ঢাকা (রাত ৩:০৫) রবিবার, ২৪শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
শিরোনাম
Meghna News লোহাগড়ায় ন্যাশনালিষ্ট ব্লাড ব্যাংকের পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা অভিযান Meghna News ট্রমালিংক ১০ বছর পূর্তিতে মতিন সৈকত এআইপিকে সন্মাননা Meghna News সরাসরি রাষ্ট্রপতি নির্বাচনসহ একগুচ্ছ সুপারিশ সংস্কার কমিশনের Meghna News গণহত্যায় অভিযুক্ত আ.লীগের কেউ নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবে না Meghna News বিএনপি যতই চাপ দিক, সংস্কারের ওপর ভিত্তি করেই নির্বাচন Meghna News সুন্দর ব্যবহার ও আচরণের বিনিময়ে জান্নাত! Meghna News আল্লাহর পথে আহ্বানকারীর জন্য রয়েছে বিশেষ পুরস্কার Meghna News ভঙ্গুর শিক্ষা ব্যবস্থা দ্রুত সংস্কার করবো: ভিসি আমানুল্লাহ Meghna News গৌরীপুরে উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসারের বর্ণিল বিদায় সংবর্ধনা Meghna News স্বামীর মধুময় স্মৃতি রোমন্থনে দিন কাটছে স্ত্রী মারজিনার

আল্লামা মুফতি মুজাহিদ উদ্দীন চৌধুরী দুবাগী (রহ.);দ্বীনের মুজাহিদ,এক পীর ও বীর

অন্যান্য ২২৭২ বার পঠিত

নিজস্ব প্রতিনিধি নিজস্ব প্রতিনিধি Clock বুধবার রাত ০১:৪৩, ২০ জুলাই, ২০২২

হাফিজ মাছুম আহমদ দুধরচকী সিলেট থেকে:-সুফী-সাধক, শায়খুত তাফসীর ওয়াল হাদীস, মুফতিয়ে আজম ও মুনাজিরে বেমিছাল, কলম সম্রাট, বর্ষীয়ান বক্তা ও সংগঠক আল্লামা মুজাহিদ উদ্দীন চৌধুরী দুবাগী (রহ.)’র সম্পর্কে সামান্য লেখার উদ্দেশ্যে কলম ধরেছি। বিগত ১০ই জুলাই ২০২০ইং এর পর থেকে এ সুমহান ব্যাক্তিত্বকে নিয়ে দেশে বিদেশে বিভিন্ন ভাষায় যথেষ্ঠ লেখা-লেখি, আলোচনা, সভা-সিম্পোজিয়াম, দোয়া-মীলাদ ও ঈসালে সওয়াব মাহফিল হয়েছে এবং হচ্ছে- আলহামদুলিল্লাহ।

বয়সের দূরত্বের কারনে আল্লামা দুবাগী (রহ.)’র সরাসরি শিষ্য হওয়ার মত সৌভাগ্য আমার হয়নি, তবে এসব উচ্চ মাক্বাম সম্পন্ন বুযুর্গদের সামান্য সময়ের ছুহবত শত বছরের সাধনার চেয়ে উত্তম। আমাদের মত যারা সরাসরি তাঁর ছাত্র হতে পারিনি, আমি মনে করি অনুসন্ধিৎসু যে কেউই তাঁর আম (সাধারন) ছাত্রত্ব থেকে মুক্ত নয়। আল্লামা মুফতি মুজাহিদ উদ্দীন চৌধুরী দুবাগী (রহ.)’র দলীল ভিত্তিক ক্ষুরধার লিখনী, কুরআন-হাদীস অনুযায়ী বয়ান এবং তাঁর ঐতিহ্যময় জীবন থেকে আমরা আমাদের চলার পথের পাথেয় সংগ্রহ করতে পারি সদা-সর্বদা অবিরত।

দ্বীনের মুজাহিদ

২রা ফেব্রুয়ারী ১৯২৯ সালে বাংলাদেশের আধ্যাত্মিক রাজধানী, শাহজালালের পূণ্যভূমি সিলেটের দুবাগ গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে যে সুসন্তানের জন্ম হয়, মা-বাবা বুক ভরা প্রত্যাশা নিয়ে সেই সন্তানের নাম রাখেন মুজাহিদ উদ্দীন যার অর্থ দ্বীনের মুজাহিদ। জনক-জননীর এ নামকরন কতটুকু স্বার্থক ও সফল হয়েছে আমরা আল্লামা মুফতি মুজাহিদ উদ্দীন চৌধুরী দুবাগী (রহ.)’র বাস্তব জীবন বিশ্লেষন করে দেখতে পারি। তার আগে মুজাহিদ শব্দটির একটু ব্যাখ্যা জেনে নেই।

