স্বাশিপ কমিটির সাধারণ সম্পাদকের মন্তব্যকে সাধুবাদ জানিয়ে একাত্বতা প্রকাশ করেছে নওগাঁ জেলা বেসরকারি অনার্স মাস্টার্স শিক্ষক ফোরাম
নিজস্ব প্রতিনিধি সোমবার রাত ০৮:৪৯, ১৫ জুন, ২০২০
আবু ইউসুফ, নওগাঁ প্রতিনিধি: চলতি বাজেটের টাকা দিয়েই বেসরকারি অনার্স মাস্টার্স শিক্ষকদের এমপিওভুক্ত করা সম্ভব বলে মন্তব্য করেছেন স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদ (স্বাশিপ) কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারন সম্পাদক অধ্যক্ষ শাহজাহান আলম সাজু। গত শনিবার এডুকেশন বাংলার রাত দশটার টকশোতে তিনি এমন মন্তব্য করেন।
তার এমন মন্তব্যকে সাধুবাদ জানিয়ে একাত্বতা প্রকাশ করে দ্রুত বেসরকারি অনার্স-মাস্টার্স শিক্ষকদের এমপিওভুক্ত করার দাবী জানিয়েছেন নওগাঁ জেলা বেসরকারি অনার্স-মাস্টার্স শিক্ষক ফোরাম।
জানাযায়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত বেসরকারি কলেজের অনার্স মাস্টার্স স্তরের শিক্ষকেরা দীর্ঘ আটাশ বছর ধরে বেতন বঞ্চিত হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। শুধুমাত্র সরকারি নীতিমালা, জনবল কাঠামোতে অর্ন্তভুক্ত না থাকার কারণে শিক্ষকেরা বছরের পর বছর ধরে বেতন বঞ্চিত হচ্ছেন। এমপিওভুক্তির জন্য শিক্ষকেরা ভিন্ন সময় সংবাদ সম্মেলন, মানববন্ধন, স্মারকলিপি সহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছেন। এর প্রেক্ষিতে শিক্ষকদের জনবল কাঠামোতে অর্ন্তভুক্ত করে এমপিও প্রদানের জন্য ২০১৪ ও ২০১৯ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় হতে দুটি নির্দেশনা শিক্ষা মন্ত্রনালয়ে দেওয়া হয় । শিক্ষা অধিদপ্তরের সাবেক দুজন মহাপরিচালক প্রধানমন্ত্রী দপ্তরের চিঠির সূত্র উল্লেখ করে শিক্ষা মন্ত্রনালয়ে ২০১৫ ও ২০১৭ সালে দুটি সুপারিশ করেন। এছাড়া শিক্ষা মন্ত্রনালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি শিক্ষকদের এমপিও প্রদানের সুপারিশ করেন। কিন্তু শিক্ষা মন্ত্রনালয় এখন পর্যন্ত কোন সুপারিশ আমলে নেয় নি বলে জানাগেছে।
গতবছর শেষের দিকে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জনবল কাঠামো-২০১৮ সংশোধনের জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছিল । নীতিমালা সংশোধন কমিটি বেশ কয়েকটি মিটিং করে নীতিমালার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করে । এর মধ্যে বেসরকারি অনার্স মাস্টার্স শিক্ষকদের বিষয়টিও প্রথম মিটিংয়ে আলোচনা হয় এবং নীতিমালা সংশোধন কমিটির সকল সদস্যের ঐক্যমতে পৌঁছান যে অনার্স মাস্টার্স স্তর নীতিমালাতে অর্ন্তভুক্ত করা হবে। তবে শেষ মিটিংয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি বেসরকারি অনার্স মাস্টার্স শিক্ষকদের নীতিমালাতে অর্ন্তভুক্তের বিষয়টি নিয়ে আপত্তি তুলেছিলেন বলে একাধিক সদস্য নিশ্চিত করেন। এরপর নীতিমালা সংশোধনের সিদ্ধান্ত গুলোর বিষয়ে আর কিছু জানা যায়নি।