ঈদের ছুটি
মোঃ বুলবুল হোসেন সোমবার রাত ০২:৩৫, ২৬ জুলাই, ২০২১
গত চার–পাঁচ মাস হলো সুমন বাড়িতে যায়নি। তাই এবার ঈদে সুমন বাড়ি যাবে। অনেক আশা নিয়ে বসে আছে। কিন্তু সুমনের বস বলল, তোমাকে ঈদের একদিন পরে যেতে হবে। সামনে করোনার কারণে লকডাউন।তাই লকডাউনের আগে অফিস করে বাড়ি যেতে হবে । এই কথা শুনে মনটা খারাপ হয়ে গেল। কি আর করার বসের কথা তো মানতেই হবে। প্রাইভেট জব বসের কথা না শুনলে চাকরি থাকবে না। সব দিক থেকে বিবেচনা করে সুমন ভাবলো ঈদের পরের দিনই না হয় যাই। দুইদিনের জন্যই এমন কি আর হবে।
এদিকে সুমন বাড়ি যাওয়ার প্রহর গুনতে থাকে। কখন সময় আসবে বাড়ি যেতে পারবে। এর আগে কোনদিন পরিবার ছাড়া ঈদ করেনাই। তাই একটু মন খারাপ, কিছু করার নেই চাকরি তো করতে হবে। দুই দিন অফিস করার পর যখন কাঙ্ক্ষিত সময় আসলো বাড়ি যাওয়ার। মনে যেন এক স্বস্তির নিশ্বাস ভাবে কখন বাড়ি পৌঁছাতে পারবে। বসকে বলে সুমন অফিস শেষ হওয়ার দুই ঘন্টা আগে অফিস থেকে রওনা দেয় বাড়ি যাওয়ার উদ্দেশ্যে। সুমনের অফিস থেকে গ্রামের বাড়ি যেতে প্রায় ছয়–সাত ঘণ্টা লেগে যায় তাই সে দূরপাল্লার একটি বাসের টিকিট কেটে রেখেছিল। বাস কাউন্টারে গিয়ে সুমন বসে থাকে। কখন সে বাসে উঠে বসবে।
প্রায় আধা ঘণ্টা অপেক্ষা করার পর বাস কাউন্টারে এসে পৌঁছায়। তখন সুমন টিকেট নিয়ে বাসে উঠে বসে। কন্টাক্টর সুমনের পূর্বপরিচিত এর আগেও অনেকবার এই বাসে যাতায়াত করেছে। তাই কন্টাকটর সুমনের জন্য ভালো একটা সিট রেখে দিয়েছিলো।
বাসটা কাউন্টার থেকে একশত গজ দূরে যেতেই হঠাৎ করে ছাদে থেকে একটি লোক পড়ে যায়। পরে শোনা যায়, লোকটি ছাদে উঠে ছিল যাত্রীর জিনিস গুলো আছে সেগুলো বেঁধে রাখার জন্য। ড্রাইভার সেটা খেয়াল করেনি যে এখনো শেষ হয়নি জিনিসগুলো বেঁধে রাখা। গাড়ি টান দিতেই লোকটি পড়ে যায়। পরে তার মাথা ফেটে যায়,পা ভেঙে যায় । আরেক পা কেটে যায়, রক্ত পড়তে থাকে। লোকটির খোঁজ খবর নিয়ে জানতে পারলাম গাড়ির স্টাফ।
দৌড়ে গিয়ে লোকটিকে তুলে একটি সিএনজি তে বসালাম। সিএনজিতে তুলে গাড়ির কাছে নিয়ে আসা হল। যেহেতু গাড়ি লোক তাই অন্যায় স্টাফরা চেয়েছিল যে সামনে কোন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য। ড্রাইভার গাড়ী থেকে নেমে সামনে একশত গজ দূরে দাঁড়িয়ে ছিল। যদি মানুষ তাকে মারে সেই ভয়ে। তারপর ড্রাইভার থেকে চাবি নিয়ে আসলো অন্য এক লোক।
কন্টাকটর গাড়িটা একশত গজ সামনে নিয়ে ড্রাইভারকে তুলে। সাথে সাথে গেট আটকে দেয় ড্রাইভার গাড়িটা চালাতে থাকেন। এদিকে লোকটি আমার পাশের সিটে বসেছিল। লোকটি ব্যথার যন্ত্রণায় কান্নাকাটি করতে ছিল। কেউ পানি দেয় আবার কেউ রক্ত গুলো মুছে দেয়। রক্ত বন্ধ করার জন্য বেঁধে রাখার মতো কিছু ছিল না। সামনে এক বৃদ্ধ মহিলা ছিলো। সে তার ব্যাগ থেকে একটা ওড়না বাহির করে দিল ক্ষতস্থানে বেঁধে রাখার জন্য।
গাড়ির সবাই লোকটির জন্য দোয়া করতে থাকে। এদিকে রাস্তাটা তেমন যানজট ছিল না তবু গাড়িটা যতদূর সম্ভব দ্রুত চালানোর চেষ্টা করল । সবাই ড্রাইভারকে বললো আরেকটু জোরে টানেন লোকটি মারা যাবে। লোকটির পা থেকে রক্ত টপটপ করে পড়তে ছিলো। গাড়িটা কিছুদূর যাওয়ার পরই লোকটি হাত পা অবশ হয়ে ছিল। সবাই ভেবেছিল এখন আর বাঁচানো যাবেনা। একপর্যায়ে হাসপাতালে কাছাকাছি গাড়িটি এসে যায়। ড্রাইভার যখন গাড়িটা থামালো। তখন সুমন আরও কয়েকজন লোক মিলে হাসপাতালের দিকে লোকটিকে নিয়ে গেল।
ইমারজেন্সিতে নিয়ে যাওয়া হলো। ডাক্তার দ্রুত চলে আসে। ডাক্তার এসে লোকটিকে ব্যান্ডেজ করে দেয়। ডাক্তার বলল অন্তত তিন চার ঘন্টা থাকতে হবে। ড্রাইভার বলল আমরা রোগীকে নিয়ে যাবো। সুমন ড্রাইভারকে ধমক দিয়ে বলল একজন মানুষের জীবন বাঁচতেছে না আর আপনি বলতেছেন এখনি নিয়ে চলে যাবেন। সে যাবে কিভাবে? রক্তের দরকার,অনেক রক্ত দিতে হবে । আচ্ছা ঠিক আছে ভাই আপনারা যেটা ভালো মনে করেন একে রেখে যাই। অসুস্থ রোগীকে হাসপাতালে রেখে সবাই যখন গাড়িতে এসে বসলো তখন ড্রাইভার আবার গাড়ি চালাতে থাকেন।
সুমনের বাড়ি যাওয়ার আনন্দটুকু শেষ হয়ে যায়। বারবার লোকটির কথা ভাবতে থাকে। কি হলো? লোকটি কিছুক্ষণ আগে ভালো ছিল । আমাদের জীবনে কখন কি হয়ে যায় বলা যায়না। গাড়িতে ভ্রমণ করার সময় আমরা সবাই যেন একটু দেখেশুনে চলাচল করি। এই লোকটির মত যেন আর কারো জীবনে না হয়। আল্লাহ আমাদেরকে মাফ করুন,আমীন।