বাবা-মানে হাজারো স্বপ্ন
মোঃ বুলবুল হোসেন রবিবার রাত ০৩:০৪, ১৮ জুলাই, ২০২১
সাইফুলের মনটা আজকে বেশ খারাপ গম্ভীর মুখে বসে আছে। ছোট বলে মাও কিছু বলতেছে না।কেন যে গম্ভীর হয়ে বসে আছে? হঠাৎ বাবা বাড়িতে আসে কিন্তু সাইফুল কিছুই বলতেছে না। বাবা জিজ্ঞাসা করল কি ব্যাপার বাবা তুমি মুখ গম্ভীর করে বসে আছো কেন। বাবা তোমার সাথে কোন কথা বলবো না। কেন বাবা তুমি কথা বলবে না, বলবে তো কি হয়েছে। এমন সময় সাইফুল বলল, রহিমের বাবা লাল রঙের একটা ষাঁড় নিয়ে এসেছে। আমাদের কবে কিনবে? বাবা বলল, কালকে আমাদের গ্রামের হাট থেকে কিনে আনবো। তোমাকে নিয়ে যাবো তোমার যেটা পছন্দ হয় সেটাই কিনে আনবো।এবার বাবা তুমি চলো গোসল করে খাওয়া দাওয়া করি। বাবার কথা শুনে খুশি হয়ে গেল। কাল কখন আসবে কখন বাজারে গিয়ে পছন্দের ষাঁড় কিনে আনবো এই ভেবে কিছু পাচ্ছেনা। সাইফুলের এমন আনন্দ দেখে বাবা-মা খুশি হয়ে গেল। সাইফুলের দাদা বলল, দাদু ভাই আমিও তোমার সাথে যাবো আমরা সবাই গিয়ে ষাঁড় কিনে আনবো।
বারবার সাইফুল দাদুকে সে প্রশ্ন করে। দাদু কালকে কখন হবে আমরা ষাঁড় কিনতে যাবো।
রাত্রে যখন সবাই খেতে বসেছে। তখন বাবা বলল, সাইফুল তোমার জন্য জামা কাপড় কিনবো তাহলে একসাথে দুটাই হবে। সাইফুল বললো, বাবা আমার জামা কাপড় চাইনা। তুমি আমার ষাঁড় কিনে দাও। তাতেই আমি খুশি। সাইফুলের কথা শুনে বাবা খুশি হয়ে গেলো। এমন সময় দাদা বললো দশটা না পাঁচটা না একটা মাত্র নাতি তোমাকে অবশ্যই ভালো জামা কিনে দিতে হবে। দাদুর কথা শুনে সাইফুল না করতে পারল না। দাদু যা বলেছে তাই, এরপর বাবা বলল ঠিক আছে। তোমাকে কাপড় ষাঁড় একই দিনে দেয়া হবে। এবার খেয়ে নাও। সবাই মিলে রাতের খাবার শেষ করে।
দাদার সাথে ঘুমাতে যাবে সাইফুল।সাইফুলের সাথে দাদাও ছেলে মানুষের মতো ব্যবহার করা শুরু করে। সকালে ঘুম থেকে উঠে সাইফুল বাবাকে ডেকে তোলে বলল, সকালে খাবে না দুপুর হয়ে যাবে। সাইফুলের কথা শুনে বাবা শুয়ে থাকতে পারল না। তখন তাড়াতাড়ি উঠে হাত মুখ ধুয়ে খেয়ে নিলো বাজারে যাবে বলে।
সবাই মিলে যখন বাজারের দিকে রওনা দিলো। সাইফুলের এক বন্ধু অনেক গরীব যাদের নুন আনতে পান্তা ফুরায়। সে সামনে আসলো একটা ছেড়া জামা গায়ে। তখন সাইফুল তার বাবাকে বললো বাবা আমার বন্ধুকে একটা নতুন জামা কিনে দেবে। বাবা বলল, ঠিক আছে তুমি বলছো অবশ্যই দিব। সাইফুল তার বন্ধুকে ডেকে বলল দোস্ত চল আমরা হাটে যাই। সাইফুলের বন্ধু বলে দোস্ত আমরা গরীব মানুষ একটা জামা কিনতে পারি না। ওখানে গিয়ে আমি কি করবো। সাইফুল বললো আমি যে গরুটা কিনবো ওই গরুটা তুই নিজের মনে করবি। সাইফুল যদিও ছোট তার বন্ধু তার মতোই।তবু তারা বুঝতে শিখেছে। আবেগে সাইফুলের বন্ধু কেঁদে ফেলে।এমনকি খুশি হয়ে যায় সাইফুলের কথা শুনে। গরুর হাটে ঢুকে সাইফুল দাদুকে বলে দাদুর ওইযে লাল গরুটা দেখা যাচ্ছে,এই গরুটা আমার চাই দাদু বলল আচ্ছা ঠিক আছে।চলো গিয়ে দেখি তোমার পছন্দ কি রকম।
দাদু গিয়ে দেখে ঠিক আছে,সাইফুলের পছন্দ দাদুর পছন্দ হয়ে যায় লাল ষাড়টা। এমন সময় বাবা বলল ঠিক আছে, দাঁড়াও দেখছি। তখন গরুটাকে দাম করলো, দাম মিটিয়ে গরু নিয়ে বাড়ির দিকে রওনা দিলো। তারা রওনা দেওয়ার আগে সাইফুল ও তার বন্ধুর জন্য জামা কাপড় কিনে নেয়। সাইফুলের বন্ধু তাদের সাথে আসতে থাকে।
বাড়িতে এসেই সাইফুলের বাড়িতে গরুটা বেঁধে রেখে যখন সাইফুলের বন্ধু তার বাড়িতে চলে যায়। তখন তার বন্ধু তার মাকে বলে সাইফুলের বাবা নতুন জামা কিনে দিয়েছি এবং ঈদে আমাকে দাওয়াত দিয়েছে।তাদের গরু কুরবানি দিবে।সারাদিন আমাকে থাকতে বলছে মা। মা বলল সাইফুলের বাবা অনেক ভালো মানুষ সে আমাদেরকে অনেক সাহায্য করে।অবশ্যই থাকবে বলে আড়ালে আঁচল দিয়ে চোখের পানি মুছতে থাকে। আসলেই এই কান্না সুখের, দুঃখের না। সাইফুল বাবার কাছে গিয়ে বলে বাবা জানো তুমি সত্যি খুব ভালো। তুমি যে জামাটা কিনে দিয়েছো আমার বন্ধুকে সে তার মাকে দেখিয়েছে তার আম্মা অনেক খুশি হয়েছে। আমাদের জন্য দোয়া করছে।যা টাকা দিয়ে কিনতে পাওয়া যায় না।