ফুলে ফুলে সরিষা ক্ষেত ভরে ওঠায় খুশি গাইবান্ধার কৃষক-কৃষাণীরা
তারিক আল মুরশিদ,গাইবান্ধা রবিবার ১২:০৯, ২০ ডিসেম্বর, ২০২০
গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ বিস্তীর্ণ ফসলী মাঠের চারপাশে যেন বসেছে হলুদের মেলা! হলুদ রং মেখে প্রকৃতি নিজেকে সাজিয়েছে অপরূপ রূপে।গাইবান্ধার সদরসহ ৭ টি উপজেলার মাঠে মাঠে এখন শোভা পাচ্ছে সৌন্দর্য্য মন্ডিত সরিষা ফুল।গ্রামের দিগন্ত মাঠ সেজেছে হলুদ সরিষা ফুলের সমারোহে। সরিষা ফুলের মুহ মুহ গন্ধ সকলকেই আকৃষ্ট করে । ভোরে আলোর আভা ফুটে উঠতে মধু আহরণে লাখ লাখ মৌমাছি ও প্রজাপতির আনাগোনা দেখা যায় ক্ষেতে ক্ষেতে।রঙিন প্রজাপতি আর মৌমাছির মধু আহরণে সরিষা ফুলের পরাগায়ণ ঘটছে।আর এসব আয়োজনের পাশাপাশি কৃষকের চোখমুখে খুশির ঝলকানি। এ সরিষা আবাদ করে মুনাফার স্বপ্ন দেখছেন জেলার কৃষকরা।
জানা যায়, অনুকুল আবহাওয়া আর যথাযথ পরিচর্যার কারণে গাইবান্ধায় এবার সরিষার আবাদ ভাল হয়েছে।জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ২০২০-২১ মওসুমে গাইবান্ধায় ১০ হাজার ৫ শ’ ৫৫ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। গত মওসুমে (২০১৯-২০) আবাদ হয়েছিল ৯ হাজার ৫১০ হেক্টর জমিতে গত মওসুমের তুলনায় চলতি মওসুমে সরিষার আবাদ বেড়েছে।ইতোমধ্যে ফুলে ফুলে সরিষা ক্ষেত ভরে ওঠায় খুশি কৃষক-কৃষাণীরা। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ভালো দানার সরিষা পাবেন বলে আশা করছেন তারা।জেলার নিম্নাঞ্চলের কৃষকদের সাথে কথা বললে তারা জানান, গেল বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে এবারে অন্যান্য ফসলের পাশাপাশি চাষ করা হয়েছে নানান জাতের সরিষা। এ ফসলটি স্বল্পমেয়াদি ও খরচ কম হওয়ায় চাষিদের মধ্যে আগ্রহ বেশি। তারা আরও জানান, বীজ বোনার ৯০ দিনের মধ্যে সরিষার ফলন ঘরে তোলা যায়। সরিষা চাষে সেচ ও রাসায়নিক সার অল্প প্রয়োজন হওয়ায় খরচও কম হয়। এতে লাভও ভালো হয়।
এছাড়াও অনেক কৃষক মৌসুমের শুরুতেই সবজি হিসেবে সরিষা শাক বিক্রি করে নগদ টাকাও আয় করেন। তাছাড়া সরিষার পাতা জমিতে পড়ে সবুজ সার তৈরি হয়। যা বোরো চাষে জৈব সারের চাহিদা মেটায়।কথা হলে, গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার কৃষক সাইদুল জানান, এ বছর সরিষা ভালো হয়েছে। ফুলে ফুলে মাঠ ভরে গেছে, কিছুদিন পরে দানা (সরিষা) আসবে।সরিষার চাষে সেচ সার ও শ্রম কম লাগে এতে খরচ কম হয় এবং দানা ও ফলন ভাল হলে অধিক লাভবান হওয়া যায় তাই সরিষা চাষ করি।
গাইবান্ধার সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে বারী-১৫ জাতসহ প্রায় ১৪ প্রজাতীর সরিষা চাষ করা হয়েছে।খোঁজ নিয়ে জানা যায় এ জেলার সরিষার বড় মাঠ হল গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার শালমারা ইউনিয়নের বাইগুনীর কাঁকড়াবিল এলাকা,এ এলাকার বিস্তৃত মাঠজুড়ে সরিষার ক্ষেত।এ ক্ষেতে সকালের রোদে ঝলমল করতে থাকে মাঠভর্তি হলুদ সরিষা ফুল। যতদূর চোখ যায় কেবল হলুদ আর হলুদ।এ যেন হলুদ ফুলের রাজ্য।এ রাজ্যে সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে মুক্তার মতো ঝিকমিকে শিশির কণা গড়িয়ে নামে।
এদিকে নাগরিক জীবনে হাঁপিয়ে উঠলে একটু সময় করে হলুদের রাজ্যে ঘুরতে আসে কেউ কেউ।সরিষা ফুলের হলদে সৌন্দর্যের মুগ্ধতা নিতে এ দিগন্ত হলুদ মাঠে ছুটে আসেন তরুণ তরুণীরাও।