মুজাহিদ আরবী শব্দ, কুরআন-হাদীসের পরিভাষায় যিনি নিজেকে দ্বীনের জিহাদে তথা ধর্মের পথে নিয়োজিত রাখেন বিশেষভাবে সশস্ত্র জিহাদে অংশগ্রহন করেন তাকে মুজাহিদ বলা হয়। পবিত্র কুরআন শরীফের সুরা আনকাবুতের শেষ আয়াতে আল্লাহ পাক এরশাদ করেন: “যারা আমার পথে (আল্লাহর পথে) সাধনায় রত হয়, আমি (আল্লাহ) আমার পথে পথ প্রদর্শন করি। নিশ্চয়ই আল্লাহ সৎ কর্মপরায়নদের সাথে আছেন।“

বিখ্যাত তাফসীর গ্রন্থ সমূহে এর ব্যাখ্যায় লিখা হয়েছে, আল্লাহর পথে চলতে গিয়ে যে সব বাধা-বিপত্তি আসে, তা দূর করার জন্য সর্বশক্তি নিয়োগ করার নাম জিহাদ। অবিশ্বাসী ও বাতিল পন্থীদের পক্ষ থেকে আগত বাধা-বিপত্তি, নফস বা প্রবৃত্তি এবং শয়তানের পক্ষ থেকে আসা সকল ধরনের বিভ্রান্তি এর অন্তর্ভুক্ত । অবশ্য জিহাদের সর্বশ্রেষ্ঠ পন্থা হচ্ছে কাফির-মুশরিকদের বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়া।

যারা এরুপ জিহাদ করে, আল্লাহ পাক তাদেরকে সুপথে পরিচালিত করেন। ভালো-মন্দ, হক্ব-বাতিল, সত্য-মিথ্যা এবং উপকার-অপকার এসব বিষয়ে যখন দোদুল্যমান অবস্থার সৃষ্টি হয়, তখন আল্লাহ তায়ালা জিহাদকারীদেরকে সহজ-সরল ও সঠিক-সুগম পথ প্রদর্শন করেন। আর এভাবে সাধনায় রত জিহাদকারীরাই দ্বীনের প্রকৃত মুজাহিদ।

আল্লামা মুফতি মুজাহিদ উদ্দীন চৌধুরী দুবাগী (রহ.)’র ছাত্র জীবন থেকে শুরু করে জীবনের শেষ মূহুর্ত পর্যন্ত জিন্দেগী বিশ্লেষন করলে আমরা পাই, শিক্ষাজীবন থেকে তিনি ছিলেন মুনাজির, হক্ব বাতিলের দ্বন্ধে বর্ষীয়ান বক্তা এবং কলমী যুদ্ধা। বিশেষভাবে বৃটেনের জমিনে মীলাদ-ক্বিয়াম বিরুধীদের জবাবে তিনি লিখেন দলীল ভিত্তিক মীলাদে বেনজীর, যা শরীয়তের চারটি ভিত্তি- কুরআন, সুন্নাহ, ইজমা ও ক্বিয়াছ এর সমন্বয়ে রচিত। বিশেষতঃ মীলাদ অস্বীকারকারীদের শীর্ষস্থানীয় পূর্বসুরীদের মীলাদ অনুষ্ঠান করা ও অনুষ্ঠানে অংশ নেয়ার সঠিক তত্ত্ব এতে তুলে ধরা হয়েছে।

যখন কথা উঠলো হজ্জে গেলে মদীনা শরীফ যিয়ারতের প্রয়োজন নেই, তখন তাদের মুখ বন্ধ করার জন্য রচনা করেন এক নজরে হজ্জ ও যিয়ারত। বিভিন্ন বিতর্কিত মাসাঈলের সুস্পষ্ট সমাধানের জন্য রচনা করেন ফাতওয়ায়ে মুজাহিদিয়া। “ কবর যিয়ারত পারে না” এসব ভন্ডামীর জওয়াব এবং কবর যিয়ারতের সঠিক পদ্ধতি ফাতেহা ও কবর জিয়ারতের মাসাঈলে রয়েছে।

