অসহায় বৃদ্ধা জহুরা বেগমকে আল্লাহ ছাড়া সাহায্য করার কেউ নেই
মোজাম্মেল আলম ভূঁইয়া,সুনামগঞ্জ মঙ্গলবার বিকেল ০৫:২৮, ২৯ ডিসেম্বর, ২০২০
সুনামগঞ্জে অসহায় বৃদ্ধা জহুরা বেগম (৬৫) কে আল্লাহ ছাড়া সাহায্য করার মতো কেউ নেই। কারণ তার বাবা বেঁচে নেই। নেই ভাই বোন। স্বামী দীর্ঘদিন যাবত নিখোঁজ। নিজের কোন জায়গা-জমি নেই। তাই সরকারের পতিত ভূমিতে লতাপাতা দিয়ে ছোট একটি মাটির কুঁড়ে ঘর তৈরি করে সেখানেই করছেন বসবাস। আর বেশির ভাগ সময় না খেয়েই থাকতে হচ্ছে তাকে। তারপরও এই বৃদ্ধা জহুরা বেগমের ভাগ্যে আজ পর্যন্ত জুটেনি সরকারী কোন সাহায্য-সহযোগীতা। এই অসহায় জহুরা বেগমের বাড়ি জেলার শাল্লা উপজেলার চব্বিশা নামক একটি অবহেলিত গ্রামে। হাওর এলাকা হাওয়ার কারণে এখানে প্রচন্ড শীত দেখা দিয়েছে। কিন্তু নেই তার শীতবস্ত্র। চোখের জল আর একটি মাত্র কাপড় দিয়ে সীমাহীন কষ্ঠ বুকে নিয়ে শুধুমাত্র আল্লাহর সাহায্যের অপেক্ষায় রয়েছেন তিনি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়- হাওর বেষ্টিত সুনামগঞ্জ জেলার শাল্লা উপজেলার ৪নং শাল্লা ইউনিয়নের কান্দিরগাঁও গ্রামের মৃত জয়ধর আলীর মেয়ে অসহায় বৃদ্ধা জহুরা বেগম। তার স্বামীর নাম সওদাগর মিয়া। তারা দুজন একই ইউনিয়নের বাসিন্দা। বিয়ের পর তাদের ৩ মেয়ের জন্ম হয়। এরপর সংসারে দেখা দেয় অভাব-অনটন। দরিদ্র সওদাগর মিয়া সংসারের ঘানী টানতে ব্যর্থ হয়ে পৈতৃক সম্পদ যা ছিল তা বিক্রি করে প্রায় ৭বছর আগে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যান। এরপর থেকে স্ত্রী জহুরা বেগম ও ৩ মেয়ের সাথে সওদাগর মিয়ার নেই কোন যোগাযোগ। বর্তমানে সওদাগর মিয়া কোথায় আছেন কেমন আছেন তা কেউ জানেনা।
এমতাবস্থায় কোন উপায় না পেয়ে উপজেলার কান্দিরগাঁও মৌজার সরকারী খাস পতিত ভূমিতে আশ্রয় নেন অসহায় জহুরা বেগম। কিন্তু হাওরের মাঝে অবস্থান হওয়ার কারণে জহুরা বেগমের বাড়ির চারপাশে আর কোন ঘরবাড়ি নাই। এবং সেই সাথে নেই কোন সড়ক যোগাযোগের ব্যবস্থা। আর বর্যাকাল আসলে পানিতে ডুবে যায় জহুরা বেগমের বাড়ি-ঘর। তখন অসহায় জহুরা বেগমকে পড়তে হয় মহাবিপদে। যোগাযোগ ও জন বিচ্ছিন্ন হাওরের মাঝে বসবাস করার কারণে প্রকৃতির সাথে ও নিজের জীবন বাচাঁনোর জন্য প্রতিনিয়ত লড়াই করছেন বৃদ্ধা জহুরা বেগম। এসবের মধ্য দিয়ে অনেক কষ্ঠ করে এলাকাবাসীর সহযোগীতায় ৩ মেয়েকে বিয়ে দিয়েছিলেন অসহায় জহুরা বেগম। কিন্তু তার মেয়েদের ভাগ্যেও সয়নি স্বামীর সংসার। বর্তমানে এক মেয়ে কোন রকম সংসার টিকিয়ে রেখেছেন। আর স্বামী পরিতেক্তা বাকি দুই অসহায় মেয়ে ও ৩ নাতি-নাতনীকে নিয়ে হাওরের মাঝে অবস্থিত ছোট মাটির কুড়েঁর ঘরেই কোন রকম বসবাস করছেন। এবং ২ মেয়েকে নিয়ে এলাকার বিভিন্ন বাড়িঘর ও অন্যের জমিতে কাজ-কর্ম যা পান তা দিয়েই চলছে তাদের সংসার। প্রায় ৬বছর যাবত বিভিন্ন ভাবে সংগ্রাম করে এভাবেই বেঁচে আছেন অসহায় এই বৃদ্ধা জহুরা বেগম।
এব্যাপারে অসহায় বৃদ্ধা জহুরা বেগম কাঁদতে কাঁদতে বলেন- আমার অসহায় ২ মেয়ে ও নাতি-নাতনীকে নিয়ে মানুষের বাড়িতে কাজ করে যা পাই তা দিয়ে খেয়ে না খেয়ে এক কাপড়ে দিন যাচ্ছে। চেয়ারম্যান-মেম্বারের কাছে গেলে তারা খারাপ ব্যবহার করে তাড়িয়ে দেয়। আমি তাদেরকে টাকা দিতে পারিনা তাই সরকারের দেওয়া বয়স্কভাতা,ভিজিডি ও ভিজিএফ কার্ড কোন কিছুই পাইনা। এই পৃথিবীতে আল্লাহ ছাড়া আমাকে সাহায্য করার মতো আর কেউ নেই।
এব্যাপারে শাল্লা উপজেলার নাছিরপুর ও কান্দিরগাঁও গ্রামের বাসিন্দা রহিম উদ্দিন,সাহাব উদ্দিন,আজিজুল হক,রহমান মিয়া,আলী হোসেনসহ আরো অনেকেই বলেন- বৃদ্ধা জহুরা বেগমের মতো একজন অসহায় নারীকে কেন সরকারী সাহায্য দেওয়া হয়না। তার মতো অসহায় নারীদের পাশে সরকারের এগিয়ে আসা উচিত। এব্যাপারে আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সুদৃষ্টি কামনা করছি।