ঢাকা (দুপুর ২:৫৪) শনিবার, ২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
শিরোনাম
Meghna News ভঙ্গুর শিক্ষা ব্যবস্থা দ্রুত সংস্কার করবো: ভিসি আমানুল্লাহ Meghna News গৌরীপুরে উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসারের বর্ণিল বিদায় সংবর্ধনা Meghna News স্বামীর মধুময় স্মৃতি রোমন্থনে দিন কাটছে স্ত্রী মারজিনার Meghna News চাঁপাইনবাবগঞ্জের কৃতি সন্তান সানাউল্লাহ হলেন নির্বাচন কমিশনার Meghna News চাঁপাইনবাবগঞ্জে সাড়ে ৩ লক্ষ টাকার মাদক উদ্ধার, আটক-১ Meghna News নাগরপুরে যদুনাথ স. প্রা. বিদ্যালয়ে মা সমাবেশ অনুষ্ঠিত Meghna News দ্রুত সুমনের মৃত্যুর রহস্য উদ্ঘাটনের দাবি জানাল পরিবার Meghna News সাপ্তাহিক বৈচিত্র্যময় সিলেটের সম্পাদক গরম পানিতে ঝলসে গুরুতর আহত Meghna News চাঁপাইনবাবগঞ্জে খাস জমি নিয়ে দ্বন্দ্ব, সংঘর্ষে নিহত একজন Meghna News চাঁপাইনবাবগঞ্জে নিখোঁজের ৪ দিন পর আদিবাসী শিশুর মরদেহ উদ্ধার

১৩ নভেম্বর হাতিয়া গণহত্যা দিবস পালিত

সাজাদুল ইসলাম,কুড়িগ্রাম সাজাদুল ইসলাম,কুড়িগ্রাম Clock শুক্রবার বেলা ১২:৫০, ১৩ নভেম্বর, ২০২০

মহান মুক্তিযোদ্ধের উত্তাল একাত্তরের ১৩ নভেম্বর পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর হাতে উত্তরাঞ্চলের সবচেয়ে বড় নারকীয় গণহত্যার শিকার হয়েছিল  কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার হাতিয়া ইউনিয়নে সাধারণ জনগণ।

হাতিয়া গণহত্যার মূল স্থান দাগারকুটি গ্রাম। দেশ স্বাধীন হওয়ার মাত্র ৩২ দিন আগে ওই দিন শুধু পাক হানাদার বাহিনী নয় , অস্ত্র চালিয়েছিল জামায়াতে ইসলামের নিজস্ব আধা-সামরিক বাহিনী। তাদের দোসর স্থানীয় রাজাকার,আল-বদর, আল-সামস বাহিনী ও দালালদের প্রত্যক্ষ সহায়তায় উপজেলা হতে ৮ কিলোমিটার পূর্বে ব্রহ্মপুত্র নদ বেষ্ঠিত হাতিয়া দাগারকুটি গ্রামে অপারেশনের নামে নির্মম ও জঘন্যতম বর্বরতা চালিয়ে নির্বিচারে হত্যা করে ৬’শ ৯৭ জন নিরাপরাধ মানুষকে।

১৯৭১ সালের সেই নারকীয় রক্তঝরা দিনটি ছিল ১৩ নভেম্বর, ২৩ রমজান, শনিবার।

গ্রামের বেশীর ভাগ মানুষ সেহরি খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ছে, কেউ ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিল। এরই মধ্যে ফজরের নামাজের  আজানের ধ্বনিত হচ্ছে মসজিদগুলোতে। নামাজের প্রস্তুতি নিতে কেউ অজু সেরেও ফেলেছেন। নামাজের জন্য অনেকে মসজিদে যাওয়ার জন্য বাড়ী থেকে পা বেড়িয়েছিলেন। এরই মধ্যে হঠাৎ পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর মর্টার সেল আর বন্দুকের অবিরাম গুলিবর্ষনে প্রকম্পিত হয়ে উঠে হাতিয়ার দাগারকুটি, অনন্তপুর,রামখানা,বাগুয়া,নয়াদাড়া,নীলকন্ঠ ও ফকির মোহাম্মদসহ আশপাশের গ্রামগুলো।সহজ সরল নিরীহ মানুষগুলো কিছু বুঝে উঠার আগেই পুরো হাতিয়া ইউনিয়নে প্রায় দশ ঘণ্টাব্যাপী নজিরবিহীন গণহত্যা, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট চালায় পাকিস্তানী নরপশু ও তাদের এ দেশীয় দোসররা।আগুন ছড়িয়ে পড়েছে প্রতিটি গ্রামে, প্রতিটি বাড়িতে। পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে বাড়িঘর, গরু-ছাগল আর নিরীহ মানুষজন। যারা ঘর ছেড়ে বের হতে পারেনি তারা আগুনে পুড়ে গিয়েছিল, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। আর ঘর ছেড়ে যারা বের হতে পেরেছে, তাঁরা প্রাণ হারিয়েছে পাকিস্তানী হানাদারদের গুলিতে।

