সোনাজলে গণডাকাতিতে আহত ৬;আটক ৫
এস এম সাখাওয়াত জামিল দোলন,চাঁপাইনবাবগঞ্জ মঙ্গলবার রাত ০৯:৫৩, ২৪ আগস্ট, ২০২১
চাঁপাইনবাগঞ্জের ভোলাহাট-শিবগঞ্জ আঞ্চলিক সড়কের সোনাজল নামক স্থানের ফলিমারীর বিল এলাকায় বিভিন্ন যানবাহনে গণ ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। ২৩ আগষ্ট সোমবার রাতে অন্তত আধাঘন্টা ব্যাপি এই ডাকাতির ঘটনা ঘটে বলে ভুক্তভূগীরা জানিয়েছেন। তবে ডাকাতীর ঘটনায় ৬জন আহত হলেও ভোলাহাট থানা পুলিশ ঘটনার পর থেকে মঙ্গলবার বিকাল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৫ জনকে আটক করেছেন।
আহতরা হলেন- ভোলাহাট উপজেলার খালে আলমপুর গ্রামের ঢাকা বাস সাথী এন্টারপ্রাইজের চালক মো. মানোয়ার, যাত্রী রাজিয়া, বীরশ্বরপুর গ্রামের ওবাইদুল, মো. রবিউল ও ট্রাক ড্রাইভার মো. কাঞ্চন।
ডাকাতির বিষয়ে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, প্রতিদিনের মতই সোমবার রাতে জেলার দূর্গম উপজেলা ভোলাহাট থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়া বাসগুলো ভোলাহাট-শিবগঞ্জ সড়ক দিয়ে যাচ্ছিলো। এ সময় রাত পৌনে ৮টার দিকে সড়কের সোনাজলের ফলিমারীর বিল এলাকায় ১৫/১৬ জন মুখোশধারী ডাকাত হাতে হাসুয়া ও লাঠি নিয়ে অতর্কিত হামলা চালায়। ডাকাতেরা হাতে থাকা লাঠি দিয়ে কোচের সামনের অংশ ভাংচুর করে ভিতরে ঢুকে পড়ে। এ সময় তারা যাত্রীদের নানাভাবে পিটিয়ে আহত করে সাথে থাকা নগদ অর্থ ও সোনার গয়না ছিনতাই করে কোন কিছু বুঝে ওঠার আগেই পালিয়ে যায়। এছাড়া একই সময়ে একাধিক ট্রাক, মটরসাইকেল ও পিকআপেও ডাকাতি করে তারা।
এ বিষয়ে ঢাকাগামী বাস জমজম ট্রাভেলসের হেলপার আরিফ হোসেন জানান, ভোলাহাট বাসস্ট্যান্ড থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ঢাকার উদ্দেশ্যে গাড়ীগুলো ছেড়ে আসলে রাত প্রায় ৮টার দিকে সোনাজল এলাকায় ডাকাতরা আমাদের বাসের গতি রোধ করে দরজায় জোড়ে জোড়ে লাথি মারে ও হাতে থাকা অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে গাড়ির দরজা ভেঙ্গে ফেলে। পরে তারা দলবলসহ গাড়ির ভেতর ঢুকে বাসে থাকা যাত্রীদের এলোপাথাড়ি মারধর করে টাকা পয়সা ছিনিয়ে নেয় এবং মহিলা যাত্রীদের কাছে থাকা গয়না কেড়ে নেয়। এ সময় তারা মহিলা যাত্রীদের শ্লীলতাহানির চেষ্টাও করে।
তবে গাড়ীর সুপার ভাইজার আলমগীর হোসেন বলেন, আমরা যখন গাড়ী নিয়ে এই পথ দিয়ে আসি তার আগে থেকেই এই পথে ডাকাতেরা অন্য কিছু ট্রাক-পিকাপ ও মটরসাইকেলে ডাকাতি চালাচ্ছিল। কিন্তু রাস্তাটি সরু হবার কারণে গাড়ি ঘুরিয়ে অন্য পথ দিয়ে পালিয়ে যাবার কোন সুযোগ ছিল না। গাড়ি দেখে ডাকাত দল দ্রুত জোড়ে জোড়ে চিৎকার করতে করতে দৌড়িয়ে এসে হেল্পারকে পিটিয়ে ও দরজা ভেঙ্গে ভিতর ঢুকে যাত্রীদের পিটিয়ে জখম করে ডাকাতি করে পালিয়ে যায়। ঘটনাস্থলে সাথী এন্টারপ্রাইজ, জমজম ট্রাভেলস ও চাঁপাই ট্রাভেলসে ডাকাতি ছাড়াও এই উপজেলা থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়া আম বোঝাই ট্রাকেও ডাকাতি করা হয় বলে জানান সুপার ভাইজার।
