সরকার নির্ধারিত দামে সার মিলছেনা গাইবান্ধায়
তারিক আল মুরশিদ,গাইবান্ধা সোমবার রাত ০২:১১, ৭ ফেব্রুয়ারী, ২০২২
গাইবান্ধায় সরকার নির্ধারিত দামে মিলছে না রাসায়নিক সার। ট্রিপল সুপার ফসফেট (টিএসপি) ও মিউরিট অফ পটাশে (এমওপি) বস্তাপ্রতি ২শ থেকে ৩শ টাকা অতিরিক্ত দাম দিতে হচ্ছে বলে অভিযোগ কৃষকদের।
কৃষকদের অভিযোগ, ডিলার কিংবা খুচরা বিক্রেতারা নিজস্ব গোডাউনে রাসায়নিক সার মজুত রেখে বাজারে সংকট দেখিয়ে সিন্ডেকেট করে অতিরিক্ত দামে বিক্রি করছে।
তবে ডিলাররা বলছেন, ‘কৃষকদের অভিযোগ মিথ্যা। সরকার নির্ধারিত দামেই সার বিক্রি করা হচ্ছে।’
এদিকে কৃষি বিভাগ বলছে, অতিরিক্ত দামে সার বিক্রির অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সরেজমিনে গাইবান্ধার বিভিন্ন সার ডিলারের গোডাউন ঘুরে দেখা যায়, গোডাউনে পর্যাপ্ত সার মজুত আছে। তারপরও ডিলাররা অতিরিক্ত দামে সার বিক্রি করছেন।
গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার দলদলিয়া গ্রামের কৃষক হারুন মিয়া বোনারপাড়া বাজারের বিসিআইসি নিবন্ধিত ডিলার মেসার্স সারকার ট্রেডার্সে আসেন সার কিনতে। লাল কাপড়ের সাইনবোর্ডে সারের বাজার মূল্য দেখে সার কিনতে চাইলেও ডিলার বস্তাপ্রতি ২০০-৩০০ টাকা বেশি নিয়েছেন।
ডিলারের সামনেই কৃষক হারুন মিয়া অভিযোগ করেন, সাঘাটা উপজেলার বোনারপাড়া বাজারের সারের ডিলার মেসার্স সরকার ট্রেডার্স চার্ট অনুযায়ী ইউরিয়া সারের দাম ছাড়া সব সার বস্তাপ্রতি এক-দুশ টাকা বেশি নিচ্ছেন। চার্ট অনুযায়ী টিএসপি সার ১১০০ টাকা লেখা থাকলেও বিক্রি করছেন ১৪০০ টাকায়। পটাশ সার ৭৫০ টাকা লেখা থাকলেও ৯০০ টাকার কমে দিচ্ছেন না৷
সাঘাটা উপজেরার বোনারপাড়া ইউনিয়নের কৃষক জাহিদুল ইসলাম জানান, বোরো মৌসুমের প্রথম দিকে স্থানীয় ডিলাররা সার গোডাউনে রেখে কৃষকদের সার সংকট দেখান। বস্তাপ্রতি বেশী মূল্য দিলে মিলছে সার। আমরা সরকার নির্ধারিত মূল্যে সার কিনতে চাই।
গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার সোনাইডাঙ্গা গ্রামের সৌরভ আকন্দ জানান, আমি এক ডিলারের কাছে পটাশ সার কিনতে গেলে প্রথমে বলে পটাশ সার নেই। টাকা বেশি দিতে চাইলে সার দেয়। ৭৫০ টাকার সার ১০০০ টাকা দিয়ে কিনতে হয়েছে।
একই এলাকার কৃষক নুর মোহাম্মদ জানান, ডিলার কিংবা খুচরা বিক্রেতারা নিজস্ব গোডাউনে রাসায়নিক সার মজুত রেখে বাজারে সংকট দেখিয়ে সিন্ডেকেট করে অতিরিক্ত দামে বিক্রি করছেন। সরকারিভাবে তদারকি না করলে কৃষকরা আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হবেন।
পলাশবাড়ী উপজেলার তালুক জামিরা গ্রামের কৃষক আবুল কাদের জানান, পলাশবাড়ীর বিভিন্ন খুচরা সার বিক্রেতারা প্রতি কেজি ১৬ টাকার ডিএপি সার সার ২০ টাকা, ১৫ টাকার এমওপি বা পটাশ সার ২০/২৫ টাকা ও ২২ টাকার টিএসপি সার ৩৫ থেকে ৪০ টাকায় কিনতে হচ্ছে৷
সারের দাম বৃদ্ধি নিয়ে সাঘাটা কচুয়া ইউনিয়নের খুচরা বিক্রেতা বাদশা মিয়া বলেন, আমরা ডিলারদের কাছ থেকে পাইকারিভাবেই বেশি দামে সার কিনছি। এজন্য খুচরা পর্যায়েও বেশি দামে বিক্রি করা হয়।
বিসিআইসি অনুমোদিত সার ডিলার সরকার ট্রেডার্সের মালিক মো. সাকোয়াত হোসেন সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমরা সরকার নির্ধারিত মূল্যেই সার বিক্রি করি। একটি টাকাও বেশি নেই না। কৃষকরা মিথ্য অভিযোগ করছেন।
বিসিআইসি অনুমোদিত সার ডিলার মো. মাহফুজার রহমানের রাসায়নিক সার গোডাউনের ম্যানেজার আবু সুফিয়ান বলেন, বিপুল পরিমাণ ইউরিয়া, ট্রিপল সুপার ফসফেট (টিএসপি), মিউরিট অফ পটাশ (এমওপি), ডাই-অ্যামোনিয়াম ফসফেট (ডিএপি) মজুত আছে। আমরা সরকার নির্ধারিত দামেই বিক্রি করছি। এ ব্যাপারে সাঘাটা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. সাদেকুজ্জামান বলেন, সরকারিভাবে ট্রিপল সুপার ফসফেট (টিএসপি) ৫০ কেজির বস্তা ১১০০ টাকা, মিউরিট অফ পটাশ (এমওপি) ৫০ কেজির বস্তা ৭৫০ টাকা, ডাই-অ্যামোনিয়াম ফসফেট (ডিএপি) ৫০ কেজির বস্তা ৮০০ টাকা, ইউরিয়া ৫০ কেজির বস্তা ৮০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রায় ৯৫ ভাগ বোরো ধান রোপন শেষ। যদি কোনো কৃষক অতিরিক্ত দামে সার ক্রয়ের অভিযোগ করেন আর আমরা প্রমাণ পাই তাহলে সেই ডিলারের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গাইবান্ধা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উন্নয়ন শাখার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. শহীদার রহমান বলেন, জেলায় গত এক মাসে ২ হাজার ৪১৪ মেট্রিক টন টিএসপি, ৩ হাজার ২৮৭ মেট্রিক টন এমওপি, ৬ হাজার ১০৭ মেট্রেকটন ডিএপি ও ৮ হাজার ৮২৮ মেট্রিকটন ইউরিয়া সার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১ হাজার ৪৩৬ মেট্রিকটন টিএসপি, ১ হাজার ৭০৫ মেট্রিক টন এমওপি, ২ হাজার ৯৩৩ মেট্রেক টন ডিএপি ও ৪ হাজার ৯২২ মেট্রিকটন ইউরিয়া সার জেলার সাত উপজেলার বিসিআইসির ১১১ জন ও বিএডিসির ১১৮ জন ডিলারের মাঝে সরবরাহ করা হয়েছে। যা কৃষকদের কাছে সরকার নির্ধারিত দামে বিক্রি করা হচ্ছে।