংশ নেয়া নার্স মোসা. ফাতেমা খাতুন বলেন, অপারেশন থিয়েটারে সিজার করার সময়ই দেখতে পায় বাচ্চাটির মাথা সম্পূর্ণ রুপে নেই। যা রয়েছে তা মাথার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ। এমনকি মাথার ভেতরে থাকা মগজ বাইরে আলাদা একটি থলের মতো অংশে রয়েছে। অবাক করার বিষয় শিশুটির পুরুষাঙ্গ ও যোনীদ্বার দুটিই আছে।
তিনি আরও বলেন, অপারেশন থিয়েটারে এমন শিশু দেখে সবাই অবাক হয়েছিলাম। পরে তাদের স্বজনদের জানানো হয়। শিশুর মাকেও জানানো হয়েছে। জন্মের কিছুক্ষণ পর তার মা তাকে দেখেছে। এরপর জানাজানি হলে উৎসুক জনতা শিশুটি দেখতে ভিড় জমায়। দীর্ঘ সিজারের অভিজ্ঞতায় এমন শিশু কখনও দেখেননি বলে জানান নার্স ফাতেমা।
এদিকে শিশুটি জন্মের পর ক্লিনিকের আয়া মোসা. ইদন বেগম তার নাড়ি কেটেছে। তিনি জানান, জন্মের পর বাচ্চাটিকে আমার হাতে তুলে দেয়া হয়। বাইরে এনে নাড়ি কেটেছি। তার ওজনসহ বাকি সবকিছু স্বাভাবিক ছিলো। মুখে হাসিও দেখেছি। কিন্তু মাথার অর্ধেক নেই এবং পুরুষ ও নারীর উভয় লিঙ্গই রয়েছে তার শরীরে। নাড়ি কাটার পর তুলে দেয়া হয়েছে স্বজনদের হাতে।
প্রসূতি জিন্নাতুন খাতুনের বোনের স্বামী আলামিন বলেন, আমার শালীর দ্বিতীয় শিশু এটি। এর আগে একটি ছেলে রয়েছে তার। আলট্রাসোনোগ্রামেই শিশুটির অদ্ভুত আকৃতির বিষয়ে আমরা জানতে পেরেছিলাম। শিশুটির মাথা নেই বললেই চলে। কপাল থেকেই শেষ হয়েছে। মগজ আলাদাভাবে একটি থলেতে আছে।
এ বিষয়ে মহানন্দা ক্লিনিক এ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নন্দন কুমার কর্মকারের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, দীর্ঘ ১২ বছর ধরে আমাদেও এই ক্লিনিকে বহু সিজার হয়েছে। এমনকি আজকেও (শুক্রবার) ক্লিনিকে চারজন মা তাদের বাচ্চা প্রসব করেছেন। তার মধ্যে তিনটিই সিজার হয়েছে। কিন্তু নাসির হোসেন ও জিন্নাতুন খাতুন দম্পতির এই শিশুটি অদ্ভুত আকৃতি ও অঙ্গ নিয়ে জন্ম নিয়েছে। বর্তমানে মা ও শিশু দুইজনেই সুস্থ রয়েছে।
তবে বাংলাদেশ মেডিকেল এ্যাসোসিয়েশন-বিএমএ চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. গোলাম রাব্বানী জানিয়েছেন, এমন ঘটনা খুবই বিরল। উভয় লিঙ্গ নিয়ে জন্ম নেয়ার ঘটনা চিকিৎসা বিজ্ঞানে একেবারেই অদ্ভুত! তবে মাথার খুলির পরিপক্বতা না পেলে মগজ আলাদা হয়ে থাকতে পারে।