সাঘাটায় বন্যা ও কাটাখালী নদীর ভাঙনের শিকার পরিবারগুলোর খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবনযাপন
আসাদ খন্দকার,সাঘাটা,গাইবান্ধা শনিবার বিকেল ০৪:৫৭, ১০ অক্টোবর, ২০২০
পঞ্চম দফা বন্যার পানি কমার সঙ্গে দেখা দিয়েছে তীব্র নদীভাঙন। এ বছর পর পর ৫ বারের বন্যায় গোবিন্দগঞ্জ-সাঘাটা উপজেলার সীমানা এলাকার কাটাখালী নদী বেষ্টিত রামনগর গ্রামের প্রায় দেড়শ’ বাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। গত ৭ দিনে কমপক্ষে ২০টি বাড়ি নদীগর্ভে গেলেও নেই সরকারি কোনো উদ্যোগ। বন্যা আর ভাঙনে দিশেহারা পরিবারগুলো অনাহারে খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবন যাপন করছে।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, কাটাখালী নদীর ভাঙনে গত রাতেই নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে সাঘাটা উপজেলার কচুয়া ইউনিয়নের রামনগর গ্রামের মেনেকা বেগমের বসতবাড়ি। কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই তার রান্নাঘর নদীতে বিলীন হয়। পরে তার কান্নার শব্দে এলাকার লোকজন এসে শোয়ার ঘরটি উদ্ধার করে রাস্তার উপর রাখে। তার মতো আরও প্রায় ২০ জনের বসতভিটা, বৈদুতিক খুঁটি, আম, কাঁঠালের গাছসহ স্থাপনা গত দু’দিনে বাঙ্গালী নদীর গর্ভে বিলীন হয়েছে।
মেনেকা বেগম জানান, নদীর তীব্র স্রোতে বসতবাড়ি বিলীন হয়েছে। ছেলে-মেয়ে নিয়ে কোথায় যাব, কী খাব কিছুই জানি না। এখন খোলা আকাশের নিচে আছি। কেউ আসেনি সাহায্য করতে।
একই গ্রামের সুফিয়া বেগম জানান, বন্যা আর ভাঙনে জীবন-সংসার শেষ। বরগা নিয়ে কয়েক বিঘা জমিতে আমন ধানের চাষ করা হয়েছে সেই ধানও পানির নিচে। এরইমধ্যে গতরাতে নদীগর্ভে গেছে বসত ভিটা। এখন কী করব? কোথায় যাব কিছুই জানি না।
ওই গ্রামের বাসিন্দা মজিবর রহমান জানান, নদীভাঙনে গত কয়েক বছরে একটি গ্রামের চার ভাগের ৩ ভাগ বিলীন হয়েছে। সরকারিভাবেও ভাঙন প্রতিরোধে কোনো পদক্ষেপ নেই। আমাদের ভিটেমাটি নদীতে বিলীন হলে আমরা কোথায় গিয়ে ঠাঁই নিব?
লিলি বেগম জানান, দু’দিন থেকে কিছু খাইনি। অন্ন কী জিনিস পেটে গেল না। কেউ আসেও না খোঁজ নিতে। সবাই আসে ছবি তুলতে। একটু চিড়া-মুড়ি দিলেও তো আমরা দু’চারদিন খেয়ে বাঁচতে পারতাম।
কচুয়া ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য হাবিবুর রহমান জানান, কাটাখালী, বাঙ্গালী ও আলাই নদীর ভাঙন প্রতিরোধে অনেকবার প্রশাসনের কাছে ধর্ণা দিয়েছি, কোনো কাজ হয়নি। এখন আমাদের মরণ ছাড়া গতি নেই।
কচুয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মাহাবুবর রহমান জানান, বন্যার পানি বৃদ্ধির ফলে রামনগর গ্রামে ভাঙ্গন ভয়াবহ আকার ধারণ করায় প্রশাসনের নিকট অবহিত করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত কোন ব্যবস্থা নেয় নি।