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত বেসরকারি এমপিওভুক্ত কলেজের নন-এমপিও অর্নাস-মাষ্টার্স কোর্সে নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকেরা দীর্ঘ আটাশ বছর ধরে বেতন বঞ্চনার শিকার হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। শুধু মাত্র জনবল কাঠামোতে অর্ন্তভুক্ত না হওয়ার কারণে শিক্ষকেরা বছরের পর বছর ধরে বঞ্চনার শিকার হচ্ছে। সংশোনাধীন জনবল কাঠামো সংশোধন কমিটির প্রথম মিটিংয়ে সকল সদস্য বেসরকারি অনার্স মাস্টার্স স্তরের শিক্ষকদের অর্ন্তভুক্তির বিষয়ে সর্ব সম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলেও শেষ মিটিংয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধির বিরোধীতার কারণে বিষয়টি উপেক্ষিত হতে যাচ্ছে। করোনার তান্ডবে উচ্চশিক্ষায় নিয়োজিত শিক্ষকগণ জীবন জীবিকার আজ কঠিন সমীকরণে।
নওগাঁ জেলা বেসরকারি অনার্স মাস্টার্স শিক্ষক ফোরামের সভাপতি মেহেদী হাসান ও সাধারন সম্পাদক এহসানুল হক মিঠু বলেন, দীর্ঘ ২৮ বছর জনবল কাঠামো এমপিও নীতিমালার অন্তর্ভুক্ত না থাকার কারনে আমরা সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কোন আর্থিক সুবিধা পাই না। সরকার ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি মোতাবেক শিক্ষক হিসেবে আমাদেরকে নিয়োগ দেয়া হলেও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের বেতন ভাতার দায়িত্ব গ্রহণ করে না। এমতাবস্থায় কলেজ কর্তৃপক্ষ একান্তই মানবিক দিক বিবেচনা করে নাম মাত্র কিছু টাকা সম্মানী হিসেবে দিয়ে থাকে। যা দিয়ে এক সপ্তাহের নূন্যতম বাজার খরচ চলে না। করোনা ভাইরাসের কারনে শিক্ষকদের বর্তমানে অর্ধাহারে অনাহারে দিনাতিপাত করা সহ পরিবারের ভরণপোষনকরা একেবারেই সম্ভব হচ্ছে না। এমতাবস্থায় “জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা-২০১৮” সংশোধন পূর্বক আমাদের ৫০০০ শিক্ষক কর্মচারীর এমপিও ভুক্তির জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মাননীয় অর্থমন্ত্রী এবং মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী মহোদয়কে বিনীত অনুরোধ করছি।
উল্লেখ্য যে, ১৯৯৫, ২০১০ এবং ২০১৮ তে জনবল কাঠামো সংশোধন করা হলেও এসব শিক্ষকের দাবী উপেক্ষা করা হয়েছে। তারপরেও দীর্ঘ আটাশ বৎসর হলো শিক্ষকেরা প্রতিষ্ঠান থেকে নামমাত্র বেতনে কিংবা বেতনহীন অসহায় লক্ষ লক্ষ শিক্ষার্থীকে শিক্ষা সেবা দিয়ে আসছেন।
চলমান করোনা পরিস্থিতিতে উচ্চ শিক্ষাদানে নিয়োজিত এই সকল শিক্ষকের হৃদয়ের বোবা কান্না উপলব্ধি করে তাদের কে দ্রুত জনবল কাঠামোয় অর্ন্তভুক্ত করে এমপিওভূক্তকরণ এবং বিশেষ আর্থিক প্রণোদনার মাধ্যমে সহায়তা করা সময়ের দাবী। বঞ্চিত শিক্ষকগণ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী, শিক্ষা উপমন্ত্রীসহ সরকারের নীতি নির্ধারকগণের দিকে চেয়ে আছেন জনবলে অন্তর্ভুক্ত করে সরকারি এমপিও ঘোষণা এবং এমপিওভুক্ত না হওয়া পর্যন্ত সরকারি ভাবে আর্থিক প্রণোদনা পাবার।