আগুনে পুড়ে যায় দাগারকুটিসহ  আশপাশের গ্রামের শতশত ঘর-বাড়ী। মুহুর্তে গ্রামগুলো পরিনত হয় ধ্বংসস্তুপে।

এরকম পরিস্থিতিতে এলাকার নিরীহ মানুষজন জীবন বাঁচানোর জন্য এদিক ওদিক এলোাপাতারী ছোটাছুটি শুরু করে দেয়। পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর ছোড়া বৃষ্টির মতো গুলিবষর্নে মানুষজন জীবন বাঁচাতে পার্শ্ববর্তী ধানক্ষেত, ঝোপ-ঝাড়ে শুয়ে জীবন রক্ষার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করতে থাকে। অনেকে ব্রহ্মপুত্র নদে ঝাঁপ দিয়ে জীবন বাচাঁনোর চেষ্ঠা করে। কিন্তু অসহায় মানুষের আর্তচিৎকারে ভারী হয়ে উঠে এলাকার আকাশ-বাতাস। এসব অসহায় মানুষের জীবন বাচাঁনোর চেষ্টা মুহুর্তেই শেষ হয়ে যায়। পাক হানাদার বাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসর রাজাকারদের সহযোগীতায় আত্মগোপন করা মানুষগুলোকে ধরে নিয়ে এসে দাগারকুঠি গ্রামে সারিবদ্ধ করে নির্দয় ভাবে গুলি করে হত্যা করা হয়।তাদের এ নারকীয় হত্যাযজ্ঞ থেকে সেদিন বৃদ্ধ বনিতা এমনকি মায়ের কোলে ঘুমিয়ে থাকা শিশুটিও রক্ষা পায়নি। সেদিন প্রায় ৪’শত  মা বোন বিধবা হয় কিন্তু আজও তাঁরা শহীদ পরিবারের খেতাম পায়নি।

পরদিন এলাকাবাসী দাগারকুটি গ্রামেই ৬’শ ৯৭ জন নিরীহ গ্রামবাসীর ক্ষত-বিক্ষত দেহ সংগ্রহ করে গণকবর দেয়। স্বাধীনতার ৪৯ বছরেও তাদের মেলেনি রাষ্ট্রীয় কোন স্বীকৃতি, হত্যাকাণ্ডের শিকার পরিবারগুলোও আজও পায়নি স্বজন হাত্যার বিচার।

দাগারকুটি গ্রামটিকে ঘিরে স্মৃতি সৌধ নির্মাণ করে এলাকার মানুষজন প্রতি বছর শহীদদের স্মরণ করে আসছে। কিন্তু করালগ্রাসী ব্রহ্মপুত্র নদ দাগারকুটি গ্রামটিকে বিলীন করে দিয়েছে। বর্তমানে অনন্তপুর বাজারের পশ্চিম দিকে নতুন করে স্মৃতি সৌধ নির্মাণ করে দিবসটি পালন করে আসছেন।

স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাসে জঘন্যতম এ হত্যাকান্ডের ইতিহাস জাতীয় পর্যায়ে তেমন গুরুত্ব না পেলেও উলিপুরের মানুুষের কাছে তা স্মরণীয় হয়ে আছে।

শুক্রবার(১৩ নভেম্বর)  সকালে উপজেলা প্রশাসনের  আয়োজনে হাতিয়া গণহত্যা দিবস পালন ও শহীদের আত্নার মাগফেরাত কামনায় আলোচনাসভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।

আলোচনাসভায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার নূর-এ-জান্নাত রুমি’র  সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, চিলমামারী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শওকত আলী বীরবিক্রম , বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন,  উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বীর  মুক্তিযোদ্ধা গোলাম হোসেন মন্টু, উলিপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মোয়াজ্জেম হোসেন, আহ্বায়ক সম্মলিত মুক্তিযোদ্ধা সংসদ বীর মুক্তিযোদ্ধা এম ডি ফয়জার রহমান,সাবেক কমান্ডার গোলাম মোস্তফা,হাতিয়া ইউপি চেয়ারম্যান এবিএম আবুল হোসেন,শায়খুল ইসলাম নয়া প্রমুখ।
এছাড়াও ওই অনুষ্ঠানে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক সংগঠন,শহীদ পরিবারের সদস্যসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ অংশগ্রহণ করেন।

বক্তারা এই হত্যাকান্ডকে জাতীয় পর্যায়ে স্বীকৃতি প্রদান,নিহত পরিবারদেরকে রাষ্ট্রীয় সম্মান ও পূনর্বাসনের দাবী জানিয়েছেন।




শেয়ার করুন

GloboTroop Icon
পাঠকের মতামত

মেঘনা নিউজ-এ যোগ দিন

Meghna Roktoseba




এক ক্লিকে জেনে নিন বিভাগীয় খবর



© মেঘনা নিউজ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by ShafTech-IT