এ বিষয়ে ঢাকা কোচের টিকিট মাষ্টার নওশাদ বলেন, জানামতে ৩টি ঢাকা কোচে প্রায় ৬০/৭০জন যাত্রী ছিলেন। তাদের প্রত্যেককে মেরে সকলের কাছ থেকেই তাদের অর্থ, স্বর্ণালংকার ও মোবাইল ফোন ছিনতাই করে বলে যাত্রীসহ চালক ও বাসের স্টাফরা আমাদের অভিযোগ করেছেন।
এদিকে ঢাকাগামী জমজম বাসের যাত্রী ভোলাহাট উপজেলার বীরশ্বরপুর গ্রামের গণি বিশ্বাস ও ইমামনগর গ্রামের নারী গার্মেন্টস শ্রমিক আশা অভিযোগ করে বলেন, এতদিন কেবল শুনেছি যে এই পথে ডাকাতি হয়। আজ স্বচক্ষে দেখলাম ও এর শিকার হলাম। ডাকাতেরা আমাদেরকে মেরেপিটে ও মহিলাদের সাথে অত্যন্ত খারাপ ব্যবহার করে ১৭ হাজার টাকা, ১ ভরি স্বর্ণের চেন, কানের দুল ও মোবাইল ফোন নিয়ে গেছে।
এদিকে ডাকাতের পিটুনিতে আহত আম বহনকারী ট্রাক চালক কাঞ্চন জানান, আম নিয়ে ঢাকা যাচ্ছিলাম। রাস্তায় ডাকাতেরা আমার মাথায়-হাতে-পিঠে বেধড়ক পিটিয়ে নগদ ১০ হাজার টাকা এবং আমার ও হেলপারেরসহ মোট ৩ টি মোবাইল ফোন ছিনতাই করে নিয়ে গেছে।
তবে ভোলাহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান, সড়কে ডাকাতির ঘটনায় ৫জন প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। এছাড়াও আরো অনেকে বাড়ীতে গিয়ে চিকিৎসা নেয়ার খবর শুনেছি।
তবে এ বিষয়ে ভোলাহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাহবুবুর রহমান জানান, ভোলাহাটের ফলিমারির বিলে ডাকাতির ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৫ জনকে আটক করেছে পুলিশ। তাছাড়া ঘটনাস্থল জেলা সিআইডির একটি টিম পরিদর্শন করেছেন। ওই সময় ডাকাতির কারণে সড়কের দুই দিকে ৩০-৪০টি ছোট বড় যানবাহন আটকে ছিল বিধায় কিছু হেলপার না বুঝেই সব যানবাহনেই ডাকাতি হয়েছে বলে গণমাধ্যমকে জানায়। আর তাই ঘটনাস্থল থেকে দেয়া ৩৩টি বাসে ডাকাতির তথ্যটি ছিলো মিথ্যা ও বানোয়াট। বাস ডাকাতির খবর পাবার পরপরই ভোলাহাট থানা পুলিশের একটি টিম দ্রুত ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। অল্প সময়ের মধ্যে ডাকাতরা যাত্রীদের সর্বোস্ব লুট করে সটকে পড়ে। ফলে ওই সময় তাদের কাওকে আটক করতে না পারলেও জেলা পুলিশ সুপার মো. আবদুর রকিব স্যারের নির্দেশে গতকাল রাত থেকে আজ মঙ্গলবার বিকাল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ৫জনকে আটক করেছি জিজ্ঞাসাবাদের জন্য।