বিভিন্ন মসজিদ থেকে যখন ফরজ নামাযের পর সম্মিলিত মুনাজাত বন্ধ হওয়ার উপক্রম তখন প্রকাশিত হল-দোয়ার মাহাত্ম্য। ক্বদমবুছিকে “পায়ে ধরে সালাম” নাম দিয়ে শরীয়তে এর কোন ভিত্তি নেই বলে কিছু বক্তা যখন ঝড় তুলেছিল, তখন পাঠকদের হাতে তুলে দিলেন কুরআন-হাদীস ভিত্তিক কদমবুছির তথ্য। এমনিভাবে জানাযার পর দোয়া আছে ইহা প্রমান করেন-জানাযার নামাযের পর দোয়া করা বইতে।

শবে বরাত বলে কিছু নেই বলে যখন ঐ রাতে অনেক মসজিদ বন্ধ করে রাখা হতো, তখন সেই মহান লেখক কুরআন-সুন্নাহর আলোকে রচনা করেন শবে বরাতের ফদ্বীলত। কিছুদিন থেকে আমাদের মাঝে একটি নতুন রোগের সৃষ্টি হয়েছে, বিভিন্ন মসজিদে দেখা যায় টুপি ছাড়াই খালি মাথায় অনেকে নামায আদায় করতেছেন, দ্বীনের মুজাহিদ ব্যথিত হয়েছেন দলীল – প্রমান দিয়ে লিখেছেন, টুপি পরা সু্ন্নাত।

এ সবের ভিত্তিতে সন্দেহাতীত ভাবে আমরা এ সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারি, আল্লামা মুফতি মুজাহিদ উদ্দীন চৌধুরী দুবাগী ( রহঃ ) একজন খালিছ দ্বীনের মুজাহিদ ছিলেন, আর যারা দ্বীনের মুজাহিদ আল্লাহ পাক তাদের সাথী, সুতরাং দুনিয়া ও আখেরাতে তাদের কোন ভয় কিংবা চিন্তা নেই।

এক পীর

পীর উর্দু শব্দ যার আরবী হচ্ছে ওলী, বহুবচন আওলিয়া। আরবী ভাষায় ওলী অর্থ যথাক্রমে অনুগত, বন্ধু, নিকটবর্তী, উত্তরাধিকারী এবং সাহায্যকারী ইত্যাদি। পবিত্র কুরআন শরীফের সূরা ইউনুসে আল্লাহ পাক এরশাদ করেন, “মনে রেখো যারা আল্লাহর ওলী, তাঁদের না কোন ভয়-ভীতি আছে, না তাঁরা হবে চিন্তিত। যারা ঈমান এনেছে এবং তাক্বওয়া অর্জন করেছে।”

জামে কেরামতে আওলিয়া কিতাবে উল্লেখ করা হয় “ওলী সেই ব্যাক্তি, যিনি পাপ থেকে বিরত থেকে অনবরত আনুগত্যের সাধনায় রত থাকেন।“ তাফসীরে মাযহারীতে বর্ণনা করা হয়, ওলায়ত শব্দের অর্থ মহব্বত এবং ইশক্ব, আর ইশক্ব হচ্ছে এমন এক আগুন যা মাহবুব ব্যতীত সব কিছুকে ভস্ম করে। যাকে তাসাউফের পরিভাষায় ফানা ফিল্লাহ বলা হয়।

সুলতানুল আরিফীন কিতাবে একটি হাদীসে ক্বুদসী লিখা হয়- “যে আমাকে চায়, সে আমাকে পায়, যে আমাকে পায়, সে আমাকে পরিচয় করতে পারে, যে আমাকে পরিচয় করতে পারে, সে আমাকে মহব্বত করে, যে আমাকে মহব্বত করে, সে আমার আশিক হয়ে যায়, যে আমার আশিক হয়ে যায়, আমি তাকে হত্যা করে ফেলি, আমি যাকে হত্যা করে ফেলি, তাঁর ক্ষতিপূরণ দেয়ার দায়িত্ব আমার, আর সেই ক্ষতিপূরণ হচ্ছি আমি স্বয়ং।”

এ পর্বে ছহীহ বুখারী শরীফ থেকে একখানা হাদীসে ক্বুদসীর বঙ্গানুবাদ পেশ করছি, “নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন, যে আমার ওলীর সাথে দুশমনী রাখে, আমি তার সাথে যুদ্ধের ঘোষনা করি।

