সৌদি সিংহাসনের নতুন উত্তরসূরি বিন সালমান
আরিফুল ইসলাম বৃহস্পতিবার সকাল ০৯:৩২, ২২ জুন, ২০১৭
সৌদি আরবের বাদশাহ সালমান তাঁর উত্তরসূরির পদ থেকে নিজের ভাইপো মোহাম্মদ বিন নায়েফকে সরিয়ে দিয়ে ছেলে মোহাম্মদ বিন সালমানকে বসিয়েছেন। সৌদি বাদশাহ গতকাল বুধবার এই ফরমান জারি করায় বিন নায়েফের সিংহাসনের আরোহণের সম্ভাবনা কার্যত শেষ হয়ে গেল।
নতুন যুবরাজ ৩১ বছর বয়সী বিন সালমান উপপ্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করবেন। পাশাপাশি প্রতিরক্ষামন্ত্রীর দায়িত্বও চালিয়ে যাবেন। আর ৫৭ বছর বয়সী বিন নায়েফ অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা (স্বরাষ্ট্র) বিভাগের প্রধানের পদটাও হারিয়েছেন। বার্তা সংস্থা এসপিএ জানায়, তিনি নতুন যুবরাজকে সহযোগিতার অঙ্গীকার করেছেন।
সৎভাই আবদুল্লাহ বিন আবদুল আজিজের মৃত্যুর পর ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে বাদশাহ সালমান সৌদি সিংহাসনে আরোহণ করেন। দেশটিতে সচরাচর সত্তরোর্ধ্ব ব্যক্তিদেরই বাদশাহর দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায়। সেই হিসাবে প্রিন্স বিন সালমানের সর্বশেষ পদোন্নতি ও দ্রুত উত্থানকে তরুণ প্রজন্ম একটা পরিবর্তনের চিহ্ন হিসেবে দেখছে।
যুবরাজ মনোনীত হওয়ার আগে থেকেই বিন সালমান বিস্তর প্রভাবশালী হিসেবে আবির্ভূত হন। অতিরক্ষণশীল রাজতন্ত্রের দেশটিতে অর্থনৈতিক ও সামাজিক সংস্কার বাস্তবায়নের নানা উদ্যোগে তিনি নেতৃত্ব দিচ্ছেন। ২০১৫ সালে উপযুবরাজের পদ পাওয়ার পর থেকেই তিনি ক্ষমতার আওতা সম্প্রসারণ করতে থাকেন। বিবিসি জানায়, তাঁর বাবা ৮১ বছর বয়সী বাদশাহ সালমানের শারীরিক অবস্থা যথেষ্ট ভালো নেই।
ইয়েমেনে চলমান যুদ্ধে সৌদি আরবের নেতৃত্ব দেওয়ার পাশাপাশি দেশটির জ্বালানি নীতি এবং অর্থনৈতিক সংস্কারের বিষয়গুলো দেখভালের দায়িত্ব প্রিন্স বিন সালমানের। আর প্রিন্স বিন নায়েফ অনেক বছর ধরে দেশটির নিরাপত্তাপ্রধানের দায়িত্বভার সামলেছেন। জিহাদি জঙ্গিদের বিরুদ্ধে তিনি কঠোর অবস্থান নেন। সন্ত্রাস দমন দপ্তরের নেতৃত্বে তিনিই ছিলেন এবং যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যসহ সৌদি আরবের পশ্চিমা মিত্রদের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখেন।
সৌদি টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে প্রচারিত ফুটেজে দেখা যায়, শ্মশ্রুমণ্ডিত যুবরাজ বিন সালমান পদচ্যুত প্রিন্স বিন নায়েফের হাত চুম্বন করছেন এবং তাঁর সামনে হাঁটু গেড়ে রয়েছেন। আর বিন নায়েফ তাঁর কাঁধ চাপড়ে অভিনন্দন জানিয়ে বলছেন, ‘আমি এখন বিশ্রামে যাচ্ছি। আল্লাহ্ তোমার সহায় হোন।’ জবাবে বিন সালমান বলছেন, ‘আল্লাহ আপনার সহায় হোন। আমি আপনার পরামর্শ বিনা কখনো কাজ করব না।’
কুয়েতের আমির শেখ সাবাহ আল-আহমদ আল-জাবের আল-সাবাহ সৌদি আরবের নতুন যুবরাজ বেছে নেওয়ায় বাদশাহ সালমানকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।
২০১৫ সালের মার্চে ইয়েমেনে সামরিক অভিযান শুরুর পর থেকে সৌদি আরব আগের চেয়ে বেশি আগ্রাসী পররাষ্ট্রনীতি অবলম্বনের আভাস দেয়। চলতি মাসে দেশটির নেতৃত্বে আরব উপসাগরীয় বেশ কয়েকটি দেশ একসঙ্গে কাতারের সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদ করে সেই অবস্থান আরও স্পষ্ট করে। কাতারের বিরুদ্ধে সৌদির অভিযোগ, দেশটি কট্টরপন্থীদের সমর্থন দিচ্ছে। তবে দোহা এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে।