গাজা ট্রাজেডির ১১তম দিন: যেসব কারণে হামাস এগিয়ে
মেঘনা নিউজ ডেস্ক বুধবার সন্ধ্যা ০৭:০২, ১৮ অক্টোবর, ২০২৩
বিশ্বের প্রভাবশালী গোয়েন্দা সংস্থা আর আয়রন ডোম নামের বিশেষ অস্ত্র বিধ্বংসী প্রাচীর ভেঙে দিয়ে ৭৩ বছরের এক নজিরবিহীন ইতিহাস গড়ে পরাশক্তির ইসরায়েলের ভূখণ্ডে হামলায় কপোকাত করে গাজা উপত্যকার হামাস যোদ্ধারা। বিশ্বের তাবড়-তাবড় দেশও চমকে ওঠেছে ফিলিস্তিন স্বাধীনতাকামী সংগঠন
হামাসের এই ভিন্ন রণকৌশলেও, নির্বাক হয়েছে স্বয়ং ইসরায়েলের সশস্ত্রবাহিনীও (আইডিএফ)।
যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত ৫ লাখ ইহুদি দেশ ত্যাগ করেছেন।
অপরদিকে একজন ফিলিস্তিনিও দেশ ত্যাগ করে নি। বিষয়টি তাদের রাষ্ট্রীয়
গণমাধ্যমে জানিয়েছেন ইসরায়েলর নিরাপত্তা বাহিনী(আইডিএফ)।
আইডিএফ আরও জানায়, “হামাস আমাদের মারাতে চায়, তারা মরতে জানে, এর আগে
তারা আমাদের মেরে তারপর মরে।”
রাসুল (সা.) এর ভাষ্যমতে,মুসলিম উম্মার হৃদপিণ্ড হলো ফিলিস্তিন। এই ফিলিস্তিন রক্ষায় কেয়ামতের আগপর্যন্ত মুসলমানরা বুকে তাজা রক্ষ ঢেলে দিবে এটাই আল্লাহর পক্ষ থেকে ফায়সালা। আর মুসলমান-যুদ্ধের ময়দান থেকে পালাতে জানে না,তাঁরা জীবনের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে লড়াই করতে জানে।
গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, ইসরায়েলের এমন নৃশংস আগ্রাসনের কারণে দেশটির প্রধানমন্ত্রী নেতা নিয়াহুর পদত্যাগ দাবি করছে দেশের ৫৬% সাধারণ মানুষ।
গাজায় ইসরায়েল স্থল অভিযানের সামনে কী কী বিপদ :
গাজায় ইসরায়েল স্থল অভিযান শুরু করলে বিপদে পড়বে এটা নিশ্চিত করেছেন ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ। একারণে যুদ্ধের ময়দান থেকে পালিয়ে যাচ্ছে অনেক ইসরায়েলি সশস্ত্র বাহিনীর কর্মকর্তা ও সদস্যরা।
কারণ হিসেবে জানা যায়, বিশ্বের অন্যতম গণবসতি এলাকা এটি , পাশাপাশি এমন গিঞ্জি এলাকার নিচে পুঁতে রাখা হামাসের গ্রেনেড ও মাটির তলে টানেল মহা বিপদের হাতছানি দিচ্ছে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর সামনে।
সেই সঙ্গে ইসরায়েলের বেসামরিক লোকজনসহ প্রতিরক্ষা বাহিনীর কর্মকর্তা মিলিয়ে প্রায় আড়াই শত ইসরায়েলি নাগরিক বন্দী রয়েছে হামাসের হাতে। ইসরায়েল চায় যুদ্ধ সন্ধি ব্যতীত অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করতে এসব যুদ্ধ বন্দী নাগরিকদের। কিন্তু ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর একবরাতে বুঝা যায়,বন্দী চুক্তির বিনিময়ে যুদ্ধ বন্ধ করলে এসব বন্দীদের ফিরিয়ে দিবে হামাস।
এসব যুদ্ধ বন্দীদের অক্ষত অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে হামাসের কাছে ইসরায়েলের মাথা নত করা ছাড়া উপায় নেই।
অপরদিকে গতকাল গাজা উপত্যকার রামাল্লাহর ব্যাপস্টিট আল-আহলি হাসপাতালের ইসরায়েলি বায়ু সেনাদের বর্বরোচিত নারকীয় নৃশংস বোমা হামলার আঘাতে ৫ শত বেসামরিক লোকজনের প্রাণহানি(শহীদ) হয়েছেন। এতে ক্ষোভে ফুঁসে ওঠছে আরব দুনিয়া। এই হামলা স্পষ্ট আন্তর্জাতিক যুদ্ধ আইন পরিপন্থী ও যুদ্ধ অপরাধ বলে আখ্যা দিয়েছেন রাশিয়া,কম্বোডিয়া,আরব বিশ্বসহ অনেক রাষ্ট্র।
গতকাল রাতে গাজায় বোমা হামলার কারণে আজ বুধবার আসছেন ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠ মিত্র মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আসছেন নেতা নিয়াহকে বার্তা দিতে। ইসরায়েলকে এই যুদ্ধে বাইডেন প্রশাসন কৌশলগত সমর্থন জানিয়ে পড়েছে মহাবিপদে।
সমানে আমেরিকার নির্বাচন। জাতীয় নির্বাচনে বুড়ো বাইডেন আবারও প্রেসিডেন্ট না হতে পারেন এমন আশংকাও ডালপালা মেলেছে। তাই সার্বিক অংক কষে স্পষ্ট অনুমান করা যায়, ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র ঘরে বাইরে চাপে রয়েছে।
ইউক্রেন -রাশিয়া যুদ্ধেও আমেরিকার পররাষ্ট্র নীতি ব্যর্থ। এক বক্তব্যে গাজা ট্রাজেডির জন্য আমেরিকার দিকে আঙ্গুল তুলে দোষ দিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
মধ্যপ্রাচ্য বা আরববিশ্ব: গাজা ট্রাজেডি নিয়ে ইসরায়েলের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের আরেক মিত্র দেশ সৌদি আরবকেও বশে আনতে পারছে না আমেরিকা। যুক্তরাষ্ট্র অনেক দেনদরবার করছেন যাতে ইসরালের পক্ষে না আসলেও সৌদি আরবকে নীরব রাখা যায়। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিংকিন ঝটিকা সফরে গোটা আরববিশ্ব ভ্রমণ করে আলোচনা ফলপ্রসু না হওয়া নিরাশ বুকে খালি হাতে ফিরে যান। ইসরায়েলের সঙ্গে সকল যুক্তি বাতিল করেছে সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স বিন সালমান। অপরদিকে সহসাই যুদ্ধ বন্ধ না করলে ইসরায়েলকে মাটিতে মিশিয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন বিশ্বের শক্তিধর দেশ ইরান। লেবাননের ইজবুল্লাহসহ আরব দুনিয়ার একাধিক শক্তিশালী সংগঠন ইসরায়েলের সকল কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করে যুদ্ধের ময়দানে নামার সকল আয়োজন সম্পন্ন করেছেন।
সবমিলিয়ে বুঝা যায় আধুনিক সমরাস্ত্রে শক্তিশালী হলেও বিভিন্ন রণকৌশলগত কারণে বিজয়ের নতুন চাঁদ উঁকি দিবে ফিলিস্তিনের আকাশে।
হোসাইন মোহাম্মদ দিদার,
কবি ও সাংবাদিক,
দাউদকান্দি, কুমিল্লা।