করোনায় কৃষিকাজ বেছে নিল আগামীর ভবিষ্যৎ
সাজাদুল ইসলাম,কুড়িগ্রাম সোমবার রাত ১১:৫১, ২৬ এপ্রিল, ২০২১
করোনাভাইরাসের করাল গ্রাসে বিশ্বের সবকিছু থমকে গেছে।দিশেহারা সমগ্র বিশ্ব।এক অদৃশ্য শক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধজয়ের চেষ্টা চালাচ্ছে বিশ্বের শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলো।আমাদের দেশেও করোনা মোকাবেলায় দফায় দফায় সাধারণ ছুটি ও লকডাউনের প্রজ্ঞাপন জারি করছেন সরকার।
সবকিছু স্বাস্থ্য বিধি মেনে খুললেও শুধু শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ জীবন মূল্যায়ন করে কিছুতেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার সিদ্ধান্তই নিতে পারেনি সরকার। গত বছরের ১৮ মার্চ থেকে অদ্যাবধি এক বছরের বেশি সময় ধরে বন্ধ রয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো। স্কুল পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের নেই তেমন পড়ালেখার চাপ।এ অবস্থায় শিক্ষার্থীদের আগ্রহে গ্রামে গ্রামে ভাগালো গ্রুপ (শেয়ারের ভিত্তিতে ধান কাটা ও মাড়াই) গঠন করে ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজ করতে দেখা যাচ্ছে অনেক স্কুল পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের।
কুড়িগ্রামের উলিপুরে নারিকেল বাড়ী আগপাড়া গ্রামের রনজিত কুমার।নারিকেল বাড়ী পন্ডিত মহির উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ব্যবসায় শিক্ষা শাখার শিক্ষার্থী।বাবার আয় উর্পাজন কমে গেছে করোনার লকডাউনে।পড়া লেখার খরচ চালাতে হিমশিম খাচ্ছে রনজিতের পরিবারের মত অনেকের পরিবার।গতবারের ন্যায় এবারও ধান কাটার কাজ করেছে রনজিতসহ অনেক শিক্ষার্থী। ভাগালো গ্রুপের দলনায়ক রনজিত কুমারের সাথে কথা বলে জানা গেছে,১১ জন স্কুলের বন্ধু মিলে ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজ করছে।তারা সকাল থেকে ধান কাটে দুপুুর পর্যন্ত। দুপুরে কাটা ধান নিয়ে যায় বাড়ীতে।খাওয়া দাওয়া শেষে কাটা ধান গাছের গুড়ি, তেলের বড় টিনের ড্রাম ও সিমেন্টের ঢালায়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত মাড়াইয়ের কাজ হয়।
ভাগালো গ্রুপের সদস্য অর্জুন,বাবু, রয়েল,মমিন, আপেল এর সাথে কথা বলে আরও জানা যায়,তাদের পরিবাবের আর্থিক অবস্থা তেমন ভালো না।পরিবারে অভাব অনটন যেন নিত্যদিনের সঙ্গী।তাদের অধিকাংশ পরিবারের আয়ের উৎস হলো কৃষি কাজ।২-৩ জনের বাবা ব্যাটারিত চালিত ইজিবাইক ও অটোরিক্সা চালিয়ে সংসার চালায় তবে লকডাউনের বিপর্যয়ে উর্পাজন নেই বললেই চলে।তাই পরিবারের সমস্যার কথা চিন্তা করে তারা বন্ধুরা মিলে ভাগালো গ্রুপ করে কৃষিকাজ করছে।মৌসুমে প্রায় ২০-২২দিন ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজ চলে গড়ে প্রতিদিন মজুরি সাড়ে ৩’শ থেকে ৪’শ টাকা করে পায় মোট ৭-৮ হাজার টাকা আয় করে প্রতিজন।অর্জিত আয়ের কিছু টাকা সংসারের খরচ চালাতে পরিবারকে সহায়তা করে অবশিষ্ট টাকা দিয়ে পড়ালেখার খরচ বহন করবে।
এভাবে উলিপুর পৌর এলাকার নারিকেল বাড়ী মন্ডল পাড়ার সুকুমার,নিলয়,সুজন ও সুমন এরা ৪ জনের ভাগালো গ্রুপ করে ধান কাটছে।তারা সবাই ৮ম শ্রেণির শিক্ষার্থী।অর্জিত অর্থ দিয়ে ৮ম শ্রেণির রেজিস্ট্রেশন ফি দিবে ও বাকী অর্থ পরিবারে দিবে বলে প্রতিবেদককে জানিয়েছে।
এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার তারিকুল ইসলাম বলেন,এই এলাকা থেকে প্রশাসনের ক্লিয়ারেন্সের মাধ্যমে শ্রমিককে ধান কাটতে হাওরে পাঠানো হচ্ছে জীবিকার জন্য সেক্ষেত্রে মনে করছি পরিবারের সহযোগিতার জন্য তারা ভালো উদ্যোগ নিয়েছে।তবে তাদেরকে স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলার আহ্বান জানান তিনি।
উপজেলা কৃষি অফিসার ও কৃষিবিদ সাইফুল ইসলাম বললেন,করোনা কালীন সময়ে স্কুল পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের এমন কাজ নিঃসন্দেহ ভালো উদ্যোগ। তারা কিছুটা হলেও শ্রমিকের চাহিদা পূরণ করার পাশাপাশি নিজেরা আর্থিক ভাবে সচ্ছল হচ্ছে।উপজেলায় এবছর ২২ হাজার ১৭৬ হেক্টর জমিতে ধানের চাষাবাদ হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
এব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার নূর-এ-জান্নাত রুমি বলেন,সরকার থেকে তাদের উপর এমন কোন নির্দশনা দেয়া হয়নি। তবে পড়ালেখা ঠিক রেখে বসে না থেকে বাবা-মাকে এভাবে সাহায্য করছে এটা খুবই ভালো।এতে তারা কিশোর গ্যাং, মাদকের কবল থেকে রেহাই পাচ্ছে।এভাবে ভালো কাজে লিপ্ত থাকলে তাদের মধ্যে সহমর্মিতা বাড়বে বলে জানিয়েছেন তিনি।