আমার কিছু বান্দা নফল ইবাদতের মাধ্যমে আমার এত নৈকট্য লাভ করতে থাকে যে আমি তাকে মহব্বত করি। আর আমি যাকে মহব্বত করি। তাঁর শ্রবন শক্তি আমি হয়ে যাই যা দিয়ে সে শ্রবন করে, আমি তাঁর দৃষ্টি শক্তি হয়ে যাই যা দিয়ে সে দেখে, আমি তাঁর হাত হয়ে যাই যা দিয়ে সে স্পর্শ করে, আমি তাঁর পা হয়ে যাই যা দিয়ে সে হাটে, সে যদি আমার কাছে কিছু চায়, অবশ্যই আমি তা প্রদান করি।”

এতক্ষণ পবিত্র কুরআন-হাদীসের আলোকে বেলায়ত বা ওলী আল্লাহ সম্পর্কে আমরা যে ধারনা লাভ করলাম, সে আলোকে আল্লামা মুফতি মুজাহিদ উদ্দীন চৌধুরী দুবাগী (রহ.)কে একটু নিরীক্ষণ করতে চাই।

এ পর্যন্ত উক্ত মনীষী সম্পর্কে যতটুকু জেনেছি এবং বক্ষ্যমাণ স্মরনীকা এ সব থেকে প্রাপ্ত উপাত্ত। বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তানসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে তাঁর যেসব কাছের মানুষ, ছাত্র, মুহিব্বীন, মুরীদীন এবং আত্মীয়-স্বজন রয়েছেন, তাদের কাছ থেকে সংগৃহীত স্মৃতিচারন এবং তথ্যপুঞ্জ সন্দেহাতীত ভাবে প্রমান করে আল্লামা মুফতি মুজাহিদ উদ্দীন চৌধুরী দুবাগী (রহ.) একজন বড় মাপের ওলী বা পীর ছিলেন। ঐতিহ্যবাহী সিলেট সরকারী আলিয়া মাদ্রাসা থেকে হাদীস শাস্ত্রে সর্বোচ্ছ ডিগ্রী লাভকালীন (১৯৬১-৬২) তিনি উপমহাদেশের প্রখ্যাত শায়খুল হাদীস ওয়াত তাফসীর, মুজাদ্দিদে জামান শামছুল উলামা আল্লামা ফুলতলী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি এর সান্নিধ্যে থেকে তাসাউফের মেহনত শুরু করেন।

প্রকাশ থাকে যে, ওলায়াতের বিভিন্ন রূহানী মেহনত, রিয়াজতের বিভিন্ন স্তর রয়েছে, যা সফলভাবে অতিক্রম করার পর তাসাউফের একাডেমিক স্বীকৃতি লাভ করে একজন ব্যক্তি খেলাফত বা ইজাজত লাভে ধন্য হন। আল্লামা মুফতি মুজাহিদ উদ্দীন চৌধুরী দুবাগী (রহ.) তাঁর পীর ও মুরশিদের তত্ত্বাবধানে তরীক্বতের বিভিন্ন স্তর অতিক্রম করে তাসাউফের উচ্চ শিখরে আরোহন করেন এবং ১৯৬২ সনের পর তরীক্বতের ইজাজত লাভ করেন।

তিনি তাঁর বাকী জীবনে তরীক্বতের প্রাপ্ত দায়িত্ব যথাযত পালন করে গেছেন, যেমন খেদমতে খলক্ব, দ্বীনের মেহনত ও রিয়াদ্বত এবং বৃটেনের বিভিন্ন স্থানে খানেক্বা প্রতিষ্ঠা করে আমৃত্যু তরবীয়ত প্রদান করেন। ঠিক তেমনিভাবে বেলায়তের উপর তিনি রচনা করেন, পূন্যের দিশারী।

বীর

বক্ষ্যমাণ আলোচনায় আল্লামা মুফতি মুজাহিদ উদ্দীন চৌধুরী দুবাগী (রহ.)’র অসংখ্য গুনাবলী থাকা সত্বে ও আমি মাত্র তিনটি উপাদী বা শিরোনামের মধ্যে আলোচনাকে সীমাবদ্ধ রাখার কারন কি? উত্তরে বলতে পারি বর্তমান যান্ত্রিক সমাজে আমাদের মাঝে কিছু ভ্রান্ত ধারনা প্রচলিত আছে, যেমন যারা দ্বীনের মুজাহিদ তারা শুধু অস্ত্র-সস্ত্র আর যুদ্ধ-বিগ্রহ নিয়ে ব্যস্ত, তাসাউফের সাথে তাদের কোন সম্পর্ক নেই, থাকতে পারেনা।

