ঢাকা (বিকাল ৪:২২) শুক্রবার, ৫ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
শিরোনাম

চাঁপাইনবাবগঞ্জে ড্রাই ম্যাংগো তৈরীতে নিরলশ পরিশ্রম করছেন শামীম

এস এম সাখাওয়াত এস এম সাখাওয়াত Clock মঙ্গলবার রাত ০৯:৫৭, ১৯ আগস্ট, ২০২৫

ইসমাইল খান শামীম। উত্তরের জেলা আমের রাজধানী চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার শিবগঞ্জ পৌর এলাকার খানপাড়া মহল্লার বাসিন্দা। পারিবারিকভাবে আম ব্যবসার সাথে জড়িত। আর চাঁপাইনবাবগঞ্জের নানা ঘ্রাণ ও স্বাদের আমকে বিশ্বে পরিচিত করাকে বেছে নিয়েছেন নিজের পেশা হিসেবে। নিজে যেমন নানা জাতের আমকে দেশে বিদেশে পরিচিত করাচ্ছেন, ঠিক তেমনই সাধারণ আম চাষিদের দাবি আদায়ের জন্যও কাজ করছেন তিনি। ফলশ্রুতিতে গত দুই বছরের একক প্রচেষ্টায় চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলায় আন্তর্জাতিক বাজারের জনপ্রিয় খাদ্য পণ্য থাইল্যান্ডের ‘ড্রাই ম্যাংগো’ প্রোডাক্ট তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন তিনি। ফলশ্রæতিতে কৃষক থেকে উদ্যোক্তা সকলেই গ্রামীণ অর্থনীতিতে নতুন স্বপ্ন দেখছেন।

 

ইসমাইল খান শামীম জানান, ছোটকাল থেকে পরিবারের বড়দের সাথে আম ও আমজাত পণ্য নিয়ে কাজ করি। এরই মধ্যে ২০২২ সালে থাইল্যান্ডে গিয়েছিলাম। সেখানেই প্রথম ‘ড্রাই ম্যাংগো’ বিষয়টি দেখে পছন্দ হয়। পরে সেখান থেকে ফিরে এসে নিজের তৈরী করা বাগানে ‘ড্রাই ম্যাংগো’ প্রসেসিংয়ের যন্ত্রাংশ বানিয়ে কার্যক্রম শুরু করি। আর এ্ কাজে সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন বিদেশি সংস্থা সুইস কন্ট্যাক্ট। এখন তাদের সহযোগীতায় তৈরী করা প্রসেসিং ফ্যাক্টরীতে আশ্বিনা আম দিয়ে দিনে এক মনের বেশি ‘ড্রাই ম্যাংগো’ তৈরি করা হয়।

 

তিনি আরও জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জের বাগানগুলিতে আম মৌসুমে প্রায় ৬০ শতাংশ আম গাছ থেকে পেকে পড়ে নষ্ট হয়ে যায়। কোনো কাজে পাওয়া যায় না এসব আম। আর তাই আমরা আমাদের জেলার ঐতিহ্য আম যেগুলো গাছেই প্রায় নষ্টের মতো হয় তা পেড়ে থাইল্যান্ডের ‘ড্রাই ম্যাংগো’ প্রসেসে প্রক্রিয়াজাত করে বাজারজাত করলে স্থানীয় আম চাষীরা লাভবান হতে পারেন।

 

এ বিষয়ে শামীম খানের কারখানা শ্রমিক আকালু হক বলেন, ‘ড্রাই ম্যাংগো’ প্রজেক্টে প্রথমত গাছ থেকে আম নামানো হয়। এরপর আমগুলো ভালোভাবে ধুয়ে এর চামড়া বা চোকা ছাড়ানো হয়। তারপর পাতলা স্লাইস করে আধুনিক ড্রায়িং মেশিনে দেয়া হয়। এখানে কয়েক ঘণ্টা তাপ ও বায়ু প্রবাহের নিয়ন্ত্রিত প্রক্রিয়ায় শুকিয়ে নেয়া হয় প্রতিটি স্লাইস। পরে এটি খাওয়ার উপযোগী হলে অত্যন্ত সুস্বাদু হয়।

 

শিবগঞ্জ সুইস কন্ট্যাক্টের এলএডি কর্মকর্তা আলামিন আলি বলেন, সারা বিশ্বে ‘ড্রাই ম্যাংগো’ অত্যন্ত জনপ্রিয়। আমরা বাংলাদেশে এ পণ্যের বিস্তার ঘটাতে চাই। এতে স্থানীয় অর্থনীতির উন্নয়ন হবে। লাভবান হবেন চাষি।

 

চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মুনজের আলম মানিক বলেন, এমনিতেই চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমের স্বাদ বিশ্বব্যাপি। কিন্তু একটি নির্দিষ্ট সময় পরে আম প্রেমিরা আর এই স্বাদ চাইলেও নিতে পারেননা। যদিও এখন বারোমাসী কিছু আমের প্রচলন আছে। আর তাই বারোমাস এসব পণ্যের বিস্তার ঘটানো গেলে কমদামি আমের দাম বাড়ার পাশাপাশি আম চাষীরা লাভবান হবেন। তবে প্রক্রিয়াজাতকরণে সরকারের সহযোগিতা একান্ত প্রয়োজন বলে মনে করেন সাধরণ সম্পাদক মানিক।

 

চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ডা. মো ইয়াছিন আলী বলেন, আমকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের একটি স্বর্ণালী ফসল হিসেবে আখ্যায়িত করা যায়। কিন্তু এত বছর এই আম নিয়ে কোন উদ্দ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। এখন জেলায় আমের প্রক্রিয়াজাতকরণের দিকে নজর দেয়া হচ্ছে। যারা নতুন উদ্যোক্তা তাদের সবধরনের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। এই ‘ড্রাই ম্যাংগো’র বিস্তার ঘটান গেলে চাঙ্গা হবে জেলার অর্থনীতি। লাভবান হবেন চাষি।

 

জেলায় একমাত্র চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে তৈরি হচ্ছে ‘ড্রাই ম্যাংগো’। স্বাদ ও ঘ্রাণে অনন্য আশ্বিনা জাতের আমকে আধুনিক প্রক্রিয়ায় রূপ দিয়ে এ ‘ড্রাই ম্যাংগো’ তৈরি করছেন স্থানীয় উদ্যোক্তা ইসমাইল খান শামীম। যা একদিকে বদলে দিচ্ছে আমের কদর। অন্যদিকে খুলে দিচ্ছে অর্থনৈতিক সম্ভাবনার নতুন দুয়ার।




শেয়ার করুন


পাঠকের মতামত

মেঘনা নিউজ-এ যোগ দিন

Meghna Roktoseba




এক ক্লিকে জেনে নিন বিভাগীয় খবর



© মেঘনা নিউজ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by ShasTech-IT