গৌরীপুরে বিদ্যালয় মাঠ যেন জলাশয়
ওবায়দুর রহমান,গৌরীপুর,ময়মনসিংহ সোমবার রাত ১০:১০, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২০
ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার রামগোপালপুর ইউনিয়নের ৫১ নং ডাউকী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠটি দেখে মনে হবে বন্যায় প্লাবিত নিম্নাঞ্চল বা মাছ চাষ করার উপযোগী কোনো জলাশয়।
বিদ্যালয়ের ভবন দুটি পাকা থাকলেও মাঠটি একটি আবদ্ধ জলাশয়। বিদ্যালয়টিতে প্রায় ৩ শতাধিক শিক্ষার্থী পড়াশুনা করলেও তাদের খেলাধূলা করার কোন সুযোগ নেই। বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯০৯ সালে। এই শতবর্ষী বিদ্যালয়টির মাঠের কোন উন্নয়ন নেই, বছরের অর্ধেকের বেশি সময় মাঠটি জলাবদ্ধ অবস্থায় থাকে।
২১শে সেপ্টেম্বর সরেজমিনে দেখা যায়, বিদ্যালয়টির পুরো মাঠ পানিতে থইথই করছে। করোনায় দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা স্কুলে আসছে না। যদি স্কুল খোলা থাকতো তাহলে ভোগান্তিতে পড়তে হতো এই শিক্ষার্থীদের।
গণমাধ্যমকর্মীকে দেখে ছুটে আসা স্কুলের আশেপাশের প্রায় ১৫ ক্ষুদে শিক্ষার্থী জানায়, আমাদের স্কুলের মাঠে এখন গরু ধোঁয়া হয়, বিদ্যালয়ের মাঠটি ঠিক করে না দিলে স্কুল খোলা হলেও আমাদের খেলার জায়গা থাকবে না।
বিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী ও বিদ্যালয়ের সাবেক সহ-সভাপতি ফজলুল হক জানান, চার দিকে পুকুর খনন করে বিদ্যালয়ে যে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করে বিদ্যালয়ের যে পরিবেশ নষ্ট করতেছে এতে অনেক সচেতন অভিভাবক এ বিদ্যালয় থেকে তাদের সন্তানদের অন্য বিদ্যালয়ে নেওয়ার কথা ভাবছেন।
আবুল হোসেন নামের একজন জানান, বিদ্যালয়ের মাঠে এত পানি কোন সময় আসেনা। আমার আরো বড় ভাই আছে তাদের ৬০/৭০ বছর বয়স তারাও এই বিদ্যালয়ের ছাত্র, তাদের জীবনেও এ মাঠে এত পানি দেখে নাই। কিন্তু এই বিদ্যালয়ের জীবনে এ ধরনের ইতিহাস কোন সময় দেখা যায়নি। এই এলাকার বিদ্যালয়ের চারপাশে যাদের জমি আছে তারা তাদের ইচ্ছা মত পুকুর খননের কারণে আজ এই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে।
অন্য এক অভিভাবক খুরশেদ আলম জানান, চতুর দিকে ফিসারী করে স্কুলের মাঠে পানি জমাইয়া রাখছে যার কারণে আজ বিদ্যালয় মাঠের এ অবস্থা। কিছুদিন আগে বিদ্যালয় কর্তপক্ষকে না জানিয়েই শতবর্ষী বড় বড় গাছের ডাল পালা কেটে দিয়েছে ফিসারী মালিকরা।
এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে মিয়া হোসেন জানান বিদ্যালয়ের দক্ষিণ পুর্ব পাশে একটি খাল সেটি সরকারি খালের সাথে সংযোগ ছিলো। বিদ্যালয়ের দক্ষিণ পাশের পুকুরের মালিক উক্ত খালটির প্রায় ২০/২৫ ফুট জায়গা জবরদখল করে পুকুর বানিয়ে ফেলেছে। বর্ষার পানি নামার কোন সুযোগ না থাকায় বিদ্যালয়ের মাঠটিতে পানি জমে রয়েছে। এলাকার কিছু অসাধু লোক বিদ্যালয়ের কিছু জায়গাও দখল করে নিয়েছে।
স্থানীয়রা আরো জানায় অপরিকল্পিতভাবে ফসলি জমিতে পুকুর খনন করে উঁচু পাড় তৈরী করায় এবং পানি নিষ্কাশনের কালভার্টসমূহের মুখ বন্ধ করে দেওয়ার কারণে এই শতবর্ষী বিদ্যালয়ের খেলার মাঠটি শিক্ষার্থীদের ব্যবহারের অনুপোযোগী। এলাকাবাসীসহ বিদ্যালয়ের অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা মাঠটি ব্যবহার উপযোগী করার জন্য কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এ কে এম ফারুক আহমেদের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অভিভাবক এবং এলাকাবাসী এ বিষয়ে আমাকে বলার পর উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার মুজাহিদ স্যারের সাথে বলেছি। বিদ্যালয়ের জায়গা দখলের বিষয়ে তিনি বলেন, যদি বিদ্যালয়ের জায়গা যদি কেউ দখল করে থাকে তাহলে তা ফেরত দিয়ে দিবে।
এ বিষয়ে দায়িত্বে থাকা সহকারী শিক্ষা অফিসার মুজাহিদুল ইসলামের কাছে তথ্য জানতে চাইলে তিনি বলেন একটু পরে আসেন। উপজেলা শিক্ষা অফিসার মনিকা পারভিনের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, সরেজমিনে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।