কেননা তাসাউফ নাকি মানুষকে মাটিতে মিশিয়ে ফেলে, আদ্রতা আর নম্রতা শেখায়। আসলে কি শুধুই তাই, মোটেই না, বাস্তবে তাঁরাই প্রকৃত মুজাহিদ যারা তাসাউফের উচ্চ মার্গে আরোহন করে দ্বীনের খেদমত চালিয়ে যান। জৈনপুরী-বদরপুরী ছিলছিলা সহ সকল হক্ব ও মক্ববুল তরীক্বত পন্থীদের সংগ্রামী জীবন এর সমুজ্জল প্রমান।

আবার কিছু নামধারী নতজানু আহলে তাসাউফের দাবীদার রয়েছেন যারা লোক সমাজের ভয়ে, নিজের জনপ্রিয়তাকে ধরে রাখার স্বার্থে, সবার কাছে ভালো থাকার জন্য প্রয়োজনীয় ও হক্ব কথা বলা থেকেও বিরত থাকেন। আলহামদুলিল্লাহ আমি যে দ্বীনের মুজাহিদ এক পীর ও বীর আল্লামা মুফতি মুজাহিদ উদ্দীন চৌধুরী দুবাগী (রহ.) সম্পর্কে লিখছি তিনি ছাত্র জীবন থেকে পার্থিব জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত হক্ব-বাতিলের দ্বন্ধে ছিলেন বেপরোয়া, সাহসী বক্তা, তর্কবাগীশ (মুনাযীর), বাতিলের আতংক।

বিভিন্ন মুনাযীরার ক্ষেত্রে তিনি একাই ছিলেন একশ। যেখানে যাকে যা বলা প্রয়োজন শিক্ষা দেয়ার স্বার্থে বা হক্ব প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে তিনি তা বলেই ছাড়তেন – সেই হিসাবে আমরা তাঁকে এক সাহসী বীর সৈনিক হিসাবে জানতাম। শেষ বয়সে প্রায়ই তিনি অসুস্থ থাকতেন কিন্তু কোন দ্বীনী মাহফিলে দাওয়াত রাখলে, শারীরীক অবস্থাকে কোন গুরুত্ব না দিয়ে হামাগুড়ি দিয়ে হলেও মঞ্চে উপস্থিত হতেন, যেমন দেখেছি লন্ডনের সকল ঈদে মীলাদুন্নবী মাহফিলে, আল ইসলাহর সকল অনুষ্ঠানে, শামছুল উলামা আল্লামা ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ (রহ.), আল্লামা বিস্কুটি (রহ.) এবং আল্লামা বর্নী (রহ.)’র ঈছালে ছওয়াব মাহফিলে।

একবার এই মহামনীষীর সাথে এক সপ্তাহের সফর সঙ্গী হওয়ার সৌভাগ্য আমার হয়েছিল, স্বল্প সময়ে তাঁর ছুহবত থেকে সামান্য যা দেখেছি তা উল্ল্যেখ করতে চাই। ২০১৫ সালের রবিউল আউয়াল মাসে আমেরিকা মিশিগানের ঈদে মীলাদুন্নবী (সাঃ) উদযাপন কমিটির উদ্যোগে আয়োজিত দু’দিন ব্যাপী ঈদে মীলাদুন্নবী (সাঃ) মাহফিলের প্রধান অতিথি ছিলেন আল্লামা মুফতি মুজাহিদ উদ্দীন চৌধুরী দুবাগী (রহ.), তাঁর সফর সঙ্গী ছিলেন তাঁর ছাহেবজাদা মাওলানা ওলীউর রহমান চৌধুরী এবং আমি নগন্য ও। সভাপতি হাজী এবাদুর রহমান সাহেবের সাথে আমরা বিভিন্ন মসজিদ সফর করেছি।

বায়তুল ইসলাম মসজিদে জুমার ইমামতি করেন আল্লামা দুবাগী ছাহেব, নামাযের এক্বামতের সময় একজন মুছল্লী প্রথম থেকে দাড়িয়ে ছিলেন, দুবাগী ছাহেব বললেন “হাইয়া আলাল ফালাহ” – বলতে দাড়াতে হয় এর আগে নয়, বসুন। একটি মুস্তাহাব আমলের বাস্তব শিক্ষা পেলাম। মাগরীবের নামাযে আমরা বায়তুন নূর মসজিদে হাজির হই, জামাতের এক রাকাত আমাদের মিস হয়ে যায়, জামাত শেষে তাবলীগ জামাতের এক বুযুর্গ এলান করলেন – নামায শেষে ঈমান আমল সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ বয়ান হবে আমরা সবাই বসি ভাই।

আমরা তখনও নামাযে, তাদের বয়ান শুরু হয়ে যায়, সালাম ফিরানোর পর আল্লামা মুফতি মুজাহিদ উদ্দীন চৌধুরী দুবাগী (রহ.) বললেন, আগে আমাদেরকে নামায পড়তে দিন পরে বয়ান করবেন। উনার কথায় তারা থেমে গেল। অথচ আমরা বিদেশে মুসাফির, তাঁর সাহসিকতা দেখে তায়াজ্জুব হয়েছিলাম।

শুধু তাই নয়, সফরের পুরোটা সময় তিনি আমার মত নগন্যকে আল্লামা সম্বোধন করতেন, আমি লজ্জা বোধ করেছি, তবে বুঝতে পেরেছি এত বড় মাপের পীর ও বীরগন কত মহত হতে পারেন এবং অধীনস্থদেরকে কত উর্ধে মুল্যায়ন করেন। ইতোপুর্বে ২০০৪ সালে হজ্জের সফরে মুযদালিফার ময়দানে প্রথম সাক্ষাতে সেই মনীষীর সুন্নতের উপর আমল, তথ্যপুর্ন বয়ান এবং সাহসিকতায় আমাকে মুগ্ধ করেছিল।

আল্লামা মুফতি মুজাহিদ উদ্দীন চৌধুরী দুবাগী (রহ.) স্বশরীরে আমাদের মাঝে আর বেঁচে নেই ঠিকই, এ লীলা নিকেতন থেকে তাঁর অবস্থান আজ দূরে বহু দূরে, মহীয়ান-গরীয়ান আল্লাহ পাকের করুনাসিক্ত হয়ে তিনি চলে গেছেন চিরকালীন সুখাবাসে। যেখান থেকে কেউ প্রত্যাবর্তীত হয়নি কোন দিন, কখনো। তবে কথা হলো, অসাধারণ ব্যক্তিত্বের পার্থিবলোকে আগমন যেমনি বৈশিষ্ট্যপূর্ণ তেমনি পরলোক গমন ও তাৎপর্য মন্ডিত। সকল মৃত্যু সমান নয়, জ্ঞানীদের পরিভাষায় জ্ঞানী জনের মৃত্যু বিশ্বভূবনের মৃত্যু তুল্য।

সত্যিকার অর্থে আমরা গুনীজনের সঠিক মূল্যায়ন তখনই করতে পারবো, যখন তাঁদের পূন্যময় জীবন থেকে মনি-মুক্তাসম পাথেয় সংগ্রহ করবো, অনাগত প্রজন্মের কাছে তাঁর জীবনের শিক্ষাকে যথোপযুক্তভাবে প্রেরণ করতে সক্ষম হব।

উপসংহারে এ কথা বলতে পারি, আল্লামা মুফতি মুজাহিদ উদ্দীন চৌধুরী দুবাগী (রহ.)’র সঠিক মূল্যায়ন কেবলমাত্র বক্তৃতা আর প্রকাশনার মাধ্যমে করা অসম্ভব, তিনি অনন্য-অতুলনীয়। আল্লামা মুফতি মুজাহিদ উদ্দীন চৌধুরী দুবাগী (রহ.) একজন দ্বীনের প্রকৃত মুজাহিদ, সত্যিকার পীর এবং সাহসী বীর ছিলেন। তিনি ছিলেন এমন এক আলোর মশাল যা থেকে পথহারা তমসাচ্ছন্ন অনেক পথিক চলার পথের আলোক রশ্মি লাভে ধন্য হয়েছেন।

আল্লাহ পাক তাঁকে জাযায়ে খায়ের দান করে তার মায়ার ওলিকে জান্নাতুল ফেরদৌসে সু-উচ্চ আসনে সমাসীন করুন। আমীন।


লেখকঃ হাফিজ মাওলানা মোহাম্মদ হেলাল উদ্দীন, ইমাম ও খতীব, শাহজালাল জামে মসজিদ, কিথলী, ইংল্যান্ড




শেয়ার করুন

GloboTroop Icon
পাঠকের মতামত

মেঘনা নিউজ-এ যোগ দিন

Meghna Roktoseba




এক ক্লিকে জেনে নিন বিভাগীয় খবর



© মেঘনা নিউজ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by ShafTech-IT